ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্নের ফাইনালে কিউই না প্রোটিয়া?

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ মার্চ ২০১৫

স্বপ্নের ফাইনালে কিউই না প্রোটিয়া?

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিতে আজ সহআয়োজক কিউইদের মুখোমুখি হচ্ছে অন্যতম ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল সাতটায়। এর আগে কখনই ফাইনালে খেলা হয়নি দল দুটির। আজ যারা জিতবে বিশ্বকাপ ফাইনালে অভিষেক হবে তাদের। শিরোপার হিসাব পরে, সে অর্থে নিশ্চিত নতুন ফাইনালিস্ট পেতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব। বৃহস্পতিবার অপর সেমিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ড কোচ মাইক হেসন বলেছেন, এবার যোগ্য চারটি দলই সেমিফাইনালে উঠে এসেছে। যথার্থই বলেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা বরাবর শক্তিশালী। সেই ১৯৯২ থেকে প্রতিটি আসরেই অন্যতম ফেবারিট হিসেবে খেলে আসছে প্রোটিয়ারা। যদিও ভাগ্যে দোষে কাটা পড়ে নকআউট থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে বার বার। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডকে বলা যায় ‘চিরকালীন’ এক সেমিফাইনালিস্ট! বিশ্বকাপের এটি ১১তম আসর, যেখানে নবম বারের মতো সেমিতে খেলছে ‘ব্ল্যাক ক্যাপসরা’! শিরোপাটা তাদের পাওনা হয়ে গেছে। শক্তির মুন্সিয়ানায় প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দুর্বার না হলেও গত এক মৌসুমে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে আলোচনায় উঠে আসে ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের দল। এ সময়ে টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারায় তারা। এমনকি বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে ওয়ানডেতে ধরাশায়ী করে পাকি ও লঙ্কানদের। সুতরাং ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এবার অন্যতম ফেবারিট হিসেবে আসর শুরু করে কিউইরা। মাঠেও সে ধারা অব্যাহত রাখে। গ্রুপপর্বে ছয় ম্যাচের সবটিতে জয় নিয়ে কোয়ার্টারে উঠে আসে। একের পর এক প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে দিতে থাকে। উদ্বোধনী দিনে শ্রীলঙ্কাকে হারায় ৯৮ রানের ব্যবধানে। স্কটল্যান্ডকে ৩ ও ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে অব্যাহত রাখে সে ধারা। সবচেয়ে ‘হাইপ্রোফাইল’ ম্যাচে দুর্ধর্ষ অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারায় ম্যাককুলাম বাহিনী! এরপর আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ ও ৩ উইকেটের জয়। এখানেই শেষ নয়। কোয়ার্টারে উইন্ডিজকে ফুতকারে উড়িয়ে দেয় স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের উত্তরসূরিরা। মার্টিন গাপটিলের রেকর্ড ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৩৭* রানের সৌজন্যে স্কোর বোর্ডে জমা করে ৩৯৩ রানের পাহাড়। এরপর প্রতিপক্ষকে ২৫০ রানে অলআউট করে ১৪৩ রানের বিশাল জয়। সেদিন কেবল জয়ই নয়, যেন সেমির প্রস্তুতিটা সেরে নেয় নিউজিল্যান্ড। গ্রুপপর্বে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর কোয়ার্টারে উইন্ডিজকে উড়িয়ে দেয়ার পথে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে কিউইরা। ব্যাটিং-বোলিং ফিল্ডিং সবদিক দিয়েই ভারসাম্যপূর্ণ দল তারা। ব্যাট হাতে গাপটিলের সঙ্গে আছেন ম্যাককুলাম। অধিনায়ক দলটির সবচেয়ে বড় উইলোবাজ। আছেন প্রতিভাবান কেন উইলিয়ামসন, কোরি এ্যান্ডারসনরা। প্রয়োজনে