ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান-আয়ারল্যান্ড ‘ডু অর ডাই ম্যাচ’ আজ!

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৫ মার্চ ২০১৫

পাকিস্তান-আয়ারল্যান্ড ‘ডু অর ডাই ম্যাচ’ আজ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে? জিতলে কোয়ার্টার, হারলে বিদায় এমন সমীকরণ উতড়েই শেষ আটে টাইগাররা। পুল ‘বি’এ পাকিস্তান আজ প্রায় একই সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড। এ্যাডিলেডের ম্যাচটি কোয়ার্টারের টিকেট পেতে দু’দলের জন্যই ‘ডু অর ডাই’। জিতলে কোয়ার্টার, ... হারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-আরব আমিরাতের মধ্যকার অপর ম্যাচের ফল, নেট রান রেটসহ অনেক সমীকরণ, কাকতালীয় কারণ ছাড়া সেখানে বিদায়ের পাল্লাটাই ভারী। সুতরাং পাক-আইরিশদের সমীকরণটা সহজ ‘করো অথবা মরো!’ পাকিস্তান এলিট ক্লাবের সদস্য, সাবেক চ্যাম্পিয়ন, বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা শক্তি। বিপরীতে আয়ারল্যান্ড আইসিসির সহযোগী দেশ। পাকিদের এমনিতে এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু কথা যখন এবারের আয়োজন নিয়ে, তখন অন্য হিসাবও কষতে হচ্ছে। তুলনায় গেলে ধারাবাহিক আর ভাল ক্রিকেটে খেলে এখনও ‘কোয়ার্টারের রেশ’ ধরে রেখেছে আইরিশরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের সঙ্গে পেরে না উঠলেও, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয় উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের দল। আরব আমিরাতকে ধরাশায়ী করার পর আরেক টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে নাটকীয় জয় তুলে নেয় উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের দল। অন্যদিকে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তান। আসরে টিকে থাকতে পরের প্রতিটি ম্যাচেই জিততে হতো, ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিরা সেই কাজই করে অনায়াসে, গৌরবের সঙ্গে! একে একে ধরাশায়ী করে জিম্বাবুইয়ে, আর আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে! মূলত বোলারদের দাপটে ‘ইউটার্ন’ করে মিসবাহ-উল বাহিনী। দলটির মূল শক্তি যে বোলিং সেটি বুঝতে খুব পেছনে যেতে হবে না। দুর্ধর্ষ প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাত্র ২২২ রানের পুঁজি নিয়েও (বৃষ্টির ফলে দ. আফ্রিকার টার্গেট ২৩২) তুলে নেয় ২৯ রানের জয়! ব্যাট হাতে ও উইকেট পেছনে দুরন্ত পারফর্ম করে সেদিন নায়ক বনে যান প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামা সরফরাজ আহমেদ। তবে ৩টি করে উইকেট নিয়ে ম্যাচের আসল নায়ক তিন পেসার মোহাম্মদ ইরফান, রাহাত আলি ও ওয়াহাব রিয়াজ। আছেন সোহেল খানের মতো প্রতিভাবান ও শহীদ আফ্রিদির মতো ‘সুপার অলরাউন্ডার’। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে আজ নিশ্চিত করেই জীবন বাজি রেখে লড়বেন তারা। তবে ঠিক বিশ্বমঞ্চের মানে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেনি পাকিস্তান। টপ-অর্ডারে এক মিসবাহ উল হক ছাড়া আর কেউই বড় স্কোর গড়তে পারছেন না। শোয়েব মাকসুদ, উমর আকমল, ইউনুস খানদের টিনে টেনশনে দলের থিঙ্কট্যাঙ্ক। ব্যাটিংয়ে আইরিশদের জন্য বড় হুমকি হতে পারেন অধিনায়কই। বিশ্বকাপে আগের পাঁচ ইনিংসে মিসবাহর রান দেখুনÑ ৭৬, ৭, ৭৩, ৬৫ ও ৫৬!! অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হবে, অন্তত চল্লিশোর্ধ বয়সে। ব্যাট হাতে একাই লড়ে চলেছেন পাক সেনাপতি। আগেই ঘোষণা দিয়েছেন আফ্রিদির এটি শেষ বিশ্বকাপ। আসর শেষে ওয়ানডেকে বিদায় জানাচ্ছেন তিনি। সুতরাং আধুনিক ক্রিকেটের আকর্ষণীয় অলরাউন্ডারের কাছ থেকে ভক্তরা আজ ‘ম্যাজিক্যাল’ কিছুই চাইবেন। ২০০৭ বিশ্বকাপে এই আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। সেই ম্যাচে ছিলেন মিসবাহ। সুতরাং এবার আইরিশদের নিয়ে সতর্ক পাকি অধিনায়ক। ‘ম্যাচটিতে গভীর মনোযোগ রয়েছে। যেখানে আমাদের জিততেই হবে। কোনও সন্দেহ নেই আয়ারল্যান্ড বিপজ্জনক দল। কিন্তু আপনি ২০০৭ নিয়ে কথা বলছেন... এটা ২০১৫ সাল। পেছন দিকে নয়, আমরা বরং সামনে তাকাচ্ছি। লক্ষ্য একটাই ভাল খেলে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা। ১৯৯২-এ এখন পর্যন্ত একবারই বিশ্বকাপ জয় করে পাকিস্তান। সেবার এই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডেও শুরুটা ভাল ছিল না ইমরান খানদের। এবারও শুরুটা মন্দ, অতপর ঘুরে দাঁড়ানো। তাহলে ’৯২-এর পুনরাবৃত্তিই ঘটাতে যাচ্ছে তারা? এমন প্রশ্নের জবাবে মিসবাহ আরও যোগ করেন, ‘৯২-র স্মৃতি ধরে আপনি বসে থাকতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ আলাদা গল্প, এখানে আমাদের পারফর্ম করতে হবে।’ অন্যদিকে ‘প্রি-কোয়ার্টার’ বিবেচনা করে অযথা চাপ বাড়াতে চান না আত্মবিশ্বাসী আইরিশ অধিনায়ক। পোর্টারিফল্ড বলেন, ‘এটা শুধুই আরেকটি ম্যাচ। আর সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। ফলাফলের দিক থেকে বিবেচনা করলে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এরপরও অন্য যে কোন ম্যাচের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় এক্ষেত্রেও সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।’ তিনি আরও যোগ করেন সব ম্যাচেই যে সামনে আসবে তারাই প্রতিপক্ষ। আমি মনে করি না ম্যাচ থেকে কি বেরিয়ে আসবে তা আগেভাগেই চিন্তা করা উচিত। এতে করে নিজের ওপরই চাপ বেড়ে যায়। সে কারণে অন্য যে কোন ম্যাচের জন্য যেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি সেভাবেই যদি স্বাভাবিক থেকে প্রস্তুত হতে পারি সেটা দলের জন্য খুব ভাল ব্যাপার হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে পাকিস্তানের বিপক্ষেও জয় সম্ভব। আমরা কেবল স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে চাই। আমাদের হাতে একাধিক বিশ্বমানের ম্যাচ-উইনার পারফর্মার রয়েছে।’ পল স্টারলিং, এড জয়েস, ভ্রাতৃদ্বয় নাথান ও’ কেভিন ও’ব্রায়েন এবং অধিনায়ক নিজে আইরিশদের বড় ভরসা।
×