ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতকে বিদায় করে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৭ মার্চ ২০১৫

ভারতকে বিদায় করে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

মিথুন আশরাফ ॥ যেই ৯৫ রানে জিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া, অসি ক্রিকেট ভক্তরা যত না খুশি হলো, যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তরা তার চেয়ে অনেক আনন্দ পেল। ভারত যে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয়ে গেল। এই ভারতই তো কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশে বিপক্ষে আম্পায়ারের সুবিধা নিয়ে জিতেছিল। তাদের বিদায়ে সুখ, শান্তি কী আর না মিলে! সেই সুখ মিললও। তাই বলে ভারত পাত্তাই পাবে না, সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পন করবে! তা কেউই ভাবেনি। অস্ট্রেলিয়া-ভারত সেমিফাইনালের আগে ম্যাচটি নিয়ে যে সবকিছুতেই উত্তাপ, উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কিন্তু যেই মাঠের লড়াই শুরু হলো, দেখা গেল সব উধাও! শুধু অস্ট্রেলিয়ার দাপটই চোখে পড়ল। শেষপর্যন্ত সেই দাপটে ভারতকে দুমড়ে মুছড়ে দিয়ে নিজ দেশে হওয়া বিশ্বকাপের ফাইনালেই শুধু উঠল না, সপ্তমবারের মতো শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার বিরল অর্জনও নিজেদের ইতিহাসে যুক্ত করে নিল। এমন জয় মিলল, সেটি রেকর্ড গড়েই আদায় করে নিল অস্ট্রেলিয়া। স্টিভেন স্মিথ শতক করলেন। ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক তুলে নিলেন। তার ৯৩ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় করা ১০৫ রানে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩২৮ রান করল অস্ট্রেলিয়া। এ্যারন ফিঞ্চের ব্যাট থেকে এলো ৮১ রান। পেসার উমেশ যাদব একাই নিলেন ৪ উইকেট। অস্ট্রেলিয়া এত বেশি রান করল, যা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড হলো। তাও আবার প্রথম কোন দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ৩০০ রান করল অস্ট্রেলিয়া। এ রান অতিক্রম করতে গিয়ে ৪৬.৫ ওভারে ২৩৩ রান করতেই গুটিয়ে গেল ভারতের ইনিংস। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি অনেক চেষ্টা করে ৬৫ রান করতে পারলেন। যা ভারতের ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোর। যাদের নিয়ে এত আশা ছিল, যত রানই স্কোরবোর্ডে জমা হোক, লড়াই করার প্রত্যাশা ছিল; সেই রোহিত শর্মা (৩৪), শিখর ধাওয়ান (৪৫), বিরাট কোহলি (১), অজিঙ্কে রাহানে (৪৪), সুরেশ রায়না (৭) এমন ব্যর্থ হলেন, দলেরও ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ধূলিসাত হয়ে গেল। অথচ অস্ট্রেলিয়া ঠিকই সফল হলো। মিচেল স্টার্ক (২/২৮), মিচেল জনসন (২/৫০), জেমস ফকনাররা (৩/৫৯) কিছু একটা করে দেখাবেন এমন আশার প্রতিদানও দিলেন এ পেসাররা। তাতে ভারতকে হারিয়েই দিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের আগে প্রতিদিন পিচ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। স্পিন না গতির পিচ হবে। ভারত চাইছিল স্পিন পিচ। অস্ট্রেলিয়া চাইছিল গতির পিচ হোক। সঙ্গে ব্যাটিংটা তো থাকবেই। দেখা গেল, পিচে হালকা ঘাস আছে। ব্যাটিংটা ঠিক করা গেলেও পেসাররাই এতে সুবিধা পাবে। ম্যাচের আগে ভারতের পক্ষেই যাবে পিচ, এমন ধারণা উড়ে গেল। শুরুতেই তো ‘পিচ কা-ে’ জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) খেলা। অথচ মনে করা হয়েছিল, স্টেডিয়ামে ভারতের দর্শকদেরই আধিপত্য থাকবে। তা থাকলও। মনে হলো সিডনিতে নয়, যেন ভারতের মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে খেলা হলো। যেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকল, অসি দর্শকদের চিৎকারই শুধু শোনা গেল। এখানেও ‘দর্শক প্রাধান্যে’ জয় হলো অস্ট্রেলিয়ারই। আরেকটি বিষয় নিয়ে তো এত বেশি উত্তেজনা ছড়িয়েছে, যেন মাঠে নামার আগে ভারত ধরেই নিয়েছিল সেøজিং হবেই হবে। তা নিয়ে এত কথা