ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উল্টো সুর

আলোচনা নয়, আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করাই লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১৮ মার্চ ২০১৫

আলোচনা নয়, আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করাই লক্ষ্য

সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে কখনই শান্তি আলোচনার অংশ করা হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সোমবার এই অঙ্গীকার করে বলেছেন, তারা আসাদের শাসনের অবসান ঘটাতে সবরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি রবিবার এক সাক্ষাতকারে দৃশ্যত প্রস্তাব করেন যে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে শেষ পর্যন্ত আসাদ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেন সাকি কেরির এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি এই প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার জন্য আসাদ সরকারের প্রতিনিধিত্বে প্রয়োজন সর্বদাই রয়েছে। স্বয়ং আসাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি এ কথা বোঝাতে চাননি। এটি কখনই হবে না।’ খবর এএফপি ও গার্ডিয়ানের। এদিকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তাঁর সিরীয় সঙ্কট সমাধানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করা উচিত বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিরীয় প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যত নিয়ে কোন আলোচনার দায়িত্ব সিরীয় জনগণের এবং বাইরে থেকে আসা সবরকম ঘোষণায় আমরা চিন্তিত নই। আবার জন কেরি নিজে তার বক্তব্যের জন্য মার্কিন মিত্রদের ‘বিচ্ছিন্ন’ করার জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। কেরির ওই মন্তব্যে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দৃঢ়সংকল্প উপসাগরীয় দেশগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে আতঙ্কের ছায়াপাত হয় এবং পাশ্চাত্যের সমর্থকদের মধ্যে আরও বলিষ্ঠ মার্কিন নীতির অভাবে হতামা ব্যক্ত করা হয়। ফ্রান্স ও তুরস্ক গুরুত্বারোপ করে যে, আসাদ আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের অংশ হতে পারেন না। ব্রিটেনের অবস্থানও অভিন্ন। সাকি জোর দেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে লড়াইরত মধ্যপন্থী বিরোধী পক্ষের আশা-আকাক্সক্ষার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ‘সিরিয়ায় আসাদের কোন ভবিষ্যত নেই। আমরা সেখানে তার শাসনে অবসান ঘটাতে সম্ভব সবরকম পদক্ষেপ নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, শান্তি আলোচনা বিরোধী পক্ষ এবং দামেস্ক সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে হতে হবে। সপ্তাহান্তে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্রে গর্ব করে বলা হয়, কেরির মন্তব্যে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসাদের বৈধ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। পত্রিকায় আভাস দেয়া হয় যে, এতে আগামী মাসে সিরিয়ায় সঙ্কট প্রশ্নে রাশিয়া আয়োজিত আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের পথ সুগম হবে। এ ব্যাপারে মুখপাত্র সাকি বলেন, মস্কো আলোচনায় এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটনকে আমন্ত্রণ জানান হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসানোর জেনেভা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যে কোন প্রচেষ্টার’ প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। তবে সেরকম কোন ফলাফল আসবে কিনা সেটা অনিশ্চিত। এদিকে ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্টফেবিয়াস শান্তি আলোচনায় আসাদের কোন ভূমিকাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন এটা চরমপন্থী গোষ্ঠীর প্রতি কলঙ্কজনক উপহার। ফেবিয়াস বলেন, ‘অন্য যে কোন সমাধান যা আসাদকে ক্ষমতাসীন রাখবে তা হবে দায়েশের (আইএসের আরবী নাম) প্রতি সম্পূর্ণভাবে কলঙ্কজনক বিশাল উপহার।’ লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয়দানকারী তুরস্ক বলেছে, আসাদ সরকারই যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুযোগলুর উদ্ধৃতি দিয়ে আনাতোলিয়া বার্তা সংস্থা জানায়, ‘আসাদের সঙ্গে আলোচনা করার কি আছে? তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনারা এই সরকারের সঙ্গে কি আলোচনা করবেন যারা দুই লক্ষাধিক লোককে হত্যা এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে?’ কেরির ঘোষণায় বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলোতে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের মিত্র দামেস্কের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে চলতি সপ্তাহে পরমাণু প্রশ্নে আলোচনায় ইরানের সঙ্গে পরিবেশ উন্নত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে আসাদ বার বার তার এই দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন যে, তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। তিনি জেনেভার উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন।
×