কম যান না লুক রনকি, গ্রান্ট ইলিয়টরা। বোলিংয়ে দুর্দান্ত পেস আক্রমণের নেতৃত্বে টিম সউদি, ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে এ্যান্ডারসন। তবে ইনজুরির জন্য আজ গতিতারকা এ্যাডাম মিলনেকে পাচ্ছে না তারা। সেক্ষেত্রে ম্যাকক্লেনঘান অথবা কাইল মিলসকে দেখা যেতে পারে। স্পিনে বুড়ো হারে ভেল্কি দেখিয়ে যাচ্ছেন ভেট্টোরি। সুতরাং প্রথমবারের মতো ফাইনালের স্বপ্ন দেখতেই পারে কিউইরা। ইডেন পার্কের পিচ নিয়ে আগ্রহ থাকছে। কারণ গ্রুপপর্বে এখানেই অস্ট্রেলিয়ার ১৫১ রান টপকাতে ৯ উইকেট হারাতে হয়েছিল স্বাগতিকদের! আজ তেমনটা হবে না বলেই মনে করছেন ম্যাককুলাম। অধিনায়ক বলেন, ‘সম্ভবত সেদিনের মতো সুইং দেখব না। এ পর্যন্ত উইকেট ভাল মনে হচ্ছে, অনেকটা নেটের অনুশীলন পিচের মতো। সুতরাং কোনকিছু নিয়ে না ভেবে সতীর্থদের উদ্দেশে বলব, মাঠে নামো, নিজেকে মেলে ধর ও খেলা উপভোগ কর। সবাই জানে ইতিহাস গড়ার জন্যই আমাদের এত পরিশ্রম, এতকিছু।’ তবে উপভোগটা ম্যাককুলামদের জন্য অতটা সহজ হবে না। কারণ প্রতিপক্ষ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা খুবই ভয়ঙ্কর। নিজেদের দিনে এবি ডি ভিলিয়ার্সের দল যে কোন প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে দিতে সক্ষম। প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকেট পেতে আত্মবিশ্বাসী প্রোটিয়া অধিনায়কও। ডি ভিলিয়ার্স বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আমরা যদি নিজেদের সামর্থ্যরে পুরোটা দিতে পারি তবে আজ কেন, টুর্নামেন্টে কোন দলই আমাদের হারাতে পারবে না!’ দক্ষিণ আফ্রিকা বার বার নকআউটে হারের বদনাম তারা ইতোমধ্যে দূর করেছে। প্রথম কোয়ার্টারে উড়িয়ে দিয়েছে শক্তিধর শ্রীলঙ্কাকে। ‘আমি মনে করি, দল হিসেবে আমরা ভাল অবস্থায় আছি, সেমিতে জয় পেতে খুবই আত্মবিশ্বাসী’Ñ বলেন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। তবু বিশ্বকাপে সেমির মতো বড় আয়োজনের আগে ইতিহাসটা ভুলতে পারেন না দক্ষিণ আফ্রিকান ভক্তরা। এর আগে ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১১ সালে নকআউটে ‘অদ্ভুত’ ও ‘নাটকীয়’ কারণে থামতে হয় তাদের! ১৯৯৯ সালে সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অবিশ্বাস্য সেই ‘টাই’ ম্যাচ বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সেরা নাটকের জন্ম দিয়েছিল। একাধিকবার নকআউটে কাটা পড়ায় প্রোটিয়াদের নামই হয়ে গেছে ‘চোকার’। এবার আর তেমনটা হবে না বলে আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক। ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে ঘোরাতে ব্যাট হাতে বড় দায়িত্বটা ডি ভিলিয়ার্সেরই। ৬ ইনিংসে ৪১৭ রান নিয়ে আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রহক তিনি। রানে আছেন হাসিম আমলা, ডেভিড মিলার। সঙ্গে কুইন্টন ডি’কক, রাইরিল রুশোরা জ্বলে উঠলে কপাল পুড়বে স্বাগতিকদের। বল হাতে শুরু থেকেই ভাল করছেন পেসার মরনে মরকেল ও স্পিনার ইমরান তাহির। জ্বলে উঠতে মরিয়া পেস তারকা ডেল স্টেইন। মুখোমুখি ৬১ ওয়ানডের ৩৬টি জিতে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বিশ্বকাপ পরিসংখ্যানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। ৬ বারের দেখায় চারটিতেই জয় কিউদের। তার মধ্যে ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ সালে শেষ তিনবার টানা সাফল্য। সর্বশেষ ঢাকায় গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৯ রানে হেরে বিদায় নিয়েছিল প্রোটিয়ারা।
×