ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৪ মার্চ ২০১৫

ঢাকার দিনরাত

আবেগ আর উত্তেজনায় ভরপুর ছিল গত সপ্তাহের অন্তত দু’তিনটে দিন। কেবল ঢাকা তো নয়, গোটা দেশই যেন নিমজ্জিত ছিল এক অসাধারণ আবেগ ও উৎকণ্ঠায়। এরই নামই বুঝি দেশপ্রেম, আত্মমর্যাদাবোধ। চলতি সময়ে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়ে নিয়মিত বিরতি দিয়ে এ আবেগ ও অন্তর্গত বোধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যোগ দেয়ার জন্য দেশ ছাড়ার আগেই লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছিল মাশরাফি বাহিনী। কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানোর লক্ষ্য পূরণও হয়েছে, যদিও বেড়ে গিয়েছিল স্বপ্নের সীমানা, সাধের পরিধি; সাধ্য ছিল বলেই তো। আগেও বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ ভারতকে পরাজয়ের উদাহরণ রয়েছে। এবার গোটা টিম আরও উজ্জীবিত এবং শক্তিধর। তাই আকাক্সক্ষাটা ছিল যৌক্তিক। কিন্তু বৃহস্পতিবার তিন আম্পায়ারের কাছ থেকে সুবিচার না পেয়ে, বরং বলা ভাল, অন্যায্য বিরোধিতার শিকার হয়ে সেমিফাইনাল যাত্রার লড়াইয়ে হারের ফল আসায় ক্ষোভে দুঃখে ফেটে পড়েছিল বাংলাদেশ। রাজধানীতে তারুণ্যের মুক্তাঞ্চল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে অশ্রুপাত করেছেন, তীব্র রাগ প্রকাশ করেছেন। কোথাও যেন মিল ছিল না একটু সান্ত¡না। ফিরেছে বীরেরা দেশের মাটিতে ফিরেছে ক্রিকেট-বীরেরা রবিবার সন্ধ্যায়। শাহজালাল বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নিতে ভক্তরা ছিলেন প্রস্তুত। কেউ কেউ রীতিমতো অন্যদের আহ্বান জানিয়েছেন বিমানবন্দরে জড়ো হতে। উত্তরার সাঈদা সুলতানা এ্যানির ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল এমন : ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়া মাশরাফির দল আজ ফিরছে বাংলাদেশ। ষোলো কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছে তাঁরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শাহজালাল বিমানবন্দরের মাটি ছুঁয়েছে তাঁরা। আমি যাচ্ছি তাঁদের বরণ করতে। আপনিও আসুন। জয় বাংলা!’ কালরাত কাল পরদিনই স্বাধীনতা দিবস ‘জয় বাংলা’! এক আশ্চর্য মন্ত্র! একাত্তরের মার্চের কথা স্মরণ করুন, প্রিয় পাঠক। এই মন্ত্র ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর হৃদয়ের কবিতা। এর উচ্চারণে অজান্তেই মুষ্টিবদ্ধ হতো হাত প্রতিজ্ঞায় অঙ্গীকারে; আর চোখে খেলে যেত এক অভূতপূর্ব ঝিলিক। সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! কালে কালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অপপ্রচারে একাত্তরের স্লোগানকে একটি দলের স্লোগান হিসেবে প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলেছে। তা সত্ত্বেও আজকের অনেক তরুণ দেশের সুসংবাদে, ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক আসরে বিজয়ের উপলক্ষ পেলে বজ্র থেকে শক্তি ধার করে কণ্ঠে গৌরবদীপ্ত অহঙ্কারের স্বরভঙ্গিতে উচ্চারণ করে- জয় বাংলা। স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে ঢাকায় বহু আয়োজন চলছে। সেদিন হঠাৎ জনকণ্ঠ ভবনে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রধান ফটক পেরিয়েই দেখি দু’পাশের দেয়ালে মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল স্থাপনার কাজ চলছে। আমার বিশ্বাস পোড়ামাটির শিল্পকর্মটির দিকে চোখ পড়লেই যে কারোরই মনের ভেতরে গান গেয়ে উঠবে উনিশ শ’ একাত্তর। