ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ২১ জঙ্গীকে মুক্ত করার ছক জেএমবির

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ মার্চ ২০১৫

সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ২১ জঙ্গীকে মুক্ত করার ছক জেএমবির

শংকর কুমার দে ॥ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক ২১ জঙ্গীকে মুক্ত করার ছক কষেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতার সুযোগ নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। আদালতে আনা-নেয়ার সময় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মুক্ত করে নেয়া হতে পারে কারাবন্দী জেএমবির ২১ জঙ্গীকে। এসব জঙ্গী বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষকে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের যেসব জঙ্গী কারাগারে বন্দী আছে তাদের মধ্যে ২৪ জঙ্গী দুর্ধর্ষ। এরমধ্যে গত বছর প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন জঙ্গীকে ছিনিয়ে নিয়েছে জেএমবির সহযোগী জঙ্গীরা। কারাবন্দী জেএমবির দুর্ধর্ষ ২৪ জঙ্গীর মধ্যে তিন জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়ার পর এখনও কারাবন্দী আছে ২১ জঙ্গী। এই জঙ্গীরা বন্দী আছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি সেলে। অভিযোগ আছে, কারাগারের এক শ্রেণীর দুর্র্নীতিবাজ ও অসৎ কর্মচারীদের হাত করে কারাভ্যন্তরে মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বাইরে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে এসব জঙ্গী। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কারাগারে বন্দী যে ২১ জঙ্গীকে মুক্ত করে নেয়ার ছক কষা হয়েছে তার মধ্যে আছেÑ নওগাঁর নিয়ামতপুরের আবদুল কাইউম, বগুড়ার শেরপুরের হাফেজ মিনহাজুর ইসলাম ওরফে সোহেল রানা ওরফে সানোয়ার হোসেন, জামালপুরের মোঃ আক্তারুজ্জামান, খুলনার তরিকুল ইসলাম ওরফে রিংকু, ঝিনাইদহের মনিরুল ইসলাম ওরফে মোকলেছ, নাসরুল্লাহ ওরফে শান্ত, রোকনুজ্জামান ওরফে সিবুন, গাইবান্ধার আবু তালেব আনছারী ওরফে বাবুল আনছারী, ঝিনাইদহের মোহন, মামুনুর রশিদ, মুহিদ আহম্মদ, মোজাম্মেল হক ওরফে মোজাম, তুহিন রেজা, সবুজ আলী, শৈলকূপার ফারুক হুসাইন, গাইবান্ধার মতিন মেহেদী ওরফে মতিনুর ইসলাম, ঝিনাইদহের মহিরুল আল মামুন ওরফে চাঁদ, ঝিনাইদহের বিল্লাল হোসেন, সাবউদ্দিন, শৈলকূপার রবজেল হোসেন এবং আজিজুর রহমান। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জেলে এখনও সহস্রাধিক জেএমবি ও জঙ্গী সদস্য বন্দী রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে মুক্ত করার প্রাথমিক টার্গেট করার পর তিন জঙ্গীকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয় জেএমবির জঙ্গীরা। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ থেকে তিন জেএমবি সদস্য হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান ওরফে হায়দার, সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সজিব, জাহিদ হাসান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিজান ওরফে বোমারু মিজানকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গীরা। প্রিজনভ্যানে গুলি চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয় তাদের। এতে এক পুলিশ নিহত এবং অপর দু’জন গুরুতর আহত হয়। ঘটনার চার ঘণ্টার মাথায় টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় রাকিবকে। ১৪ ঘণ্টার মাথায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রাকিব। এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গীকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতার কাজে যোগ দিয়েছে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীরা। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে মিলেমিশে হামলা করছে তারা। যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে তাদের অবরোধ-হরতালের নামে মাঠে নামানো হয়েছে। গত আড়াই মাস ধরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতা চালানোর মধ্যে পুলিশের ব্যতিব্যস্ততার মধ্যে কারাগারে আটক জঙ্গীদের ছিনিয়ে নেয়ার ছক কষেছে জেএমবির জঙ্গীরা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটায় জেএমবির জঙ্গীরাই। রাজধানী ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩৮টি মামলা দায়ের হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক হাজার ৪শ’ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে ৯৮১ জনকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়। জেএমবির তৎকালীন প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানসহ বেশিরভাগ শীর্ষ জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে জেএমবির তৎকালীন প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ শীর্ষ ছয় জঙ্গীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
×