ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসন্ন

লি কুয়ানের পর কোন্ দিকে যাবে সিঙ্গাপুর

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৬ মার্চ ২০১৫

লি কুয়ানের পর কোন্ দিকে যাবে সিঙ্গাপুর

পাঁচ দশকজুড়ে সিঙ্গাপুরের নেতা হিসেবে লি কুয়ান ইউ অনেক আদেশ জারি করেছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল তার বাড়ি ভেঙ্গে ফেলার। কয়েক বছর আগে তিনি এক সাক্ষাতকার গ্রহীতাকে বলেছিলেন : ‘আমি মন্ত্রিসভাকে বলেছি, আমি যখন মারা যাব, তখন ওটা (বাড়ি) ভেঙ্গে দিতে।’ এমনকি নিজের মৃত্যুর ব্যাপারেও বাস্তববাদী ও ব্যক্তি পূজার বিরোধী লি, যিনি সোমবার ৯১ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন- বলেছিলেন, বাড়িটা রক্ষণাবেক্ষণ করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে এবং ‘বাড়ির মধ্য দিয়ে লোকজনের চলাফেরায় এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’ মঙ্গলবার লির শান্ত রাস্তায় বাড়ি ভাঙ্গার কোন উৎসব হয়নি এবং বুধবার জনসাধারণের পার্লামেন্টে লি’র শবাধার দর্শন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারী স্মরণোৎসবও শুরু করা যায়নি। তবে সিঙ্গাপুরবাসী এখন লি কুয়ান ইউ’র গড়ে তোলা বিশাল ভবন-আধুনিক সিঙ্গাপুর ও গর্বোজ্জ্বল সিঙ্গাপুর মডেলকে নিয়ে অনুরূপ প্রশ্ন করছে : এটা কি লি’র পরও টিকে থাকবে কিংবা এই ঝকঝকে এশীয় অর্থনৈতিক কেন্দ্রটা কী তার জনকের পছন্দসই ধরনের সরকার পদ্ধতিকে ছাড়িয়ে যাবে? নগর রাষ্ট্রটির ক্রয়বর্ধমানভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ী ও দাবি আদায়ে ব্যাকুল নির্বাচকম-লীর মধ্যে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি একটি অধিক পরামর্শমূলক সরকার ও অংশগ্রহণমূলক শাসন পদ্ধতির দাবি উঠেছে। জাতিসংঘে দেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত কিশোর মাহবুবানি বলেন, সিঙ্গাপুর এখন সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। ‘আমি মনে করি সিঙ্গাপুরের তরুণ জনগোষ্ঠী সিঙ্গাপুরের শক্তির সমাদর করে, সিঙ্গাপুর সরকারের আনা স্থিতিশীলতার সমাদর করে তবে তারা আরও মত প্রকাশের স্বাধীনতা চায়। তাই আপনাকে তাদের কথা বলতে দেয়ার সামাজিক প্রশ্নে, রাজনৈতিক প্রশ্নে ও অর্থনৈতিক প্রশ্নে, সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এটা আসন্ন পরিবর্তন আসছে।’ শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির বিনিময়ে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব ও সরকারী অনাহুত প্রবেশ যেমন রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশের কণ্ঠরোধ এবং পাবলিক টয়লেট ফ্লাশ না করলে জরিমানার বিধান ইত্যাদিকে সিঙ্গাপুরের একটি প্রজন্ম ব্যাপকভাবে মেনে নিয়েছে। তারা প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে জীবনযাত্রার মান প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই লি’র শাসক দলের অনুগত সমর্থকে পরিণত হয়েছেনÑ যে দল পাঁচ দশক আগে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে নির্বিঘেœ ক্ষমতাসীন আছে। তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে যাদের কাছে স্থিতিশীলতা এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের অন্যতম দেশ হওয়া, বাঁধানো ফুটপাথ, ট্যাপের পরিষ্কার পানি ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার এসব আর যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ইউজিন তান বলেন, ‘এক প্রজন্মে তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বে উঠে যাওয়া আর তরুণ সিঙ্গাপুরবাসীদের তেমন টানছে না। ক্ষমতাসীন দলের একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগের অবসান হয়ত তাড়াতাড়ি হবে না, তবে প্রত্যাশার পরিবর্তন হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা হবে কি না সে প্রশ্ন নয় বরং প্রশ্ন হলো কখন সিঙ্গাপুর দ্বিগুণ অথবা বহুদলীয় গণতন্ত্র গ্রহণ করবে।’ এখন সরকারের কাছে কোন লি নেই, যিনি একে রক্ষা করতে পারেন। লি কুয়ান ইউকে দেখা হতো এক ধরনের কঠোর জাতীয় পিতামহ হিসেবে- যাকে যেমন মানুষ ভালবাসা দিয়েছে তেমনি ভয়ও পেয়েছে। লি’র জীবিত থাকা অবস্থায় যেসব বিষয় চিন্তা করাও যেত না সেসব প্রশ্ন এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এবং সহজে সেগুলোকে বাদ দেয়া যাবে না। এসবের মধ্যে আছে তার পিপলস এ্যাকশন পার্টির বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে যাওয়া। অনেকের মতে, সে সম্ভাবনা ইতোমধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×