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধের স্মারকসমূহে শেষ মুহূর্তের পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বইমেলার উত্তর পাশটিতে কৃত্রিম স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল থাকায় সুউচ্চ গ্লাস টাওয়ার অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে। তরুণ মন কৌতূহলী হয়েছে। সেকথা মনে রেখেই ওই গ্লাস টাওয়ার সম্পর্কে রইল সামান্য আলোকপাত। সবুজ উদ্যান ভেদ করে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ এক টাওয়ার। যেন আকাশ ছুঁতে চাইছে। দেশ ও দেশের বাইরে এমন দৃষ্টিনন্দন ও উচ্চতাসম্পন্ন গ্লাস টাওয়ার আর দ্বিতীয়টি রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। রাতে কৃত্রিম আলোর প্রজেকশনে টাওয়ার ও জলধারায় এক স্বপ্নিল ও মায়াময় পরিবেশের জন্ম দেয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পের এক নান্দনিক সৃষ্টি এই গ্লাস টাওয়ার। দুই দিকে ১৬ ফুট প্রস্থের টাওয়ারটির উচ্চতা ১৫০ ফুট। এর উপরিভাগে রয়েছে স্বচ্ছ কাঁচ। এতে সূর্যের আলো প্রতিসরণ ও প্রতিফলন হয়। রাতে আলোকচ্ছটা তৈরির জন্য রয়েছে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা। রাতেও কৃত্রিম আলোর প্রজেকশনে টাওয়ার ও নিচের জলধারায় সৃষ্টি হয় এক স্বপ্নিল মায়াময় পরিবেশের। রমনা রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে পরিচিত। এই উদ্যানে দাঁড়িয়ে উপস্থিত লাখো জনতার সামনে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এখানেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। আর সেই উদ্যানেই নির্মিত হয়েছে এ কাঁচের টাওয়ার। এ টাওয়ারের নিচেই রয়েছে ভূগর্ভস্থ মিউজিয়াম। এ মিউজিয়ামে স্থান পাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নানা ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর ছবি। টাওয়ারের একপাশে রয়েছে শিখা চিরন্তন। ওড়িশি নৃত্যকথন শাস্ত্রীয় নৃত্য উপভোগ করতে করতে যদি সে নাচের ব্যুৎপত্তি, বিকাশ এবং মুদ্রার অর্থ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা যায় তাহলে সেই নৃত্য নিঃসন্দেহে আরো উপভোগ্য হয়ে ওঠে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নৃত্যশিক্ষক শর্মিলা ব্যানার্জির পরিচালনায় শাস্ত্রীয় নৃত্য-উপলব্ধি শীর্ষক ধারাবাহিক নৃত্য কথন ও প্রদর্শনের চতুর্থ পর্বটি দেখার সুযোগ হয়েছিল। নির্ধারিত সময়েই পৌঁছেছিলাম ডেইলি স্টার সেন্টারে, মনে হলো আমিই প্রথম দর্শক। অবশ্য এক ঘণ্টার মধ্যে পুরো মিলনায়তন পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। সত্যি এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। কখনও কখনও পেছনের পর্দায় ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমেও দর্শকদের নৃত্য ইতিহাস অবগত করানো হচ্ছিল। ওড়িশি নৃত্যের বিভিন্ন ঘরানার দলবদ্ধ শৈলী প্রদর্শন ছিল উপভোগ্য। ব্যতিক্রমী পানীয় গত সপ্তাহে এ কলামে লেবুর শরবতের প্রসঙ্গ এসেছে। এবার আনতে চাই ভিন্নতর পানীয়র প্রসঙ্গ। পোলাও-বিরিয়ানি খেলে একটু বোরহানি পেলে মন্দ হয় না। ঢাকায় বহু আগে থেকেই প্লাস্টিকের বোতলে বোরহানি বিক্রি হয়ে আসছে। ক্ষুদ্রতম পানির বোতলের চাইতেও ছোট এক বোতল বোরহানি ৬০ টাকা দিয়ে কিনেছি শুনে পুরনো ঢাকার এক বন্ধু বিরক্ত হলেন। সেই বিরক্তি প্রকাশের প্রক্রিয়াটিও অভিনব। তিনি ফোন না করেই দেখা করতে চলে এলেন। সঙ্গে নিয়ে এলেন জগভর্তি মাঠা। আহা খাঁটি মাঠা যে কতকাল খাওয়া হয় না। পুরান