ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

ট্রাইব্যুনালে উপজেলা পর্যায়ের মামলা আসতে শুরু করেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ মার্চ ২০১৫

ট্রাইব্যুনালে উপজেলা পর্যায়ের মামলা আসতে শুরু করেছে

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের তারকাখচিত আসামিদের বিচার শেষে বর্তমানে জেলা উপজেলা পর্যায়ের মামলা আসতে শুরু করেছে। মামলাগুলো এলেও তা আসছে ধীর গতিতে। তদন্ত সংস্থায় যে ৩ হাজার ২২৯ জনের বিরুদ্ধে ৫৮৫টি অভিযোগ পড়েছে তা থেকে যাচাই-বাছাই করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর এ পর্যন্ত ১৭টি মামলার বিচার চললেও রায় হয়েছে ১৬টি মামলার। বর্তমানে দুটি ট্রাইব্যুনালে নয়টি মামলার মধ্যে পাঁচটি মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। অন্যদিকে আরও চারটি মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে তদন্ত সংস্থার ধানম-ির সেফ হোমে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এদিকে তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে সত্বর আরও কিছু নতুন মামলার তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন মামলার মধ্যে কয়েকটি মামলা প্রায় শেষের দিকে। দুটি ট্রাইব্যুনালে যে মামলাগুলো চলছে তার মধ্যে রয়েছে, বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও মোঃ আফসার হোসেন চুটুর, কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর, পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের, নেত্রকোনার মুসলীম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে মামলাগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর তিন রাজাকার সালামতউল্লাহ খান, মৌলভী জাকারিয়া সিকদার ও মোহাম্মদ রশিদ মিয়ার বিএ-এর বিরুদ্ধে ১৮ মার্চ অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও মোঃ আজাহারুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী শামসুদ্দিন আহম্মেদের মামলার পরবর্তী দিন রয়েছে ৩০ মার্চ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও মোঃ আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দীর জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ মার্চ। হবিগঞ্জের দুই সহদর রাজাকার কমান্ডার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য প্রসিকিউশন পক্ষকে ১৬ এপ্রিল দিন দেয়া হয়েছে। জামালপুর জেলার বদর বাহিনীর কমান্ডারসহ ৮ জন রাজাকার আল বদর কমান্ডার আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ আব্দুল বারী, হারুন, মোঃ আবুল হাশেম, এ্যাডভোকেট মোঃ শামসুল হক ও এসএম ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ৩০ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমাদের তদন্ত অব্যাহত থাকবে। আমাদের হাতে যে সব মামলা আছে তা তদন্ত শেষ হলে নতুন করে আরও মামলার তদন্ত শুরু করা হবে। আমরা একের পর এক মামলার তদন্ত করে যাচ্ছি। উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর থেকে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় মোট ৫৮৪টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে আসামি রয়েছে ৩২৩০ জন। এ সমস্ত অভিযোগ থেকেই তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে যাচ্ছে। মামলাগুলো ধীর গতিতে আসছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, যাচাই-বাছাই করেই মামলাটি হাতে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে একটি মামলা হাতে নিতে সাক্ষীসহ নানা ধরনের তথ্য ও উপাত্ত থাকতে হয়। সে কারণেই দেরি হয়ে থাকে। দ্রুত তদন্ত করে মামলা পাঠালে তা অনেকাংশেই অসমাপ্ত থেকে যাবে।
×