ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হতাশ ডি ভিলিয়ার্স, উচ্ছ্বসিত ম্যাককুলাম

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৫ মার্চ ২০১৫

হতাশ ডি ভিলিয়ার্স, উচ্ছ্বসিত ম্যাককুলাম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রিকেট মাঠে খেলোয়াড়দের এমন কান্নার দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না। কাল প্রথম সেমিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪ উইকেটে হারের পর প্রকাশ্যে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটাররা। ফেবারিট হয়েও শিরোপার দুই কদম দূর থেকে বিদায় নেয়ার যন্ত্রণায় কাতর প্রোটিয়া অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকেট পেয়ে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত কিউই সেনাপতি ব্রেন্ডন ম্যাকুকলাম। উচ্ছ্বাস ঝড়েছে ৮৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলে নায়ক বনে যাওয়া গ্রান্ট ইলিয়টের কণ্ঠেও। ইলিয়ট ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিতের সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে অকল্যান্ডের গ্যালারি। মাঠে ম্যাককুলাম-কোরি এ্যান্ডারসনদের উল্লাস। বিপরীতে মাঠে ছত্রভঙ্গ হয়ে বিমর্ষ অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদছেন। কেউ নিজেকে সংবরণ করার বৃথা চেষ্টা করছেন। কেউ আবার নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ম্যাচ শেষে উপস্থাপকের সামনে আসেন বিধ্বস্ত দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। তখনও তার চোখে মুখে কান্নার স্পষ্ট ছাপ। ‘ক্রিকেট খুবই বিস্ময়কর একটি খেলা। আমি মনে করি, সেরা দলটিই ফাইনালে উঠেছে। আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। কোন অনুশোচনা নেই। আমরা মাঠে সবকিছু ঢেলে দিয়ে খেলেছি। অবশ্য হারের কারণে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কষ্ট পাচ্ছি। এ অবস্থা থেকে সেরে উঠতে কিছু সময় লাগবে। তবে সবচেয়ে খারাপ বিষয়টি হলো আমরা আমাদের জন্য খেলিনি। আমরা আমাদের দেশের মানুষের জন্য খেলেছিলাম। আশা করছি, তারা এখনও আমাদের নিয়ে গর্ব করতে পারবে। কারণ, পুরো বিশ্বকাপেই আমরা দারুণ পারফর্মেন্স করেছি। যে দলটি ফাইনালে উঠেছে, তাদের জন্য শুভকামনা থাকল।’ বলেন ডি ভিলিয়ার্স। অন্যদিকে আনন্দে উদ্বেলিত কিউই সেনাপতি ম্যাককুলাম বলেন, ‘গ্যালারিতে দর্শকদের সমর্থন। উল্লাস ধ্বনি। মাঠে সতীর্থদের নজর কাড়া নৈপুণ্য। সব মিলিয়ে দিনটি আসলেই স্মরণীয়। ছেলেরা দুরন্ত ক্রিকেট খেলেছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাও ভাল খেলেছে। তাদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে। আমরা এখন ফাইনালের অপেক্ষায়।’ অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলকে এনে দেয়া জয়টিকে এক কথায় দারুণ বলে উল্লেখ করেছেন ম্যাচের নায়ক গ্রান্ট ইলিয়ট। তবে কিউই এই ব্যাটসম্যান মনে করেন, জয় শুধু তার বা দলের নয়, মাঠে দলকে যারা সমর্থন করেছে তাদের সবার। মঙ্গলবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্ক স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৪ উইকেটে হারায় বিশ্বকাপের সহআয়োজক নিউজিল্যান্ড। এই জয়ে এ পর্যন্ত সাত সেমিফাইনাল খেলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল তার। নাটকীয় ম্যাচটিতে শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। শেষ ২ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ রান। পঞ্চম বলে ডেল স্টেইনকে অসাধারণ এক ছক্কায় মাঠের বাইরে ফেলে জয় তুলে নেন ইলিয়ট। ম্যাচ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ম্যাচ জেতানো এই ছক্কা নিয়ে কথা বলেন ৭৩ বলে ৮৪ রান করে অপরাজিত থাকা ইলিয়টও। ‘ছক্কাটি মারার সময় আমার মনে কোন কিছুই খেলা করছিল না। এমনকি আমি জানিও না বলটি কোথায় গেছে!’ শুধু এই ছক্কাই নয়, ইলিয়টের পুরো ইনিংসটাই ছিল অসাধারণ। নিউজিল্যান্ডকে ভাল শুরু এনে দিয়ে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম আউট হয়ে যান। এরপর কেন উইলিয়ামসন আর মার্টিন গাপটিলও চলে যান। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন তিনি। রস টেইলরের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। টেইলর, কোরি এ্যান্ডারসন আর লুক রনকি চলে গেলে ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সঙ্গে জুটি বাঁধেন। অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে অবশেষে ফেরেন অপরাজিত থেকে। এমন দুর্দান্ত ইনিংসের জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ম্যাচ শেষে এই জয়ে সমর্থকদেরও অবদান থাকার কথা বলেন ম্যাচের নায়ক। ‘এই জয় আমার বা দলের বলে মনে করি না, এই জয় এখানে আসা সবার। সমর্থকরা অসাধারণ ছিল। তাদের চাওয়া পূরণে এলিয়ট যখন এই কথা বলছিলেন, গ্যালারির জয়োল্লাস তখন তুঙ্গে। এলিয়টের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের কথা শুনে আনন্দে ফেটে পড়ে তারা। বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যেই এলিয়ট বাকি কথাটুকু শেষ করেন। ওই মুহূর্ত স্মরণ কর তিনির আরও যোগ করেন, ‘প্রত্যেক বলে আপনাকে যখন ৪৫ হাজার সমর্থক চিৎকার করে সমর্থন জানাবে এই সমর্থকদের সামনে খেলা আসলে অসাধারণ এক আনন্দ।’ মজার বিষয় ইলিয়টের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রন্সভালে। এক দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কিউই উইলোবাজের হাতেই স্বপ্নের মৃত্যু হলো দক্ষিণ আফ্রিকার!
×