ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী

যারা ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে তাদের বাপদাদার জমিও বাজেয়াফত হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৩ মার্চ ২০১৫

যারা ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে তাদের বাপদাদার জমিও বাজেয়াফত হবে

বিডিনিউজ ॥ আন্দোলনের নামে যারা ভূমি অফিসে আগুন দিচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করে জমি বাজেয়াফত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জাতীয় ইমাম সম্মেলনে বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান অবরোধে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন সরকার প্রধান। অবরোধে নাশকতার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলা-জেলায় ভূমি অফিসগুলোও তারা আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে। ভূমি অফিসে আগুন দিয়ে কাগজপত্র-দলিলপত্র পুড়িয়ে ফেলার কী রহস্য থাকতে পারে? আমি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলেছি, যে করেই হোক এদের খুঁজে বের করতে হবে এবং যারা জরুরী দলিলপত্র পোড়াচ্ছে তাদের বাপ-দাদার যত জমি আছে সব বাজেয়াফত করা হবে, কোন জমির মালিক তারা থাকতে পারবে না। ওই এলাকায় তারা থাকতে পারবে না, ওই এলাকায় কোন জমি তাদের থাকবে না। সেই ব্যবস্থাটাই আমাদের নিতে হবে।’ গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালে রাজপথে মিছিল সমাবেশ দেখা না গেলেও যানবাহনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। নাশকতার এসব ঘটনায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। গত কিছু দিনে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় সরকারী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দিয়ে বেশ কয়েকটি স্থানে ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় ধর্মের নাম করে সন্ত্রাস-নাশকতারও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তি, সৌহার্দ্য, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মানবতার ধর্ম। ইসলাম ধর্মই সব থেকে বেশি মানবতার কথা বলেছে এবং মানবতাকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা দেখেছি, আমাদের দেশেই পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অপব্যাখ্যা করে, ব্যবহার করে, ধর্মের বিরুদ্ধে যেমন কাজ করেছে, মানবতার বিরুদ্ধেও তেমনি কাজ করেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়ও ষড়যন্ত্রকারীদের ধর্মকে ব্যবহার করার দৃষ্টান্ত টানেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমরা দেখেছি একই ঘটনা, মানুষ হত্যা করা, অগ্নিসংযোগ করা, মা-বোনের ইজ্জত লোটা, লুণ্ঠন করা, নানা ধরনের অপকর্ম এই ধর্মের নাম ব্যবহার করে করা হয়েছে। এতে আমাদের যে পবিত্র ধর্ম ইসলাম; সেই ধর্মেরই বদনাম হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে দৃশ্যত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী ইসলাম ধর্মের নাম নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে। একটা দলের নামের সঙ্গেও ইসলাম লাগানো আছে। আর তাদের দোসর বিএনপি; এরা মিলে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। এটা তো গণহত্যার শামিল, তারা তো গণহত্যাই করছে।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা পায় বাংলাদেশ। মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতিরও প্রশংসা হয় বিভিন্ন ফোরাম ও প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই বাংলাদেশে এই বিএনপি-জামায়াত মিলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে, নানা ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।’ যারা সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করে তাদের কোন ‘ধর্ম নেই, সীমানা নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের সেনাবাহিনী গত বছর ফিলিস্তিনে হামলা চালিয়ে নিরীহ মুসলমান নারী ও শিশুদের হত্যা করলে তার কঠোর প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। এ প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই একটু হিসাব করে দেখবেন, যারা এদেশে ইসলামের নাম নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে কয়জন এটার প্রতিবাদ করেছে। এটাই দুর্ভাগ্য যে, এখানে কিছু লোক ধর্মের নাম ব্যবহার করে চলবে, মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, আমাদের মানুষ ধর্মপ্রাণ, এই ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষগুলোকে এরা বিভ্রান্ত করে।’ আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় ধর্মের কল্যাণে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে সব সময়ই ইসলাম প্রচার-প্রসারে কাজ করেছে। স্বাধীনতার পর জাতির জনক ক্ষমতায় এসেই তিনি ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি আইন করে মদ, জুয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন, অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছিলেন।’ শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ঈদে মিলাদুন্নবীতে ছুটি ঘোষণা, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, বেতার-টেলিভিশনে অনুষ্ঠান শুরুর আগে এবং সমাপ্তিতে কোরান তেলাওয়াত চালু করা, শবে কদর, শবে বরাতে সরকারী ছুটির ব্যবস্থা করা, বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ যাতে স্বল্প খরচে সমুদ্র পথে হজে যেতে পারে সেজন্য হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজ কিনেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু পরবর্তীতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান সেই জাহাজকে প্রমোদতরী হিসেবে ব্যবহার করে। মুখে ইসলামের নাম, কাজে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর মদ, জুয়ার লাইসেন্স দিতে শুরু করে। শেখ হাসিনা তার শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের সরকার জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এই শিক্ষা নীতিমালায় আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি। অর্থাৎ স্কুল থেকেই একটা বাচ্চাকে ধর্ম শিক্ষা দেয়া হবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া কোন শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হয় না।’ এ সময় মসজিদে আগুন দেয়া ও কোরান পোড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো এদেশে কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসীর স্থান হবে না। ইসলাম জঙ্গীবাদে বিশ্বাস করে না, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিশ্বাস করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম।’ ইসলামের নামে যারা ‘ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড’ চালাচ্ছে তাদের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আলেম-ওলামাদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ধর্মমন্ত্রী অধ্যাপক মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা- ২০১৩ এর বিজয়ীদের মাঝে সনদপত্র ও পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় দেশের শ্রেষ্ঠ তিনজন ইমামকেও পুরস্কার ও সনদ দেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটা করে মডেল মসজিদ তৈরি হবে; যেখানে নারীদের জন্য আলাদা নামাজ ঘর, মুসলিম পর্যটক ও অতিথিদের জন্য বিশ্রামাগার, হজ যাত্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জায়গা থাকবে।
×