ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৯ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিল;###;১ ও ২ এপ্রিল বাছাই;###;প্রত্যাহার শেষ ৯ এপ্রিল

ঢাকা উত্তর দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ॥ ভোট ২৮ এপ্রিল

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৯ মার্চ ২০১৫

ঢাকা উত্তর দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ॥ ভোট ২৮ এপ্রিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার। এ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীদের ২৯ মার্চ রবিবারের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবর নিজ নিজ মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ১ ও ২ এপ্রিল বুধ ও বৃহস্পতিবার। এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ধরা হয়েছে ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। বুধবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ ইসির সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিন সিটিতে একই দিনে নির্বাচনের তারিখ রেখে তফসিল ঘোষণা করেন। এর আগে তিন সিটিতে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে কমিশনের অন্য সদস্য ও সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন। নির্বাচন কমিশন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ এবং উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকা জ্যেষ্ঠ নির্বাচনী কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, আগ্রহী প্রার্থীদের আইনানুগভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। কারণ সামান্য ভুল-ত্রুটির কারণে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। তবে বাছাইয়ের পর যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। এজন্য একটি আপীল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য আপীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আপীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রার্থীরা আপীলের জন্য তিনদিন ও শুনানির জন্য তিনদিন সময় পাবেন। তিনি বলেন, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেয়ার সুবিধার্থে ওইদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের আগে কোন প্রার্থী নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রচার চালাতে পারবে না। ইতোমধ্যে যেসব প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন, ঢাকা শহরের যে সব প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের জন্য বিলবোর্ড টানিয়েছেন তাদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দায়িত্বে বিলবোর্ড নামিয়ে ফেলতে হবে। এ আদেশের পর যারা বিলবোর্ড নামাবে না তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে সর্বশেষ অভিযুক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়। তখন শামসুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিয়ে ঢাকা সিটির নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়। ২০১১ সালের ৩০ নবেম্বর ঢাকা সিটি উত্তর ও দক্ষিণ দু’ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ করার আগে সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান কমিশন এর আগে ২০১২ সালে একবার ঢাকা সিটির নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করলেও তা আইনী জটিলতায় আটকে যায়। তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ২০১২ সালে তফসিল ঘোষণার যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল তা বাতিল বলে গণ্য হবে। নির্বাচনের জন্য নতুন করে নির্বাচনের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে জানানো হয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ হতে মনোনয়নপত্র ফরম সংগ্রহ করতে হবে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় সাধারণ ওয়ার্ডভিত্তিক ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি ৫শ’ টাকার চালান বা পে-অর্ডার জমা দিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। আগ্রহী প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দাখিলের পূর্বে যে কোন তফসিলী ব্যাংকে একটি নতুন হিসাব নম্বর খুলতে হবে। যার নম্বর ব্যাংক ও শাখার নাম মনোনয়নপত্রে উল্লেখ করতে হবে। প্রার্থী বা তার প্রস্তাবক বা তার সমর্থক রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামান দাখিল করতে হবে। আইনের বিধান অনুসারে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোন প্রকার মিছিল বা শো ডাউন করা যাবে না। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রত্যেক মেয়র প্রার্থীকে বিধি অনুযায়ী জামানত হিসেবে অনধিক ৫ লাখ ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ২০ হাজার টাকা, ৫ হতে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা, ১০ লাখ হতে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত এলাকার জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং ২০ লাখের উর্ধে ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য প্রার্থীকে ১ লাখ জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ড এলাকার জন্য ১০ হাজার টাকা, ১৫ থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের জন্য ২০ হাজার টাকা, ৩০ হতে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং তার উর্ধে ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ড এলাকার জন্য ৫০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে। তবে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে মনোনয়নে প্রত্যেক প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তবে কোন প্রার্থীর অনুকূলে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করা হলে একাধিক জামানতের প্রয়োজন হবে না। কমিশন জানিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে দুজন মেয়র ও ৯৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কমিশনার ও ৩১টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে কমিশনার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ৩৬টি। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২টি। উত্তরের মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৭১ জন ও মহিলা ভোটার ১১ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ জন। নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৭টি। আর ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫ হাজার ৮২৮টি। তবে এ সংখ্যার আর বাড়তে পারে। এদিকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে একটি মেয়র পদসহ মোট ৫৭টি ওয়ার্ডে কমিশনার পদে এবং ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে কমিশনার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সিটি কর্পোরেশনের মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ৭০। আর মহিলা ভোটার ৮ লাখ ৬১ হাজার ২৯৩। এ সিটিতে নির্বাচনের জন্য সম্ভব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৭৩টি। আর ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৯টি। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মেয়র প্রার্থীসহ ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড, সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ২২ হাজার ৮৯২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৩ ও মহিলা ভোটার ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৯। ভোট গ্রহণের জন্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫০টি। এছাড়া ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০টি। গত ১৭ জুন ২০১০ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনের মোট ৩২০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। এর মধ্যে মেয়র পদে ০৮ জন। সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৫৯ জন। সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫৩ জন। সর্বশেষ ভোটার সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৫ জন। তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রার্থীদের মনোনয়নে যাতে কোন প্রকার ভুলভ্রান্তি না হয় সেজন্য এবারে আলাদা গাইডবুক তৈরি করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রত্যেক প্রার্থীকে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচনে ভোটারদের যাতে কোন কষ্ট করতে না হয় সেজন্য একটি নির্দিষ্ট নম্বরের এসএমএস দিলেও ভোটারের কেন্দ্র ও ভোটার নম্বর সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া যেসব ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য কমিশনের আবেদন করেছেন তফসিল ঘোষণার পর নতুন কারও আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হরতাল অবরোধের ওপর কমিশনের যেহেতু কোন হাত নেই সে কারণে ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যারা নাশকতা করছে তারা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য না। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হলে নির্বাচনে কোন সমস্যা থাকবে না। নির্বাচনে চোরাগোপ্তার হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
×