ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ৩০ লাখ দলিত শিশু

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ মার্চ ২০১৫

শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ৩০ লাখ দলিত শিশু

আনোয়ার রোজেন ॥ ‘আমার দাদা ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ থেকে ঢাকা এসেছিলেন ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করতে। আমার পিতাও একই কাজ করতেন। তারপর আমিও তাকে অনুসরণ করি। আমি জানি, ভবিষ্যতে বড় হয়ে আমার সন্তানরাও ওই একই কাজ করবে। লেখাপড়া করে জীবন বদলানোর সুযোগ তারা পাবে না। কারণ, আমাদেরকে তো মানুষ বলেই গণ্য করা হয় না’-৭ বছর বয়সী মেয়ে বিনতির দিকে তাকিয়ে নিজের ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন মা মিনতি রানী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) কাজ করেন তিনি। দেশে মিনতির মতো কমপক্ষে ১১০ জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন পেশার প্রায় ৭০ লাখ দলিত মানুষের বসবাস। আর মিনতির শিশু সন্তানের মতো বিপুল এই জনগোষ্ঠীর শিশুরাও বেড়ে ওঠছে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে। দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তির হার ৯৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে মেয়ে শিশুর হারও ঈর্ষণীয়, শতকরা ৫২.৪৮ ভাগ। সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে গ্রামে-গঞ্জে, হাওরে-পাহাড়ে বেড়ে ওঠা দরিদ্র পরিবারের শিশুরাও আজ বিদ্যালয়মুখী। তবে শিক্ষা সাগরের এই ঢেউ সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং নানামুখী বৈষম্যের শিকার আরতিদের আজও স্পর্শ করতে পারেনি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু (৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী)। এ হিসেবে দলিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। অথচ প্রাথমিক শিক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ এতই নগণ্য যে তার কোন হিসাবই নেই। বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা ব্যবস্থা থাকলেও দলিতদের জন্য তা নেই। আইনী সুরক্ষার সুযোগ না থাকায় দলিত মেয়েদের মধ্যে বাল্যবিবাহের হারও বেশি। দলিত নারীরা এখনও সরকার ঘোষিত মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে বঞ্চিত। দেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার ২৬ শতাংশ। আর দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে এই হার ৯৬ শতাংশ। তাই একই দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা নামের পরশ পাথরের ছোঁয়া দলিত শিশুদের ভাগ্যে জুটছে না। এমন পরিস্থিতিতে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অঙ্গীকার- আমরা হব তার আদর্শের উত্তরাধিকার’- শীর্ষক প্রতিপাদ্যে আজ দেশজুড়ে উদযাপিত হবে ‘জাতীয় শিশু দিবস’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের ভালবাসতেন। সকল শিশুর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়াই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে সরকার। আর দিবসটি উদযাপনের মধ্য দিয়ে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিশুর শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, তা পূরণে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দলিত কারা ॥ জন্ম ও পেশাগত কারণে বৈষম্য এবং বঞ্চনার শিকার মানুষেরাই ‘দলিত’ নামে পরিচিত। আর ঔপন্যাসিকের ভাষায় আমাদের সমাজের দৃষ্টিতে এরা ‘গরিবের মধ্যে গরিব, ছোটলোকের মধ্যে ছোটলোক’। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে মূলত অবাঙালী ও বাঙালী- এই দুই ধরনের দলিত জনগোষ্ঠী রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলের মাঝামাঝি সময়ে (১৮৩৮-১৮৫০) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মী, চা-বাগানের শ্রমিক, জঙ্গল কাটা, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি কাজের জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, মাদ্রাজ, উড়িষ্যাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষদের তৎকালীন পূর্ববঙ্গে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : মুচি, ডোম, বাল্মিকী, রবিদাস, ডোমার, ডালু, মালা, হেলা, বাঁশফোর, পাহান, লালবেগী, সাচ্চারি প্রভৃতি। এরা সাধারণভাবে ‘হরিজন’ নামে পরিচিত। ভূমিহীন ও নিজস্ব বসতভিটাহীন এসব মানুষ বংশানুক্রমে সরকার প্রদত্ত খাসজমি, বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন প্রদত্ত জমি ও রেলস্টেশনে বসবাস করছে। আর কামার, কুমার, চর্মকার, জেলে, রজদাস, ক্ষৌরকার প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষকে বাঙালী দলিত আখ্যা দেয়া হয়। সমাজে এদেরকে সাধারণভাবে ‘অচ্ছ্যুৎ’ বা ‘অস্পৃশ্য’ মনে করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠী, এমনকি