ঢাকায় সেই আদিকাল থেকে বিশুদ্ধ ও সুস্বাদু মাঠা তৈরি এবং বিক্রির রেওয়াজ এখন প্রায় স্তিমিত। মাঠা তৈরিতে প্রয়োজন হয় দুধ, চিনি (পরিমাণমতো), লবণ (স্বাদমতো), এ্যালমন্ড, পেস্তা বাদাম বাটা, পাতিলেবুর রস। দুধ ভাল করে ঘুঁটে ননি (মাখন) তুলে নিয়ে অন্যান্য উপকরণ প্রয়োজনমতো দিয়ে বরফ কুচির সঙ্গে পরিবেশন করতে হয়। তবে আজকাল আর সেই আয়োজন দেখা যায় না। এত কিছু না দিয়ে সামান্য উপকরণ সহযোগে মাঠা তৈরি করা হয়। বর্ষীয়ানদের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ঢাকার মাঠার ইতিহাস খুব পুরনো। প্রায় শতবর্ষী আদি ঢাকাবাসী আজগর আলী পাঠানের সংগৃহীত বক্তব্য তুলে দিচ্ছি তাঁরই ভাষায় : ‘হেই সুমে ঢাকায় প্রত্তিক দিন সকালবেলায় মাঠা বেচতে আইত মাঠাওয়ালা। তয় শীতে মাঠা বেশি খাইতাম আমরা। একটা ইয়া বড় পাতিল মাথায় নিয়া গোয়ালারা চিল্লাইত ‘ওই মাঠা-মাখন’ ‘ওই মাঠা-মাখন’ বলে। পাতিলের মইধ্যে মাঠা থাকত আর পাতিলের উপরে একটি আলাদা ঢাকনার মতো ঢালায় থাকত হাতে তোলা মাখন। ছোট মাটির পাত্রে লবণও থাকত। মাঠাওয়ালা দুটা কাঁচের গেলাস এবং মাঠা তোলার লেগা টিনের হাতলাওলা একটা ছোট মগ রাখত। বাড়ির লোক ডাইক্কা ডাইক্কা মাঠা খাইত। যারা মাঠা বিক্রি করত এরা সবাই আসত গোয়ালঘাট থাইক্কা। এক গ্লাস মাঠার মধ্যে এক টুকরো মাখন আর অল্প লবণ দিয়া আমাগোরে দিতো। হেই সুমের মাঠা অখ্খনে পাইবেন কই। মাগার হেই সুমের মাঠা ছিল ঘন, ক্রিমসুদ্দ আর কী স্বাদ, আহ মনে পরলে অখ্খনেও মুখে স্বাদ পাই।’ ফেসবুকে ঢাকার কড়চা দম্পতি মেলা রাজধানী ঢাকাতে হয়ে গেল এক অভিনব মেলা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে দম্পতি সোসাইটি নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় দম্পতি মেলা। বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব তুলে ধরতে ও পারিবারিক সম্পর্কের উন্নতি করার লক্ষ্যে এখন থেকে প্রতি বছরই ১৫ মার্চ এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান আয়োজকরা। মেলায় জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। সকলের জন্য উন্মুক্ত এই মেলায় দম্পতিরা এসে বিয়ে সম্পর্কে, বিবাহিত জীবনকে সুখী করার বিষয়ে নিজেদের মতামত আদান-প্রদান করেন। দম্পতি মেলার উদ্যোক্তা আরজুমান্দ আরা বকুল ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তার অংশবিশেষ এখানে তুলে দিচ্ছি : এই উদ্যোগটা আসলে আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের। মুস্তাফা মনোয়ার স্যার, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আমার অনুপ্রেরণা। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন দম্পতি সোসাইটি কী শুধুই দম্পতিদের জন্যে? আবার কেউ কেউ জানতে চাচ্ছেন, শুধু প্রবীণরাই এখানে প্রাধান্য পাবেন কিনা? আপনাদের এসব প্রশ্ন, আপনাদের আগ্রহেরই ধারাবাহিকতা। তাই ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। সবার জানার জন্যে বলছি, দম্পতি পরিবারের বাইরের কিছু নয়। বরং বিরাট এক অংশ। পরিবার মানেই মা বাবা ভাই বোন বন্ধু, চাচা ফুপা মামা, ইত্যকার নানা সম্পর্কের নানা ফুল দিয়েই দম্পতির সাজানো বাগান। আর দম্পতি সোসাইটি সেই সব ফুলের পরিচর্যার লক্ষ্যেই কাজ করবে। আলোকচিত্র থেকে আলোকধারায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে চলমান আলোকচিত্র প্রদর্শনীটিতে (‘ইন দ্য নেম অব...’) স্থান পাওয়া ছবিগুলো সমকালীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার দলিল। ছবিগুলোর শিরোনাম প্ল্যানেট অব দ্য এপস, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক, অ্যাপোকেলিপস নাউ, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, এঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস ইত্যাদি। আয়োজক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা’ (অগজঅ অ্যালায়েন্স ফর মিটিগেটিং রেসিজম অলটুগেদার)। