ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২২ মার্চ ২০১৫

পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে সমালোচনার ঝড় এখনও বইছে ক্রিকেট বিশ্বে। পুরো খেলায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত যে বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে এটা স্পষ্ট। এই সিদ্ধান্তগুলোই মূলত বাংলাদেশের পরাজয়ে টার্নিং পয়েন্ট এই ধারণা অনেকের। আম্পায়ারদের এই পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা বাংলাদেশ। এই পরাজয়ে লজ্জা নেই, আছে কেবল ক্ষোভ, কষ্ট আর বেদনা। এ জন্য পরাজিত দল হিসেবে বাংলাদেশকে গ্লানিও বইতে হবে না। কারণ দৃশ্যত হেরেছে বাংলাদেশ, অদৃশ্যে ছিল হারানোর লজ্জাজনক এক অধ্যায়। অন্যভাবে বললে বাংলাদেশের নৈতিক জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। কোথায় কখন কি হচ্ছে তা মুহূর্তেই মানুষের নখদর্পণে। নতুন তথ্যপ্রযুক্তি, এত সাব ক্যামেরা, অন্দরে-বাইরে আম্পায়ার- এতসব আয়োজনের সব কিছুতেই ধরা পড়েছে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের বিষয়টি। তাই অনেকের প্রকাশ্য মন্তব্য, আম্পায়াররাই হারাল বাংলাদেশকে। বিশ্বখ্যাত সাবেক ক্রিকেটাররাও আম্পায়ারদের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাঠে বাংলাদেশ দলের এক অন্যরকম আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারানোর ঘটনাটি, যা বনেদী ক্রিকেট দেশগুলোর জন্য রীতিমতো আতঙ্ক ছিল। তাই বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পরই শুরু হয়ে যায় নানা হিসাব-নিকাশ। কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। দেশটি ক্রিকেট পরাশক্তি তাতে সন্দেহ নেই। তারাও দুর্দান্ত খেলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছে। শক্তি এবং পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে ক্রিকেটে ভারত বরাবরই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবুও নতুনভাবে গর্জে ওঠা বাংলাদেশকে ভারতের পক্ষে খুব একটা সহজভাবে নেয়ার সুযোগ ছিল না। ম্যাচের আগে মিডিয়াগুলোও এ ব্যাপারে সরব ছিল। টসে হেরে বল হাতে নিয়ে স্বপ্নপূরণের পথেই এগিয়েছিল বাংলাদেশ। ইতিহাস সৃষ্টি করতে জীবনপণ খেলেছেও টাইগাররা। কিন্তু খেলার মাঝপথে আম্পায়াররা যেভাবে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করলেন তা দৃষ্টিকটু লেগেছে সবার কাছে। ভারতের ইনিংসের ৪০তম ওভারের চতুর্থ বলটি ফুলটস দিয়েছিলেন রুবেল। বলটিতে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন রোহিত। কিন্তু লেগ আম্পায়ার ‘নো’ বলের সঙ্কেত দেন। অথচ টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, বলটি কোমরের ওপরে ছিল না। ধারাভাষ্যকার শেন ওয়ার্নও এতে বিস্ময় প্রকাশ করেন। সৌরভ গাঙ্গুলির মতও ছিল একই। সিদ্ধান্তটি দেয়ার পর হতভম্ব হয়ে পড়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশ অধিনায়ক কথা বলতে গেলে আম্পায়াররা বিষয়টি আমলে নেননি। এর আগে রায়নার আউট থেকেও বঞ্চিত করা হয় বাংলাদেশকে। মাশরাফির বলে পরিষ্কার লেগ বিফোর হন রায়না। রিভিউতে দেখা যায় বল আঘাত করেছে স্ট্যাম্পকে। কিন্তু আউট দেননি আম্পায়ার। তৃতীয় আম্পায়ারও একই ভুল করলেন। তখন রায়নার রান ছিল মাত্র ১০। আসলে আম্পায়ারদের এ হেন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। এলোমেলো হয়ে যায় তাদের ফিল্ডিং। ব্যাটিং বাংলাদেশের ভাল হয়নি। ৩০২ রানের পাহাড়কে সামনে রেখে লড়াই করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তারপরও ভীত হয়নি বাংলাদেশ। এখানেও দুর্ভাগ্য। মাহমুদুল্লাহর ওভার বাউন্ডারি ধরতে গিয়ে শেখর ধাওয়ানের পা বাউন্ডারি রজ্জু ছুঁয়ে গেলেও তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেন মাহমুদুল্লাহকে। তবে কোয়ার্টার ফাইনালের ফলাফল যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট দলের পাশে ঐক্যবদ্ধ। এটা বোঝা গেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালবাসা, আবেগ আর আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তে ক্ষোভের বহির্প্রকাশেও। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি ক্রিকেটারদের বলেছেন, তোমরা ভাল খেলেছ, আমরা অবশ্যই একদিন বিশ্বকাপ জিতব। প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি দেশের ১৬ কোটি মানুষের। কারণ দেশবাসী ক্রিকেট নিয়ে গর্বিত, ক্রিকেট দল নিয়ে গর্বিত। ক্রিকেট নিয়ে যত ষড়যন্ত্রই হোক দেশের মানুষ সব সময় ক্রিকেটের পাশে থাকবে।
×