আদিবাসীদের তুলনায়ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা পিছিয়ে রয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে নিরক্ষরতা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও দলিত বিষয়ক গবেষক সায়মা আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, চরম দারিদ্র্য দলিতদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। তাছাড়া সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, মেয়েদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা ও পেশাগত লজ্জাও এজন্য দায়ী। এসব কারণে দলিত পিতা-মাতা শিশুদের স্কুলে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন আগ্রহ বোধ করেন না।’ একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সায়মা আহমেদ জানান, ৫৩ শতাংশ মুচি পরিবারের মাসিক আয় মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আবার দলিত জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ চা-জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। বংশ পরম্পরায় তারা দেশের চা-বাগানগুলোতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছে। তাদের মাসিক আয় সর্বোচ্চ ২,১০০ টাকা। প্রচলিত শ্রম আইনও তাদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। এমনকি ১৯৮২ সাল থেকে চা শিল্পকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর বাইরে রাখা হয়েছে। চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের সরকারী কর্মসূচীতে চাল, ডাল, তেল, আলুর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও শিক্ষা সহায়তার জন্য কোনো বরাদ্দ বা কর্মসূচী নেই। নিজের একাগ্রতায় চা-জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেয়া মোহন রবিদাস জনকণ্ঠকে বলেন, চা-বাগানগুলোতে কলেজ, উচ্চবিদ্যালয় তো নেই-ই, এমনকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাও হাতে গোনা কয়েকটি। ভাষাগত সমস্যার কারণে চা-শ্রমিক সন্তানরা ঠাট্টা-মশকরা আর বৈষম্যের শিকার হয় বলে এদের অধিকাংশই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কারণ কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত আদিবাসীদের তালিকায় চা-জনগোষ্ঠীর উল্লেখ নেই। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা দলিতদের মাসিক আয় ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। তবে নারী-পুরুষ ও কাজের অভিজ্ঞতা ভেদে এখানেও বেতন বৈষম্য রয়েছে। তাছাড়া দলিত নারীরা সরকার ঘোষিত ৬ মাসের পরিবর্তে মাতৃত্বকালীন ছুটি পান মাত্র ১ মাস। দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন ও বেসরকারী সংগঠনে পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত দলিতদের বেতনও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এত স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে শিক্ষা লাভের চিন্তাও তাই অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতো। অন্যদিকে দলিতরা সামাজিকভাবেও বৈষম্যের শিকার। এই একবিংশ শতাব্দীতেও দেশের হোটেল, সেলুন, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দলিতদের ঢুকতে দেয়া হয় না। শুধুমাত্র জন্মগত পরিচয়ের কারণে দলিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষালাভের সুযোগও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক বৈষম্যবিরোধী আইন না থাকার কারণেই এমনটি ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। পাশাপাশি দলিতদের প্রতি নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকেও দায়ী করছেন তারা। দেশে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা কত- তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। এই পরিসংখ্যান না থাকাই তাদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে জাতিগোষ্ঠীর ভিত্তিতে দলিতদের বিষয়ে পৃথক কোন তথ্যের উল্লেখ নেই। সমাজসেবা অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ৬৩ লাখ। আর ২০১৪ সালে আইন কমিশন প্রস্তাবিত বৈষম্য বিলোপ আইনের খসড়ায় এ সংখ্যা ৭০ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতরের বিভাজনভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী, দেশে দলিত ৪০ লাখ, বেদে ৮ লাখ ও হরিজনদের সংখ্যা ১৫ লাখ। তবে রাজধানী ঢাকায় দলিত সম্প্রদায়ের ঠিক কত সংখ্যক মানুষ বসবাস করেন তারও কোন সঠিক হিসাব নেই। তবে দলিতদের অধিকার বিষয়ে কাজ করে এমন একাধিক সংগঠনের মতে, এ সংখ্যা ৩৫ থেকে ৫০ হাজার। রাজধানীর গণকটুলী, নাজিরাবাজার, ওয়ারী, মিরপুর বাউনিয়া বাঁধ এলাকা, দয়াগঞ্জ, ধলপুর, সূত্রাপুর, আগারগাঁও ও গাবতলীর বিভিন্ন কলোনিতে দলিতরা গাদাগাদি করে বসবাস করছে। এর মধ্যে গণকটুলী ও নাজিরাবাজার কলোনিতে বসবাসকারী দলিতদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রাজধানীতে