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পী সন্জীদা খাতুন, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আক্কু চৌধুরী। সাম্প্রদায়িকতার পেছনে থাকে অপরাজনীতি। আলোকচিত্রমালা দেখতে দেখতে অনেক কথাই মনে ভিড় করে এলো। তার কিছুটা ভাগ পাঠকের সঙ্গে নিশ্চয়ই শেয়ার করা যায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান ধর্মভীরু বটে, তবে ধর্মান্ধ নয়। তাছাড়া ইসলাম ধর্মের, শুধু একটি ধর্মের কথাই বা বলি কেন, সকল ধর্মেরই মূল বাণী শান্তি ও মানবকল্যাণ; অপর ধর্মাবলম্বীদের নির্মূল করা নয়। বিশ্বব্যাপী শান্তির ধর্ম হিসেবে পরিচিত ইসলাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। এই দেশের মাটিতে ওই একবারই একাত্তর সালে বিপুল সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর ওপর চূড়ান্ত অন্যায্য আচরণ হয়েছিল, আর তার উদ্যোক্তা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের অবাঙালী সেনাবাহিনী। পাকিস্তান রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সেই বিষম অন্যায় পরিচালিত হয়েছিল। বলা দরকার, তাদের সহযোগিতা করেছিল অল্প কিছু বাঙালী- যারা মুসলমান বলে পরিচয় দিলেও মূলত তারা ছিল ধর্মব্যবসা বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতিভূ। ধর্মের ভুল দোহাই পেড়ে রাজনীতিচর্চা এবং তার ফলস্বরূপ মানবকল্যাণের উল্টোপথে যাত্রার সূচনা হলেও এদেশের অধিকাংশ বাঙালী মুসলমান বাঙালী হিন্দু, বাঙালী খ্রীস্টান বা বাঙালী বৌদ্ধের ওপর বিধর্মীর দৃষ্টিকোণ থেকে হামলে পড়েনি। স্বাধীন দেশে ধর্মবিচারে জাতিবৈর কখনই বড় নেতিবাচক উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হয়নি। বরং কখনও কখনও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন ব্যক্তি বা দলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রশ্রয়ে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আশির দশকে ভারতে বাবরী মসজিদ ইস্যুকে এদেশে কাজে লাগানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি। ঢাকাবাসী হিন্দুদের ভেতর সাময়িক আতঙ্ক ঢোকাতে সমর্থ হয়েছিলেন সেই স্বৈরশাসক। রাজনৈতিক মুনাফা লোটার অপকর্মে অবশ্য তেমন সফল হননি। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের একটি বরাবরই লোকদেখানো কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে ভারতবিরোধিতা এবং যখনই তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, সংখ্যায় খুব ব্যাপক না হলেও, হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে হিন্দুদের ওপর যত আক্রমণ হয়েছে তার প্রায় সব কেন্দ্রে রয়েছে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের নীতি, ধর্ম সেখানে কোন অনুঘটক নয়। যদিও ধর্মীয় উপাসনালয়ে আগুন দেয়া হচ্ছে, হিন্দুদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে, লুটপাট হচ্ছে তাঁদের ব্যবসাকেন্দ্রে। মানুষের ভেতরে এখনও মনুষ্যত্ববিরোধী উপাদান রয়ে গেছে এবং ধড়িবাজ রাজনীতিকরা সেটা উস্কে দিয়ে মানব-ইতিহাসকে কালিমালিপ্ত করছে। ২৩ মার্চ ২০১৫ [email protected]
×