মানবিক হৃদয়ের নানা টানাপড়েন, স্বার্থান্ধ মানুষের বিবেক বর্জিত স্বার্থপরতা, অর্থলোলুপতার নির্লজ্জ বাতাবরণে মানুষের বিবেক, ভালবাসা, হৃদয় সবকিছু বিক্রি করে দেয়ার উদগ্র কামনা কিভাবে সমাজকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তারই সহজ চিত্র নাটক ‘চাই হৃদয় চাই’। অনন্য থিয়েটার প্রযোজিত সত্যেন মিত্র রচিত ও সুশোভন চৌধুরী নির্দেশিত ‘চাই হৃদয় চাই’ নাটকটি সম্প্রতি থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়। নাটকের গল্পে দেখা যায়, ডাঃ সুচরিত সান্যাল একজন বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ যিনি সফলতার সঙ্গে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যানটেশন করেছেন। এই কাজে তাঁর অন্যতম সহযোগী ডাঃ সমীরণ রায়। এই সফলতার আনন্দ যখন তাঁরা উপভোগ করছিলেন ঠিক সে সময় তাঁদের হাসপাতালে উপস্থিত হয় কয়েকজন রোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজন। তাদের একজন চতুর মদ ব্যবসায়ী নিবারণ সাহা, যিনি সবকিছুতেই ব্যবসা খোঁজেন। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত বিখ্যাত আয়রন এ্যান্ড স্টিল কিং শৈলেশ বানার্জী এবং তার অতি আধুনিকা স্ত্রী রমাগুপ্ত এবং ভূমিদস্যুদের আক্রমণে মুমূর্ষু ছেলেকে নিয়ে এক রিফিউজি বৃদ্ধ। মোটর দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত শৈলেশ বানার্জীকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন হার্ট ট্রান্সপ্ল্যানটেশন, অন্যদিকে বৃদ্ধের একমাত্র ছেলে নিহত। ডাঃ সান্যাল তখন রমাগুপ্তকে এক লাখ টাকার বিনিময়ে ওই ছেলেটির হার্ট কিনে নেয়ার প্রস্তাব দেন। আর এ নিয়ে শুরু হয় নানা টানাপড়েন। রমাগুপ্তের কাছে প্রশ্ন দাঁড়ায় স্বামীর জীবন বড় নাকি স্বামীর সম্পত্তি। অন্যদিকে ধূর্ত ব্যবসায়ী নিবারণ সাহা চায় ফাঁকতালে ব্যবসা করতে অথচ সর্বহারা বৃদ্ধ দান করতে চায় তার ছেলের হৃৎপি-।
অভিনেতা সুশোভন চৌধুরীর অভিনয় ছিল নাটকের প্রাণ। ঝানু ব্যবসায়ী নিবারণ সাহা চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের বিমোহিত করে রাখে। চট্টগ্রামের গ্রুপ থিয়েটারভিত্তিক নাট্যচর্চায় যেসব নারী অভিনেত্রী দীর্ঘ সময় কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তাঁদের অন্যতম ডলি দাশ এই নাটকে রমাগুপ্ত চরিত্রে তাঁর অভিনয়ের সুনাম অক্ষুণœ রেখেছেন। ডাঃ সান্যাল চরিত্রে তিলক চক্রবর্তীর অভিনয় ভাল ছিল তবে চরিত্রের বয়সের সঙ্গে তাঁর মেকআপ এবং পোশাক নির্বাচনে আরও সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে ডাঃ রায় চরিত্রে সুচরিত চৌধুরীর সিনিয়র ডাক্তার হিসেবে তাঁর মেকআপে আরও গভীরতা দাবি করে। সন্তানহারা বৃদ্ধ রিফিউজি চরিত্রে মিঠু দাশের চমৎকার অভিনয় ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপের মাঝে দর্শকের চোখের কোণকে অশ্রুসিক্ত করে তোলে। নাটকে ডাঃ রায় চরিত্রটি সাদামাটা কিন্তু নাটকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল চরিত্রগুকে ধরে রেখে নাটককে শেষ পরিণতি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজটি তাঁর এবং সেই কাজটি সুচরিত চৌধুরী ভালভাবেই করেছেন। ছিমছাম মঞ্চসজ্জা, তবে একটি মেডিক্যাল সেন্টারের ইমার্জেন্সি রুম হিসেবে আরও সাজানো যেত। অবশ্য থিয়েটারে বাহুল্য বর্জনের একটা ব্যাপার থেকেই যায়। আলোর পরিকল্পনা ছিল ভাল এবং আলোক নিয়ন্ত্রণে দীপন রায় চৌধুরী এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণে পংকজ চৌধুরী দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
নাটকে আরও যারা সহযোগিতায় ছিলেন তাঁরা হলেন- মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় অরূপ গাঙ্গুলী, কাজল মল্লিক, বিজয় মজুমদার, সাজসজ্জায় সুস্মিতা চৌধুরী ও মিলনায়তন ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করেন থিয়েটার গণমুখের সদস্যরা। আগামী ২৭ মার্চ গ্রুপ থিয়েটার ঐক্য পরিষদ আয়োজিত স্বাধীনতা নাট্য মেলার সমাপনী দিনে স্টুডিও থিয়েটার (মুসলিম হলসংলগ্ন) মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে নাটকের ৫২তম প্রদর্শনী। -সুবর্ণা চৌধুরী
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: