ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম কলেজ ও মুহসীন কলেজে পুলিশের অভিযান

চট্টগ্রামে শিবিরের ঘাঁটি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, গ্রেফতার ৮২

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ মার্চ ২০১৫

চট্টগ্রামে শিবিরের ঘাঁটি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, গ্রেফতার ৮২

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে ছাত্র শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ ও সরকারী হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশী অভিযানে আটক হয়েছে এই দুই কলেজের ৮১ শিক্ষার্র্থী, যাদের সকলেই শিবিরকর্মী। আটক অপরজন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা। গত মঙ্গলবার রাতে এবং পরদিন বুধবার কলেজের ছাত্রাবাস ও সংলগ্ন এলাকায় এ অভিযান চলে। এদিকে অস্ত্র উদ্ধারের পর ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষ। সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে অভিযান শুরু করা হয় চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা হলে। এ দুটি ছাত্রাবাসে ছাত্র শিবিরের আধিপত্য রয়েছে। সেখানে অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ থাকতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এ অভিযানে আটক করা হয় ছাত্রশিবিরের ৭২ জন নেতাকর্মীকে। উদ্ধার হয় মোট নয়টি আগ্নেয়াস্ত্র। চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের ছাত্রাবাসা থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি একে-২২ রাইফেল, একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, তিনটি পিস্তল, তিনটি একনলা বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, পাঁচটি রকেট প্লেয়ার ও ১শ’ রাউন্ড গুলি ও কার্তুজ। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবি সংবলিত বড় একটি ব্যানারে মুড়িয়ে রাখা এ অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয় একটি গর্ত থেকে। চট্টগ্রাম কলেজের পর বুধবার সকালে ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত সরকারী হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের ছাত্রাবাসেও অভিযান চালায় পুলিশ। কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ উদ্ধার করে পেট্রোল, বিস্ফোরক দ্রব্য, হাতবোমা তৈরির সরঞ্জাম ও বিভিন্ন ধরনের বেশকিছু ধারালো অস্ত্র। মহসিন কলেজ ছাত্রাবাস থেকে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে এ কলেজ এলাকায় একটি পাহাড়ের গুহা থেকে আটক করা হয় ছাত্র শিবিরের ৮ কর্মীকে। এর মধ্যে ৭ জনই মহসিন কলেজের ছাত্র। বাকি একজন বহিরাগত। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরীতে অবস্থিত চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ ও সরকারী হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ দীর্ঘ সময় ধরে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রশিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সরকার যায়, সরকার আসে, সরকার বদল হয় কিন্তু এ দুটি কলেজ বরাবরই শিবিরের দখলে। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার আমলেও এ দুটি কলেজে ঝুলছে ছাত্রশিবিরের অসংখ্য ব্যানার। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোন ছাত্র সংগঠনের ব্যানার লাগানো এক প্রকার নিষিদ্ধ। চলমান আন্দোলনের নামে চট্টগ্রামে সহিংসতা ও বোমাবাজির ঘটনায় সম্পৃক্তদের একটি বিরাট অংশ চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে আশ্রয় পেয়ে থাকে এমনই তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। কলেজ দুটোর ছাত্রাবাসে আশ্রয় পেয়ে থাকে শিবিরের সন্ত্রাসীরা। এ তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মঙ্গলবার রাত থেকে অভিযান শুরু করে। বুধবার বিকেল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহসিন কলেজ অভ্যন্তরের বিভিন্ন পাহাড় ও জঙ্গলময় স্থানে তল্লাশি চালাচ্ছিল। সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল সকাল ১০টার দিকে আসেন সরকারী হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে সংঘটিত বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় জড়িতরা এ দুই কলেজে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে। একে-২২ রাইফেল সাধারণত সেনাবাহিনী তাদের প্রশিক্ষণ কাজে ব্যবহার করে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশ্রয়-প্রশ্রয়ের নেপথ্যে কোন শিক্ষকও জড়িত থাকতে পারেন এমন তথ্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সরকারী হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ থেকে আটক ৯ জনের মধ্যে যে ৮ জনের নাম জানা গেছে তারা হলে নাজমুল সাকিব, জসিম উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, মীর শাহরিয়ার শাহাদাত, মোঃ ইসমাইল, মোঃ শামসুদ্দিন, মোঃ সারোয়ার ও মোঃ ফরহাদ। এর মধ্যে প্রথম ৭ জনই মহসিন কলেজের ছাত্র। আর ফরহাদ নগরীর হাজেরাতুজ ডিগ্রী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। এদের আটক করা হয় পাহাড়ের একটি গুহা থেকে। অভিযান চলাকালে তারা সেখানে লুকিয়েছিল। প্রায় একই সময়ে মহসিন কলেজ সংলগ্ন জামালখান সড়কে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কার্যালয়েও অভিযান চালায় পুলিশ। কার্যালয়টি তালাবদ্ধ ছিল। পুলিশ তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আটক করে সংগঠনটির বায়তুল মাল সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদকে (৬০)। সেখানে পাওয়া যায় জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন বই ও কাগজপত্র। মহসিন কলেজে পরিচালিত অভিযানে বিস্ফোরক ও ধারালো অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয় কলেজের বিএনসিসি কার্যালয়ের সামনে একটি নালা থেকে। চটের বস্তার মধ্যে রাখা ছিল কয়েকটি কিরিচ, বিস্ফোরক দ্রব্য ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম, পেরেক, বিয়ারিং, বিস্ফোরক দ্রব্য ও পেট্রোল। এছাড়া হ্যান্ডগ্লাভস ও হেলমেটও উদ্ধার হয় মহসিন কলেজের পাহাড়ি এলাকা থেকে। বোমা তৈরির সময় কারিগররা এগুলো ব্যবহার করত বলে ধারণা করছে পুলিশ। চট্টগ্রাম কলেজের তদন্ত কমিটি ॥ কলেজের দুটি ছাত্রাবাস থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষ।
×