ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেন্টমার্টিনের কাছে সাগরে ৪০ মালয়েশিয়াগামী যাত্রী আটক

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৪ মার্চ ২০১৫

সেন্টমার্টিনের কাছে সাগরে ৪০ মালয়েশিয়াগামী যাত্রী আটক

এইচএম এরশাদ কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের দৌরাত্ম্য আবারও বেড়ে গেছে। অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার কাজ রোধকল্পে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন টহল এবং অভিযান অব্যাহত রাখলেও এ কাজে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন গডফাদারের কারণে থামছে না সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার। প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের অদূরে ছেড়াদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম সাগর দিয়ে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে মাঝি-মাল্লাসহ ৪০ জন যাত্রীকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় পেটি অফিসার মি. মং-এর নেতৃত্বে কোস্টগার্ড সদস্যরা সাগরে দুঃসাহসিক এ অভিযান চালায়। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ব্যস্ত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া চেপটখালীর মোস্তাফিজুর রহমানের পুত্র ফয়েজুর রহমান সিকদারের নেতৃত্বে দালালরা মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করে চলছে বলে জানা গেছে। সোমবার সকালে কোস্টগার্ডের টহলদলকে দেখে দালালচক্র মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের ট্রলারের ভিতর কোল্ডস্টোরেজে অমানবিকভাবে গাদাগাদি করে রাখে। ট্রলারটি ফিশিং ট্রলার বলে চালিয়ে দিতে মাছ ধরার ভান করে পালানোর চেষ্টা চালায়। কোস্টগার্ড বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ধাওয়া করে। অবশেষে সেন্টমার্টিনের অদূরে ছেড়াদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম সাগর স্থানে ৪০ ব্যক্তিসহ ট্রলারটি জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে। কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. বিকসন চৌধুরী সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক ৪০ মালয়েশিয়াগামী যাত্রী ও মাঝি-মাল্লাকে সোমবার বিকেলে টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কমিটির ৮ দফা সুপারিশ ॥ মানবপাচার রোধে কমিটির ৮টি সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেÑ মানবপাচার সংক্রান্ত দায়েরকৃত মামলা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন, যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধি থাকবেন। মানবপাচারের মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিশ্চিত করতে জেলা বা মেট্রোপলিটন পর্যায়ে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন এবং সবগুলো মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ। শাহপরীদ্বীপে একটি পূর্ণাঙ্গ পুলিশ তদন্তকেন্দ্র স্থাপন। উপকূলীয় অঞ্চলে ওয়ার্ডভিত্তিক মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটি গঠন। মানবপাচারে জড়িত প্রবাসী বাঙালীদের আইনের আওতায় আনা। মিয়ানমারের সঙ্গে টেকনাফের ৬০ কিলোমিটার এবং উখিয়া থানার সঙ্গে ২০ কিলোমিটার নৌপথ এলাকায় নৌপুলিশের ইউনিট স্থাপন এবং মানবপাচারে জড়িত বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার হুন্ডি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার জানান, র‌্যাব দীর্ঘদিন ধরেই তাদের পিছু লেগেছিল। বার বারই ওরা র‌্যাবকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হলেও সোমবার চক্রটি ধরা পড়েছে। চক্রটি মালয়েশিয়ায় সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মানবপাচারে জড়িত। সেই সঙ্গে আদায় করত মুক্তিপণ। গত দুদিনে ঢাকা টাঙ্গাইল ও কক্সবাজারে বিশেষ অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ৯ জনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের প্রতারণার শিকার ১২ ভিকটিমকেও উদ্বার করা হয়। নাটকীয় এ অভিযান চালানোর আগ মুহূর্তে আরও কয়েকজন পালিয়ে যেতেও সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো রুবেল, শহিদুল ইসলাম, শওকত, আবু মোহাম্মদ, পিন্টু, আনোয়ার, মাহমুদুল হামিদুল হক ও ইউনুছ মিয়া। এ বিষয়ে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমুদ্রপথে কিভাবে বছরের পর বছর ধরে মানবপাচার করা হয়। কিভাবে সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হওয়া এ সব তরুণ। সাগরপথে মাছ ধরার ট্রলারে যাত্রী পাচারকালে ২৫ ভাগ যাত্রী নির্যাতন ও অনাহারে প্রাণ হারানোর মতো তথ্য প্রকাশ করা হয় এ সংবাদ সম্মেলনে। দেশের বেকার ও নিরীহ যুবকরা এ প্রতারণা চক্রের খপ্পরে পড়ে জায়গা-জমি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে।
×