বাস করলেও এসব দলিত পরিবার শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন নয়। শনিবার গণকটুলীতে গিয়ে দেখা যায়, কলোনির খুব কাছেই অন্তত তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে গণকটুলী হরিজন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিশেষভাবে দলিত শিশুদের শিক্ষার জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নামে হরিজন হলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ের। ১৮০ জন শিশু শিক্ষার্থীর মধ্যে হাতে গোনা দুই একজন দলিত সম্প্রদায়ের বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। পাশের গণকটুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি বেসরকারি বিদ্যালয়েও দলিত শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা নামমাত্র। অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে নাজিরাবাজার কলোনির প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। ওই দুই কলোনির একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবজ্ঞা, লজ্জা ও মানসিক পীড়নের কারণে কলোনি সংলগ্ন স্কুলগুলোতে শিশুদের পাঠাতে মা-বাবারা ভয় পান। তবে অনেক সচেতন অভিভাবক সতর্কতার সঙ্গে সন্তানদের একটু দূরের স্কুলে পাঠান বলেও জানা গেছে। তবে এ সংখ্যাও খুব বেশি নয়। আবার শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে বেড়ে ওঠা এসব কলোনির বেকার যুবকেরা মাদকাসক্ত ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। দলিত মেয়ে শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। অশিক্ষার কারণে দলিতদের নিজের মধ্যেও জাত-পাতের প্রভেদ মারাত্মক। ভিন্ন জাতের দলিত ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। তেমনটি হলে নিজস্ব পঞ্চায়েতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় কেবল মেয়েটির জন্য। অশিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে অধিকাংশ দলিত মেয়ে বাল্য বিয়ে ও যৌতুক প্রথার শিকার। নিবন্ধনের আইনী বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে এসব বিয়ে হয় নিজেদের প্রথা মেনে। ফলে স্বামীর শত অত্যাচার-নির্যাতনের কোন আইনী প্রতিকার মেলে না। আবার পুরুষেরা একাধিক বিয়ে করতে পারলেও মেয়েদের বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামী মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়েরও কোন সুযোগ নেই। তবে এসব নির্যাতিত নারীর অধিকারের কথা বলার মতো সামাজিক সংগঠনের সংখ্যাও অনেক কম। গত ৫ বছরে বিশেষভাবে দলিত নারীর অধিকারের কথা বলার জন্য দলিত এবং বঞ্চিত নারী ফেডারেশন ও দলিত নারী ফোরাম নামে দুটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। দলিত নারী ফোরামের সভাপতি মণি রানী দাস বলেন, পুরনো প্রথা, বিশ্বাস ও দলিত পুরুষদের আধিপত্যবাদী মনোভাবের কারণে দলিত নারীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। তাছাড়া দলিত নারীদের অনেকে তাদের অধিকারের কথাই জানেন না। বর্তমান সরকার দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের ৭ জেলায় ‘দলিত, হরিজন ও বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচী’ শীর্ষক কর্মসূচী চালু করা হয়। সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (কার্যক্রম) পারভীন মেহ্তাব জনকণ্ঠকে বলেন, রাজস্ব খাতের আওতায় নেয়া এ কর্মসূচীর শুরুতে মাত্র ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও পরে এর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ অর্থের পরিমাণ ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। বাড়ানো হয়েছে কর্মসূচীর আওতা। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দলিত জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ২১ জেলায় এ কর্মসূচী চালানো হচ্ছে। এ কর্মসূচীর আওতায় দলিতদের আর্থ-সামাজিক প্রশিক্ষণ, দুঃস্থ দলিতদের ভাতা ও দলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি দেয়া হয়। তবে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত দলিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কম। প্রাথমিক স্তরে সারাদেশে উপবৃত্তি (মাসিক ৩০০ টাকা) পাওয়া দলিত শিশুর সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৭৮৫ জন। শিক্ষা, সামাজিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আইন কমিশন গত বছর ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ নামে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আইনটি কার্যকর হলে দলিত শিশুর শিক্ষাসহ বিভিন্ন অধিকার আইনগত ভিত্তি পাবে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, খসড়া আইনটির অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের কাজ এখনও চলছে। তা শেষ হলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
×