ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কোচ মারভান আতাপাত্তু

চাপ সামাল দেয়ার ক্ষমতা রাখে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ মার্চ ২০১৫

চাপ সামাল দেয়ার ক্ষমতা রাখে শ্রীলঙ্কা

কোয়ার্টারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে বললেন লঙ্কান কোচ, সুস্থ অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, প্রধান স্পিনার হেরাথের জন্য অপেক্ষা, চার সেঞ্চুরির অনন্য রেকর্ড গড়া সাঙ্গাকারার ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ জয়সুরিয়া স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপের ঠিক আগে নিউজিল্যান্ডের কাছে দিপক্ষীয় সিরিজের ব্যর্থতায় অনেকেই লঙ্কানদের সম্ভাবনা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তারা হয়ত ভুলে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা বড় আসরের বড় দল। মূল মঞ্চের লড়াইয়ে ঠিকই ঝলসে উঠেছে দ্বীপ দেশটি। টানা তৃতীয় ফাইনালের পথে আর দুটি মাত্র জয় চাই এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসদের। বুধবার প্রথম কোয়ার্টারে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা, যাদের চাপের মধ্যে ভেঙে পড়ার ইতিহাসটা প্রমাণিত। লঙ্কান কোচ মারভান আতাপাত্তুর বক্তব্যে থাকল ‘চাপ’ প্রসঙ্গ। চাপ জয় করে লঙ্কানদের সেরাটা দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে বলেই মনে করেন তিনি। ‘শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের পরিচর্যায় চার বছর ধরে সঙ্গে আছি। অনেক বড় আসরে নকআউট ম্যাচ খেলেছি, যেগুলো আমাদের জেতা উচিত ছিল। অনেক ক্রিকেটারকে দেখলাম নিজের খেলার পর্যায়টাকে উন্নত করতে, দেখলাম দলকে ওপরে নিয়ে যেতে। এবারও আমি এর ব্যতিক্রম দেখছি না। আমার বিশ্বাস, বর্তমানে যাঁরা আছেন তাঁরা সাফল্য বয়ে আনবেন। সবার একক অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাটাও আছে বেশ ভালভাবে। আর সেভাবে সবাই এক সঙ্গে পরিশ্রম করছেন। আমরা অন্য যে কোন দলের চেয়ে বেশি খেলেছি এ ধরনের ম্যাচ। সে কারণে বলা যেতে পারে আমরা এমন পরিস্থিতির সঙ্গে অনেক দিন ধরেই অভ্যস্ত। সবাই জানে কিভাবে চাপের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে হয় এবং কিভাবে সেটার জন্য প্রস্তুত হতে হয়’Ñ বলেন আতাপাত্তু। একাধিক বড় বিশ্বকাপ ও বড় আসরের ফাইনালে খেলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও যোগ করেন, ‘কোয়ার্টারে দক্ষিণ আফ্রিকা শক্ত প্রতিপক্ষ। ফাইনালে যেতে এখন প্রতিটি ম্যাচেই জিততে হবে। গ্রুপে এক ম্যাচে হারলেও অন্যটিতে সুযোগ থাকে। কিন্তু এবার থেকে কোন সুযোগ নেই। তাই শুধু জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন যখন আসে তখন সবচেয়ে এগিয়ে আমরাই। আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসে ১৫টি বিশ্বকাপ নকআউট ম্যাচে খেলেছি! সুতরাং ছেলেরা অনেক নকআউট ম্যাচে খেলায় অভিজ্ঞ। চাপ সামলে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত ওরা।’ কোয়ার্টারের মরণ লড়াইয়ের আগে শ্রীলঙ্কার জন্য থাকছে ভাল সংবাদও। গোড়ালির চোট থেকে সেরে উঠেছেন অধিনায়ক ও দলের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। আঙ্গুলের চোট কাটিয়ে উঠার অপেক্ষায় বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ উইকেটে জেতা ম্যাচে চোট পান হেরাথ। বাঁহাতের তর্জনী কেটে যায়; চারটি সেলাইও লাগে দলটির মূল স্পিনারের। শুক্রবার তার আঙুলের সেলাই কাটা হয়। তবে দলের সঙ্গে এখনও অনুশীলনে বল করেননি হেরাথ। ম্যানেজার মাইকেল ডি জয়সা তার ফিটনেস নিয়ে আশাবাদী। ‘হেরাথ আমাদের প্রধান স্পিনার। সেরে উঠার জন্য আমরা তাকে বাড়তি একটা দিন সময় দিচ্ছি। আশা করছি সময় মতোই ফিরতে পারবে ও।’ বিশ্বকাপে একেবারে ঠিক সময়ে স্বরূপে জ্বলে উঠেছে লঙ্কানরা। ছয় ম্যাচের চারটি জিতে পুল ‘এ’ থেকে কোয়ার্টার নিশ্চিতের পথে বড় অবদান ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকারতেœ দিলশানদের। এমনকি ইনজুরি-অপারেশনে প্রায় পাঁচ মাস পর ফিরেও মন্দ করছেন না মূল পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। বিশ্বকাপের শুরুটা অবশ্য ভাল ছিল না সুপার হিরো সাঙ্গাকারার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে ৩৯ রান করেন তিনি। পরের ম্যাচে দুর্বল আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেন ৭ রান। এরপরই ব্যাট হাতে ঝলসে উঠেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটিং সেনানী। ওই দুই ম্যাচের পর আর পেছন ফিরে তাকাননি। পরের চারটি ম্যাচে ধ্রুপদী ব্যাটিং উপহার দিয়ে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান সাঙ্গাকারা। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হাঁকান টানা চারটি সেঞ্চুরি! সাঙ্গাকারার এই কীর্তি সামনে থেকে দেখে মুগ্ধ সাবেক কিংবদন্তি সনাথ জয়সুরিয়া। বর্তমানে যিনি দলটির প্রধান নির্বাচকও। ‘ওকে টানা চারটি সেঞ্চুরি করতে দেখা ক্রিকেটের অন্যতম দুর্লভ ঘটনা।’ পুল পর্বের ৬ ম্যাচে ১২৪ গড়ে ৪৯৬ রান করে এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাঙ্গাকারা। কোয়ার্টার, সেমিতেও সাঙ্গা রানের ফল্গুধারা বইয়ে দেবেন বলে আশাবাদী ১৯৯৬ সালে দেশটির একমাত্র সেই বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জয়সুরিয়া।
×