ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেট্রোলবোমায় দগ্ধ

ট্রাক হেলপার সুমনের চিকিৎসা অর্থাভাবে বন্ধের পথে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২১ মার্চ ২০১৫

ট্রাক হেলপার সুমনের চিকিৎসা অর্থাভাবে বন্ধের পথে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা, ময়মনসিংহ, ২০ মার্চ ॥ ‘যারা আমার পোলার সইল (শরীর) পুড়েছে আল্লাহ যেন তাগর বিচার হরেন, কি দোষ করছিল আমার পোলায়?’ বিছানায় শোয়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ ট্রাক হেলপার সুমনের মা সমলা আক্তার এভাবেই আহাজারি করেন। ৪ মার্চ বুধবার ভালুকার কৈয়াদী গ্রাম থেকে লাকড়ি বোঝাই করে যাওয়ার পথে ভোর রাতে মানিকগঞ্জের গোলরা নামক স্থানে ট্রাকের সামনে দুর্বৃত্তরা পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারলে চালক উথুরা গ্রামের ইকবাল ও কৈয়াদি গ্রামের হেলপার সুমন অগ্নিদগ্ধ হন। পেট্রোলবোমায় দগ্ধ ইকবাল ও সুমনের বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকার ভ্যানচালক শওকত হোসেনের (ছক্কার) একমাত্র ছেলে সুমন মশারির নিচে দুই হাত ও মুখম-ল দগ্ধ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। এক সপ্তাহ চিকিৎসার পর ১৪ মার্চ ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট থেকে তাকে ছুটি দেয়ার পর পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। সুমন জানান, ৪ মার্চ বুধবার ভালুকা উপজেলার কৈয়াদী গ্রাম থেকে লাকড়ি বোঝাই করে মানিকগঞ্জ যাওয়ার পথে ভোর রাতে গোলরা নামক স্থানে ট্রাকের সামনে দুর্বৃত্তরা পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে। এ সময় তারা ট্রাকের জানালা দিয়ে জ্বলন্ত শরীর নিয়ে লাফিয়ে পড়লে ট্রাকটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় অপর একটি পিকআপের ড্রাইভার তাদেরকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরদিন তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ছেলে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হওয়ার খবর দেখতে পেয়ে বাবা-মা ছুটে যান ঢাকা মেডিক্যালে। সেখানে গিয়ে ছেলেকে খুঁজে পান দুই হাত ও মুখম-ল দগ্ধ অবস্থায়। সরকারীভাবে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সুমনের মা সমলা আকতার জানান, সরকারীভাবে দেয়া ১০ হাজার টাকা, ট্রাক মালিকের পক্ষ থেকে ৩ হাজার টাকা তাদের দেয়া হয়। এছাড়াও কোন এক সংগঠনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল, যার প্রায় সব টাকাই ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। ড্রেসিং পরিবর্তন না করলে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে সুমন। তার চিৎকারে সবাই অস্থির হয়ে যাই। হাতের টাকা ফুরিয়ে এসেছে, স্বামী-স্ত্রী এক ছেলে এক মেয়ে বৃদ্ধা শাশুড়ীকে নিয়ে শওকতের পাঁচ জনের সংসারে ছেলে সুমনই ছিল একমাত্র অবলম্বন। সমলা তার খালাতো ভাইয়ের জমিতে একটি ঘর তুলে বসবাস করে আসছেন। স্বামী ভ্যান চালিয়ে যা পেতো তাতে সংসার চলতো না। ছেলের দেয়া টাকা ও স্বামীর সামান্য রোজগারে তাদের দিন কোনমতো চলে যেত। এদিকে ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তার বাবা ভ্যান গাড়ি চালাতে পারে না। এখন তারা খাবার যোগাবে না ছেলের ওষুধ কিনবে এ নিয়ে দিশেহারা মা সমলার চোখে অন্ধকার দেখছেন। কতদিনে সুস্থ হবে, পুড়ে যাওয়া হাতে কোনদিন কাজ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পরিবারের।
×