ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার

ব্যাংক ঋণে ১০ শতাংশ সুদ মওকুফের সুবিধা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ মার্চ ২০১৫

ব্যাংক ঋণে ১০ শতাংশ সুদ মওকুফের সুবিধা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

রহিম শেখ ॥ গত দুই মাসব্যপী বিএনপি জোটের টানা অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা ও নাশকতায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আর্থিক সুবিধা চেয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতি মোকাবেলায় ঋণের সুদ মওকুফ, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা, সুদের হার কমানোর সুপারিশসহ একাধিক দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। এরই প্রেক্ষিতে ব্যাংকের ঋণ আদায় ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে ভাল ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী ভাল গ্রাহকদের জন্য ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আদায়যোগ্য সুদ বা মুনাফার ১০ শতাংশ মওকুফ (রিবেট) সুবিধা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সত্বরই ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ছোট-বড় উদ্যোক্তা ও এসএমই ঋণের গ্রাহকদের জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র। জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিভিন্ন খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তৈরি পোশাক খাত। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবহন, পোলট্রি, হিমায়িত পণ্য, আবাসন, প্লাস্টিক এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসাও। ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণে সম্প্রতি দুটি কমিটি করেছেন পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে ব্যাংক ট্যাক্স বিষয়ক একটি উপকমিটি রফতানি খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যে ধরনের সুবিধা দেয়া দরকার সে বিষয়ে একটি সুপারিশ তৈরি করেছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) থেকেও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা তাদের ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে একাধিক আবেদন করছেন। এসব আবেদনে আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় ঋণের সুদ মওকুফ, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা, সুদের হার কমানোর সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এরই প্রেক্ষিতে আর্থিক ক্ষতি পোষাতে ব্যবসায়ীদের যেহেতু বিশেষ ছাড় দিতে হবে, সে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যবসা খাতের ক্ষতি নিরূপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রফতানি খাত ও ব্যাংকিং খাতের ক্ষতির বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, প্রকৃত ক্ষতি বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তবে ঢালাওভাবে এ সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না। উদ্যোক্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপককে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাংকিং খাতে ৫০০ কোটি বা তার বেশি পরিমাণ ঋণ খেলাপীদের মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়েই ১২ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে খেলাপী ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী জুন পর্যন্ত এই সুবিধা নিতে পারবেন ভুক্তভোগীরা। এর আগের বছরও একই কারণে নামমাত্র ডাউনপেমেন্ট দিয়ে খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়। ওই সময় প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় উদ্যোক্তা এবং এসএমই ঋণের গ্রাহকদের জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সুদ বা মুনাফার ১০ শতাংশ মওকুফ ॥ এবার নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী ভাল গ্রাহকদের জন্য ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আদায়যোগ্য সুদ বা মুনাফার ১০ শতাংশ মওকুফ (রিবেট) সুবিধা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ সুবিধা নিতে হলে আগের তিন বছরের ঋণ পরিশোধ থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের ঋণ আদায় ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্যঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। এসব সুবিধার পাশাপাশি ব্যাংকগুলো নিজস্ব নীতিমালার আলোকেও তাদের গ্রাহকদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে। কিন্তু ভাল ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহিত করার জন্য কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রদান করার নীতিমালা নেই। এ প্রেক্ষিতে, দেশে উন্নত ঋণ সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন অর্থাৎ ভাল ঋণগ্রহীতা তাদের অতিরিক্ত কিছু সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, চলমান ঋণের ক্ষেত্রে ৩ বছর একাধিক্রমে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে ৩য় বছরান্তে ভাল ঋণ গ্রহীতার হিসাবের বিপরীতে উক্ত বছরে আদায়কৃত সুদ বা মুনাফার কমপক্ষে ১০ শতাংশ অব্যাহতি (রিবেট) দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ভাল গ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত থাকলে এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। এদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে বর্ধিত ঋণ সুবিধাও প্রদান করতে হবে। একইভাবে তলবী ও মেয়াদী ঋণ গ্রহীতাদের ক্ষেত্রেও এসব সুবিধা দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলো বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাল ঋণগ্রহীতাদের পুরস্কৃত করে সামাজিকভাবে মর্যাদা সম্পন্ন বিবেচনা করার মাধ্যমে উৎসাহিত করতে হবে। সার্কুলারে ‘ভাল গ্রাহকে’র সংজ্ঞাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। চলমান, তলবী ও মেয়াদী ঋণের গ্রাহকরা পরপর ৩ বছর ভালভাবে ঋণ পরিশোধ করেছেন, যাদের কোনও ঋণ শ্রেণীকৃত করা হয়নি এবং তিন বছরের মধ্যে তাদের সংশ্লিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিরূপমানে শ্রেণীকৃত হয়নি তারা ‘ভাল ঋণগ্রহীতা’ বলে বিবেচিত হবেন। তবে তিন বছর হিসাবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান গ্রাহকের চলতি বছর শেষের লেনদেনের সঙ্গে আগের দুই বছরের লেনদেন বিবেচনায় নিতে হবে। সার্কুলারে ভাল ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা প্রদান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ব্যাংকের ঋণ আদায় ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। এসব সুবিধার পাশাপাশি ব্যাংকগুলো নিজস্ব নীতিমালার আলোকেও তাদের গ্রাহকদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে। কিন্তু ভাল ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহিত করার জন্য কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রদান করার নীতিমালা নেই। এ প্রেক্ষিতে দেশে উন্নত ঋণ সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন তাদের অতিরিক্ত কিছু সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করার প্রয়োজন রয়েছে। তাই ভাল ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করে তাদের প্রণোদনা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
×