ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারহীনতার ট্রাডিশন

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৪ মার্চ ২০১৫

বিচারহীনতার ট্রাডিশন

অপরাধের মাত্রা যে স্তরেই হোক অপরাধীকে কৃতকর্মের জন্য শাস্তিদান অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু রাজনৈতিক দলের খাতায় নাম লেখানো অপরাধীরা গুরুতর অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। দেশ ও সমাজ এই অবস্থা দীর্ঘকাল ধরেই অবলোকন করে আসছে। মানুষ হত্যা, সম্পদহানিসহ দেশবিরোধী কর্মকা- চালিয়েও বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না- এমনটাই যেন ট্রাডিশনে পরিণত হয়েছে। যেহেতু হত্যার বিচার হয় না, তাই তথাকথিত আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা যেন খুবই সহজ। হত্যাকারীরা জানে তাদের টিকিটি কেউই স্পর্শ করবে না। বিচার তো দূরে থাক। তাই টানা ৮০ দিন ধরে অবরোধ ও হরতালের নামে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা ও যানবাহন পোড়ানো অব্যাহত রয়েছে। বিচার করা হবে বলে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। আসলে দায়িত্ব হচ্ছে ঘটনাগুলো আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা। গত ৫ জানুয়ারি হতে শুরু হওয়া নাশকতা দমনে নানা তৎপরতা চলছে। হামলা ও হত্যাকারী গ্রেফতার, অস্ত্রসহ নাশকতাকারী আটক এবং অস্ত্র কারখানা আবিষ্কার করা গেলেও জড়িতদের সেভাবে গ্রেফতার করা যায়নি। আর যারা আটক হয়েছে তাদের বিচারের সম্মুখীন করার কাজটিও হয় না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় ৭০৪টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ১৩৭টি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সহিংসতায় খুনের মামলা হয়েছে ১৪টি। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী ৪৩৬ জন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্যান্য সহিংসতায় সারাদেশে দায়ের করা মামলার আসামি ৬৩ হাজারের বেশি। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮০৯টি মামলা হয়। এসব মামলায় এজহারভুক্ত আসামি গ্রেফতার হয় ৬ হাজার ৪শ’ ৩০ জন। কিছু কিছু মামলায় পুলিশ ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। কোন কোন ক্ষেত্রেও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ছাড় দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। অনেক মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। নির্বাচনকালীন সময়ে এবং বর্তমান সময়ে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন যাঁরা। তাঁদের পরিবার বিচারপ্রার্থী হয়েও বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কেঁদে ফিরছে। নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও মানুষ হত্যা ও সম্পদহানির কোন মামলারই কার্যক্রম শুরু হয়নি। বর্তমান পেট্রোলবোমায় নিহতদের স্বজনরাও মনে করেন এসব হত্যার কোন বিচার কস্মিনকালেও হবে না। এসব মামলা যেন ‘ডিপফ্রিজে’ রেখে দেয়া হয়েছে। এসব সহিংসতায় পুলিশের যেসব সদস্য মারা গেছে তাদের হত্যার বিচারও হচ্ছে না। আটক সন্ত্রাসী ও অভিযুক্তরা অবলীলায় জামিন পেয়ে আবার সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। মন্ত্রীরা এমনও বলছেন, একটি গোষ্ঠী দেশটাকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে দেশ ধ্বংস করতে চায়। অথচ এদের আইনের কাছে সোপর্দ করা হয় না, বিচার দূরে থাকে। সব ঘটনাতেই পুলিশ অনবদ্য নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হলেও তাদের বিচার হয় না। জনগণ চায় আইনের শাসন। চায় সহিংসতায়, নাশকতায় জড়িতদের দ্রুত বিচার। কিন্তু এই চাওয়া ক্ষমতাসীনদের কর্ণকুহরে যেন প্রবেশ করছে না। যা কাম্য নয়।
×