ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে

এক বছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৮ মার্চ ২০১৫

এক বছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৫ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৪ সালে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ অনেক বেড়েছে। এ সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। তবে এই বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেকের বেশি খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আলোচ্য বছরে এ ঋণের বিপরীতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানা গেছে। গত বছরে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ভাল ব্যবসা করতে পারেনি। ভাল ব্যবসা না করতে পারলে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। এ কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। তবে এ বছরে ঋণের প্রবৃদ্ধির যে ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ভাল বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদায়ী বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের লাগাম বেঁধে দেয়। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের মুখে এ খাতে ঋণ বিতরণে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। মূলত রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়ায় উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করার সাহস পায়নি। বিশেষ করে মধ্যম মানের শিল্প স্থাপনে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) শিল্প ঋণ বিতরণ হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। আগের ২০১৩-১৪ অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩৫৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৮ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলতি মূলধন খাতে ঋণ দিয়েছে ৭৭ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা; যা আগে ছিল ৫৮ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১৮ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। তবে আলোচিত সময়ে ব্যাংকগুলো মেয়াদী ঋণ দিয়েছে ১৮ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা; যেখানে আগের বছর বিতরণ করা হয় ২১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছর ব্যবধানে মেয়াদী ঋণ কমেছে ২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে শিল্প ঋণ খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ হাজার ২৯৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক অর্থবছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা বা ৫৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ সময়ে চলতি মূলধন খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। আগের বছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি মূলধনে খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ৬ মাস শেষে মেয়াদী ঋণের বিপরীতে শ্রেণীকৃত ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে এ খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৬ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, শিল্প ঋণ খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প ঋণ খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণ স্থিতি বেশি হয়েছে ৪১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণের বিপরীতে অর্থ আদায় হয়েছে ৮১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। আগের বছর এই আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণ আদায় বেড়েছে ৭ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, শিল্পখাতগুলো বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছা করলেও ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে বাড়ছে খেলাপি অর্থের পরিমাণ। আবার শিল্প কলকারখানাগুলোতে চাহিদামতো বিদ্যুত, গ্যাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকায় এ তিন খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়েও তা পরিশোধ করতে পারছে না। তিনি বলেন, সরকার ও তার ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আন্তরিক হয় তাহলে এ খাত থেকে প্রতি বছর প্রচুর আয় হতে পারে। এক্ষেত্রে এসব খাতের উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে হবে।
×