স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হঠাৎ পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষা প্রশাসনে। যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে কেন্দ্র নটরডেম কলেজে পরিবর্তনের ঘটনায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অযৌক্তিক এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই তারা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান ও বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষ কেন্দ্র পরিবর্তনের পক্ষে কোন যুক্তি দেখাতে ব্যর্থ। ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির গবর্নিং বডির সভাপতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলেও রহস্যজনক কারণে বোর্ড নীরব। কোন অভিযোগ ছাড়া হঠাৎ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তনের পেছনে বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার তৎপরতাকে দায়ী করেছেন অভিভাবকরা। জানা গেছে, দেশের নামী এ প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্র গত কয়েক বছর ধরেই শান্তিনগরে অবস্থিত হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে নির্ধারিত হয়ে আসছে। কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই প্রতি বছর ভিকারুননিসার ছাত্রীরা সেখানে পরীক্ষা দিচ্ছে। ভিকারুননিসা নূনের ছাত্রীদের বেশিরভাগই আশপাশে বসবাস করায় কেন্দ্র হিসেবেও হাবিবুল্লাহ বাহারকে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।
যেহেতু কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য কখনও কেউ আবেদনও করেনি তাই প্রতি বছরের মতো এবারও হাবিবুল্লাহ বাহারকেই কেন্দ্র হিসেবে জেনে আসছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কিন্তু গেল সপ্তাহে হঠাৎই ঢাকা র্শিক্ষা বোর্ড জানিয়ে দেয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার কেন্দ্র হবে নটরডেম কলেজে। কোন কারণ ছাড়া কেন্দ্র দূরবর্তী স্থানে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ জানাতে থাকেন অভিভাবকরা। ইতোমধ্যেই তারা শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির গবর্নিং বডির সভাপতি মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন অভিভাবকদের মনোভাবের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি জানিয়েছেন, জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডকেও। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন। কিন্তু রবিবার পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ড কোন ব্যবস্থা নেয়টি। বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ দুজনেই সাংবাদিকদের বলেছেন, বিষয়টি তারা সুরাহা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেন হঠাৎ এ পরিবর্তন করতে হলো? এ বিষয়ে যৌক্তিক উত্তর তারা এখন পর্যন্তও দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। রাব্বি নামে এক অভিভাবক বোর্ডের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, বোর্ড কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে। নটরডেম কলেজের সঙ্গে ফলাফলে ভিকারুননিসার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তাই নটরডেম কলেজে কেন্দ্র দিয়ে ভিকারুননিসাকে দুর্বল করার চেষ্টা আছে এখানে। এছাড়া এই হরতাল-অবরোধের মধ্যে অকারণে কেন্দ্র দূরে পাঠিয়ে আমাদের মেয়েদের বিপদে ফেলা হলো।
মেয়েদের পরীক্ষা কেন্দ্র হরতাল-অবরোধের এ নাশকতার মধ্যে দূরবর্তী স্থানে পাঠিয়ে দেয়ায় হতাশ অভিভাবক লাভলী বেগম। তিনি হতাশা প্রকাশ করেই বলছিলেন, ভাই আমাদের প্রায় প্রতিটা পরিবার সন্তানের প্রতিষ্ঠানের আশপাশে বসবাস করি।
মেয়েদের নিয়ে আসা-যাওয়ায় যাতে বিপদ-আপদ না হয় তাই চেয়েছি, যাতে অন্তত রমনা এলাকাতেই কেন্দ্র রাখা হয়। কিন্তু এখন অনেক দূরে দেয়ায় হরতাল-অবরোধের মধ্যে অনেক বিপদে পড়তে হবে। অথচ এ এলাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানই আছে। এমনকি হাবিবুল্লাহ বাহারেও সুযোগ ছিল। আশপাশে হলে আমাদের শ’ শ’ মেয়ে ও তার অভিভাবকের ভাল হয়। এদিকে কলেজের শিক্ষকরা বলেছেন, অভিভাবকরা যেহেতু চাচ্ছেন কেন্দ্র বহাল থাকুক তাই সেভাবেই বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: