ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি নির্বাচন নিয়ে নাগরিকদের মধ্যেও আগ্রহ সৃষ্টি

চট্টগ্রামে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণা শুরু ॥ পাড়ায় পাড়ায় প্রভাব

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৪ মার্চ ২০১৫

চট্টগ্রামে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণা শুরু ॥ পাড়ায় পাড়ায় প্রভাব

মহসিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণা শুরু হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরীর প্রতিটি এলাকার মসজিদ এবং পাড়ায় এর প্রভাব দেখা যায়। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা এখনও তৎপর না হলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারের তোড়জোড় এবং মেরুকরণ হতে শুরু করেছে। চলতি মাসে চসিক নির্বাচনের তফসিল এবং জুনের আগে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করায় নির্বাচন কমিশনের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যাওয়ায় নগরীতে যেন নির্বাচনী হাওয়া আসতে শুরু করেছে। গত বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের বয়কটের মুখে ভোটাররা নির্বাচনী আমেজ পাননি। তাই চসিক নির্বাচনের তোড়জোড় এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুতির ঘোষণা দেয়ায় শুধু প্রার্থী নয়, জনসাধারণের মাঝেও সৃষ্টি হয়েছে আগ্রহ। নির্বাচনী প্রস্তুতি পর্ব এবং তফসিল ঘোষণার জন্য কয়েকদিন ধরে ইসির প্রস্তুতির কথা জানালে শুক্রবার জুমার নামাজের পর প্রতিটি পাড়া এবং মহল্লায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেয়ার ব্যাপারে কোন ঘোষণা দেয়নি। তারপরও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বর্তমান কাউন্সিলর এবং সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের জনসংযোগে অনেকটা নির্বাচনের আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে খুব বেশি প্রভাব না পড়লেও মেয়র প্রার্থী নিয়ে আছে ব্যাপক আগ্রহ। সাধারণ ভোটারদের দ্বারস্থ হওয়ার আগে নানাভাবে দলীয় প্রার্থীদের আগাম প্রচার শুরু হয়ে যাওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে সরকারী দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য তিনজনের বেশি প্রার্থী মাঠ পর্যায়ে তৎপর রয়েছেন। তিনবারের নির্বাচিত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য তিনি সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ শেষে আজ শনিবার দেশে ফিরে আসবেন। বিমানবন্দরে তার কর্মী-সমর্থকরা ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অন্যদিকে, দলের আরেক প্রার্থী সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনও মাঠ পর্যায়ে তৎপর রয়েছেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে বক্তব্যের ফাঁকে আগ্রহের কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। আ জ ম নাছিরের কর্মী-সমর্থকরাও নানাভাবে তৎপর রয়েছে। দলের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম নির্বাচনী সমাবেশ না করলেও ওয়ার্ড পর্যায়ে নানাভাবে তৎপর। পোস্টার এবং উন্নয়ন কর্মকা-ের ফিরিস্তি বর্ণনা করে ভোটারদের আকৃষ্ট করার তৎপরতা চলছে। আরেক প্রার্থী সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসিও গত কয়েকদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে নানাভাবে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে গতবার নির্বাচিত এবং বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলমও পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন স্থানে মেয়র হিসেবে কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে জানান দিচ্ছেন সামনের নির্বাচনের কথা। তবে মাঠে নেই বিএনপির অন্য কোন নেতা। ডাঃ শাহাদাতসহ আরও কয়েক বিএনপি নেতা মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হবার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করলেও মাঠে তাদের কোন তৎপরতা নেই। মূলত চলমান আন্দোলনে নানা মামলায় জড়িয়ে যাওয়ায় গা-ঢাকা দিয়েছেন তারা। ফলে মাঠ পর্যায়ে তাদের দেখা যাচ্ছে না। অনেকটা আওয়ামী লীগের দখলে মেয়র নির্বাচনের মাঠ। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। এদিকে শুক্রবার ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের। প্রতিটি ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন আগ্রহী কাউন্সিলর থাকায় বিভিন্ন মহল্লার মসজিদে তাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। জুমার নামাজের পর রীতিমত ঈদের আমেজে কুশল বিনিময় ও দোয়া চেয়েছেন আগত মুসল্লিদের কাছে। পাড়ায় পাড়ায় হেঁটে নবাগত এবং বর্তমান কাউন্সিলররা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যুবকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন। এ সুযোগে ছোট ছোট অনুষ্ঠান আয়োজন করেও তাদের স্পন্সর করতে দেখা যায় অনেককে। ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকার বিষয়টি স্পষ্ট। দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে একক প্রার্থিতা নিয়ে। বিগত সময়ে এলাকার উন্নয়ন, সমস্যা এবং বিভিন্ন ধরনের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এখনও তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। তারপরও সম্ভাব্য প্রার্থীদের এমন তৎপরতায় নগরজুড়ে রীতিমত আগাম নির্বাচনী আমেজ। এ আমেজে সাধারণ নগরবাসী এবং ভোটাররা ঔৎসুক্য। সময় যত গড়াবে আমেজ তত বাড়বে। সবকটি দল নির্বাচনে অংশ নিলে চসিক নির্বাচন বেশ আর্কষণীয় হয়ে উঠতে পারে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের তৃপ্তি যেন চসিক নির্বাচনে মিটবে।
×