ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতা দিবস প্রীতি ফুটবল ম্যাচ

সাবেক ফুটবলারদের মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৭ মার্চ ২০১৫

সাবেক ফুটবলারদের মিলনমেলা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সাবেক জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়ে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে। বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশ নেয় বাফুফে লাল দল এবং বাফুফে সবুজ দল। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি ৪-৪ গোলে ড্র হয়। লাল দলের পক্ষে গোল করেন সম্রাট (৯ মিনিটে), ছোট মুন্না (২৯ মিনিটে), মিলন (৩৬ মিনিটে) ও জালাল (৫২ মিনিটে)। পক্ষান্তরে সবুজ দলের পক্ষে গোল করেন নুরুল হক মানিক (১৪ ও ৪২ মিনিটে), আব্দুস সালাম মুর্শেদী (১৮ মিনিটে) এবং হিরু। একেকজনের বয়স কমপক্ষে পঞ্চাশ। আগের মতো দম নেই। নেই সেভাবে দৌড়ে খেলার শক্তি। তারপরও তারা যেভাবে নিখুঁত পাসিং, শূটিং, ড্রিবলিং, কর্নার, গোলকিপিং করেছেনÑ তা দেখে বিস্ময় জাগতে বাধ্য। এ বয়সেও দুর্দান্ত খেলে তারা প্রমাণ করেছেন, এখনও তারা ক্লাস প্লেয়ার। পায়ের কারু কাজ আছে। আছে ফুটবলের প্রতি নিখাদ ভালবাসা। আর এ জন্যই তারা যেভাবে সিরিয়াস হয়ে খেললেন, তাতে তারা ম্যাচটাকে ‘প্রীতি’ ম্যাচ হিসেবে নেননি। এমনভাবে খেলেছেন, যেন এটা একটা ‘ফাইনাল ম্যাচ’! দর্শকরা দেখেছেন, কিভাবে তারা বলপ্রয়োগ করে খেলেছেন, গোল মিস করে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, রেফারির সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে তাকে ‘হাল্কা’ গালিও দিয়েছেন! রেফারিও কম যাননি, ফাউল করে খেলার জন্য দুজনকে তো হলুদ কার্ডই দেখিয়ে দেন! তালিকার বাইরে এ ম্যাচে একজনকে খেলতে গেছে। তিনি ২০০৩ সালে সাফ গেমসের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ জাতীয় দলের তৎকালীন অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটান! ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘এমন দিনে এ রকম ম্যাচ খেলতে পেরে আমি অসম্ভব খুশি। বাংলাদেশ আমার হৃদয়ে সবসময়ই ছিল, আছে এবং থাকবে।’ ম্যাচ শেষে দু’দলকেই ট্রফি ভাগাভাগি করতে হয়। ট্রফি শেয়ার করেন লাল দলের অধিনায়ক আশরাফ উদ্দিন চুন্নু এবং সবুজ দলের অধিনায়ক আব্দুস সালাম মুর্শেদী। সাবেক ফুটবলারদের মিলন মেলা বসেছিল বৃহস্পতিবার বাফুফে আর্টিফিসিয়ালি টার্ফে। অনেকদিন পর চেনামুখ দেখে ফুটবলাররা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই সোনালী অতীতে, আক্রান্ত হয়েছিলেন নষ্টালজিয়ায়। ম্যাচের ফল যাই হোক, এই দিনটি নিঃসন্দেহে সবার স্মৃতিতে চির জাগরুক হয়ে থাকবে। ম্যাচে খেলেননি বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। এ জন্য দর্শকরা আক্ষেপ পোড়েন। স্বাধীন বাংলাদেশ ফুটবলের সেরা এই ফুটবলারের খেলা দেখার জন্যই দর্শকদের আগ্রহ ছিল বেশি। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে সালাউদ্দিন মাঠেই হাজির হননি। খেলা শুরুর কিছুক্ষণ আগে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে বাফুফে ভবন ছেড়ে চলে যান। বাফুফের বয়সভিত্তিক কোচ আব্দুর রাজ্জাক ম্যাচের ধারাভাষ্য দেন। নতুন প্রজন্মের ফুটবল দর্শকদের কাছে চেষ্টা করেন সাবেক ফুটবলারদের পরিচয় করিয়ে দিতে। মাঝে মাঝে একেকজনের নামের শেষে মজার সব বিশেষণ যোগ করেন, যা বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করে। যেমন ‘মামা কোটান’, ‘মোটু চুন্নু’, ‘টুপি মানিক’, ‘৬০ বছরের বাবলু’, ‘গোল খেয়ে লাল দল নেতিয়ে গেছে!’ ... ইত্যাদি। ‘এ রকম ম্যাচ আয়োজন খুবই জরুরী। নতুন প্রজন্ম এমন ম্যাচ দেখে অতীতের ফুটবলারদের চিনতে পারবে, এ খেলাটির প্রতি আকর্ষণী অনুভব করবে। এমন ম্যাচ দেশের ফুটবল উন্নয়নের জন্য কিছুটা হলেও অবদান রাখবে। আমাদের সময় ব্যক্তিগত মুন্সিয়ানার ফুটবলার ছিল বেশি। এখন সেটা নেই। এখন আছে টিমওয়ার্ক ফুটবল। সেটা আমাদের চেয়েও ভাল। তবে এখন অভাব মানসম্পন্ন ফুটবলার। বাফুফের উচিত মানসম্পন্ন ফুটবলার বেশি করে তৈরি করা।’ ম্যাচ শেষে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাতীয় দলের এক সময়ের খ্যাতমান ফরোয়ার্ড শেখ মোঃ আসলাম।
×