হয়েছে, ভারত বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েই যেন এগিয়েছে। কিন্তু রোহিত-স্মিথের মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটি ছাড়া তার ছিটেফোটাও মিলল না। যেই জনসন-কোহলি সেøজিংয়ে মাতবে এসসিজি মনে করা হলো; তা হওয়ার সুযোগই মিলল না। কোহলি যে ১ রানেই আউট হয়ে গেলেন। দলের ৭৬ রানে ধাওয়ান আউটের পর ২ রান যোগ হলো, সঙ্গে সঙ্গে কোহলিও সাজঘরে ফিরলেন। ভারত যেন তখনই ম্যাচ থেকেও ছিটকে পড়ল। কোহলিকে আউট করেছেন কে জানেন? জনসনই। এখানেও যেন অস্ট্রেলিয়া জিতেই গেল। জনসন-কোহলি সেøজিং হয়ে এসসিজি গরম হওয়ার আগেই সব ঠা-া হয়ে গেল। এরপর ৯১ রানে রোহিত ও ১০৮ রানে রায়না সাজঘরে ফিরলেন, দলের সব স্বপ্নের কবরও যেন হয়ে গেল। বাকি সময়টা শুধু বড় হারের ব্যবধান কমানোর ছিল। কিন্তু তাও কী পারা গেল। একপেশে ম্যাচই তো হয়ে রইল। আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত অস্ট্রেলিয়া, যদি শুরুতেই রোহিত ও ধাওয়ানের ক্যাচগুলো ধরতে পারত। এই যে একপেশে ম্যাচ হলো, তা স্মিথ ও ফিঞ্চের জন্যই হলো। ১৫ রানেই ওয়ার্নারের (১২) আউটের পর স্মিথ-ফিঞ্চ মিলে এমন জুটিই গড়লেন, যে জুটি গিয়ে থামল ১৯৭ রানে। স্মিথের আউটের মধ্য দিয়েই জুটির অবসান ঘটল। তবে দুইজন মিলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দ্বিতীয় উইকেটে রেকর্ড ১৮২ রানের জুটিই গড়ে ফেললেন। এরপর তো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। তারপরও ম্যাক্সওয়েল (২৩), ওয়াটসন (২৮), ক্লার্ক (১০), ফকনাররা (২১) বিশেষ কোন নৈপুণ্য উপহার দিতে পারেননি। শেষে গিয়ে জনসন যে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে ৯ বলে অপরাজিত ২৭ রান করলেন, সেটিই টনিক হিসেবে কাজ করল। জনসনের এ ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে দলের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্কোরও এত বেড়ে গেল, তা অতিক্রম করতে হলে রেকর্ড গড়েই জিততে হতো ভারতকে। সে জন্য অবশ্যই কোহলির মতো ব্যাটসম্যানকে উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। সেই কাজ করতে পারলেন না কোহলি। ভারতও ম্যাচ জিততে পারল না। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো। অস্ট্রেলিয়া শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করে নিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা যেখানে তিনবার করে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার দাপট ঈর্ষণীয়ই। এর আগে ১৯৭৫ (রানার্সআপ), ১৯৮৭ (চ্যাম্পিয়ন), ১৯৯৬ (রানার্সআপ), ১৯৯৯ (চ্যাম্পিয়ন), ২০০৩ (চ্যাম্পিয়ন) ও ২০০৭ সালে (চ্যাম্পিয়ন) ফাইনালে খেলে অস্ট্রেলিয়া। এবার সপ্তমবারের মতো যখন ফাইনালে খেলবে অস্ট্রেলিয়া, রবিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তখন অসিদের প্রতিপক্ষ থাকছে প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ড। যারা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে। এর আগে যখন প্রথমবারের মতো ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ হয়েছিল, মেলবোর্নেই ফাইনাল খেলা হয়েছিল। কিন্তু সেবার না অস্ট্রেলিয়া, না নিউজিল্যান্ড; কোন দলই ফাইনালে খেলতে পারেনি। এবার দুই স্বাগতিক দেশই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে। আর এতে করে নিশ্চিতও হয়ে গেল বিশ্বকাপের ১১তম আসরের শিরোপাটি স্বাগতিকদের দখলেই থাকছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা কী এখন এতসব নিয়ে ভাবছে নাকি। যখন খেলা চলছিল, তখন এসসিজিতে নিজ দেশের দর্শকদের সমর্থন পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেই দর্শকদের মাঝে বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের সমর্থনও তো ছিল। আর ম্যাচ শেষ হতেই কোন কোন দল ফাইনালে খেলবে, কে গেল ফাইনালে; এত কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আছে না কি। সবাই তো এখন ভারতের বিদায়ে মহাআনন্দ করতে ব্যস্ত।
×