ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিয়োগ দেয়া হচ্ছে গোপন তথ্য সংগ্রহকারী

হাসপাতালে রোগীর হয়রানি বন্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২১ মার্চ ২০১৫

হাসপাতালে রোগীর হয়রানি বন্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা

নিখিল মানখিন ॥ সরকারী হাসপাতালে রোগী হয়রানি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। প্রতিটি সরকারী হাসপাতালে গোপন তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে রাজধানীর কিছু হাসপাতালে এ নতুন কৌশল বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে তা বাস্তবায়ন করা হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে অভিযুক্তদের তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তির আওতায় আনা হবে। পর্যাপ্ত জনবল ও মেডিক্যাল উপকরণ সরবরাহ থাকার পরও অনেক সরকারী হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় দুর্ভোগের শিকার হন রোগী ও তাদের অভিভাবকরা। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মোঃ নুরুল হক জনকণ্ঠকে জানান, চিকিৎসা প্রদানে কোন ধরনের অজুহাত মেনে নেয়া হবে না। সব হাসপাতালে সকল প্রকার রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে। কিন্তু দেরি না করে সংশ্লিষ্ট রোগীকে অন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রেফার করতে হবে। ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতায় পড়ে কোন মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যু মেনে নেয়া হবে না। রোগীর স্বাভাবিক ও উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানে স্বাস্থ্য অধিদফতর সজাগ রয়েছে বলে জানান মহাপরিচালক। অভিযোগ উঠেছে, সরকারী হাসপাতালে রোগী হয়রানির ঘটনা ঘটার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অথচ পর্যাপ্ত জনবল ও মেডিক্যাল উপকরণ সরবরাহ দিয়ে আসছে সরকার। ভর্তি প্রক্রিয়াসহ শয্যা পর্যন্ত যেতেই কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রেও এ ধরনের আচরণ লক্ষ্য করা যায়। আর শয্যায় নিয়ে যাওয়ার পরও চিকিৎসকের অপেক্ষায় থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এভাবে কাটে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা। ততক্ষণে রোগীর অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় অনেক রোগী মৃত্যুর কোলে পর্যন্ত ঢলে পড়েন। অথচ সরকারী নির্দেশে বলা হয়েছে, মুুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে কোন অজুহাত চলবে না। ভর্তি প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণে মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যু মেনে নেয়া যাবে না। এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত মিরপুরবাসী সাখাওয়াত আলী (৪৫)। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় শেরে বাংলা নগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। কয়েক ঘণ্টা পর জরুরী বিভাগের কাজ শেষে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সিট খালি নেই। ফ্লোরে জায়গা মেলে তাঁর। এতে কোন কষ্ট নেই রোগী ও স্বজনদের। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৩টায় ভর্তি হওয়া ওই রোগীকে দেখতে কোন চিকিৎসক যাননি। অসময়ে ভর্তি হওয়ায় এমন ঘটনা বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে রোগীর শারীরিক অবস্থার অনেক অবনতি ঘটে। রাত ৯টায় দেখা পাওয়া এক চিকিৎসক রোগীর বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। রাগে-ক্ষোভে রোগীকে বেসরকারী হাসপাতালে স্থানান্তর করেন স্বজনরা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন মোহাম্মদপুর বাবর রোডের মোঃ জব্বার (৩৫)। দীর্ঘদিন ধরে লিভার সমস্যায় ভুগছেন তিনি। জরুরী বিভাগ থেকে ওয়ার্ডের সিট পর্যন্ত পৌঁছতে তাঁকে বাড়তি টাকা প্রদানসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। সিটে ওঠার পর শুরু হয় নানা দুর্ভোগ। ভর্তি হওয়ার পর ৬ ল্যাব পরীক্ষাসহ কিছু ওষুধ লিখে গেলেন এক চিকিৎসক। ল্যাব পরীক্ষা করাতে গিয়ে স্বজনরা পড়েন নানা বিড়ম্বনায়। বাড়তি টাকা না দিলে সিরিয়াল আসে না। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালের ভেতরেই পরীক্ষাগুলো করাতে হয়। ছয়টি টেস্ট করাতে আড়াই দিন চলে গেল। তারপর শুরু হয় পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায়। আরও দু’দিন চলে যায়। এভাবে চারদিন ধরে রোগীর চিকিৎসা চলে চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা ও রোগীর শারীরিক উপসর্গের ভিত্তিতে। রিপোর্ট পাওয়ার পর পাল্টে যায় চিকিৎসা ও ওষুধের তালিকা। ততক্ষণে রোগীর শারীরিক অবস্থার অনেক অবনতি ঘটে। সম্প্রতি মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হলে উত্তর বাড্ডার কাজল মিয়াকে (৪১) নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচের দু’টি হাড় ভেঙে যায়। সকাল দশটায় তাঁকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি হওয়ার পরও সোয়া ঘণ্টা রাখা হয় জরুরী বিভাগের বিছানায়। ওই সময় রোগীর কোন চিকিৎসা হয়নি। জরুরী বিভাগে ট্রলিতে শুইয়ে রেখেই এক্স-রে করানোর পরামর্শ দেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। রোগীর লোকজন শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। দেড় ঘণ্টা পর সম্পন্ন হয় এক্স-রে। তারপর রোগীকে রক্ত দিতে হবে বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসক। রক্ত খুঁজতে গিয়ে আরও দেড় ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে যায়। রোগীশয্যা নিয়ে বাণিজ্যের অংশ হিসেবেই দরকষাকষি করার জন্য জরুরী বিভাগের ট্রলিতে রাখা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে বিনা চিকিৎসায় পার হয়ে যায় তিন ঘণ্টা। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন রোগী। এবার শুরু হয় সার্জারির জন্য অপেক্ষার পালা। অপারেশন থিয়েটারের সামনে অপেক্ষায় কেটে যায় প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা। সিরিয়াল আসলেও এনেস্থেসিয়ানের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
×