ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক পাঠানো হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে

দু’হাজার মাধ্যমিক স্কুলে ডিজিটাল ডিভাইস চালু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৪ মার্চ ২০১৫

দু’হাজার মাধ্যমিক স্কুলে ডিজিটাল ডিভাইস চালু হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ দেশে ২ হাজারেরও বেশি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ডিভাইসের আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে কম্পিউটারের পাশাপাশি ভাষা শিক্ষার ল্যাব স্থাপিত হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির (আইসিটি) সঙ্গে কিভাবে একাধিক ভাষায় (বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজীর সঙ্গে অন্তত আরও একটি ভাষা) কথা বলতে হয় ও কথা শুনে, কিভাবে সেই ভাষায় উত্তর দিতে হয় তা শিখবে। মাঠপর্যায়ের (উপজেলা) এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটালের অতি আধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হবে। খবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের। সম্প্রতি বগুড়ার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে শিক্ষা সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম খান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত এবং প্রযুক্তির আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা বলেন। এ সময় প্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন। সরকারের মুখপাত্র বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত ৫টি করে ভাষা শেখানো হয়। ওই সব দেশের শিক্ষার্থী নিজেদের মাতৃভাষার সঙ্গে বাড়িতি আরও ৪টি ভাষায় লিখতে ও কথা বলতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি ভাষা শেখানো হয় ইংরেজী ও বাংলা। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ অন্য ভাষা শিখতে চাইলে তা শেখানো হয়। এর বাইরে কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কয়েকটি বিদেশী ভাষা শেখার কোর্স চালু করেছে। তবে তা একাডেমিক নয়। সরকারীভাবে মাধ্যমিক পর্যায়ে আরও অন্তত একটি ভাষা (মোট তিনটি ভাষা) শেখানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে, যা হবে সম্পূর্ণ একাডেমিক। পছন্দ অনুযায়ী ভাষা শেখার পর শিক্ষার্থীরা বিদেশে সহজে স্কলারশিপ নিতে পারবে। সূত্র জানায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্লাস মাল্টিমিডিয়ার আওতায় আনা হবে। পাঠ্য পুস্তকের প্রতিটি চ্যাপ্টার বিশেষ প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্মার্ট এ্যাপসে (এ্যাপ্লিকেশন) দেয়া হবে, যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী স্মার্টফোনের সিকিউরিটি ডিজিটালের ডিভাইসে গিয়ে কোন বিষয় সহজে বুঝে নিতে পারে। এর মাধ্যমে তারা মুখস্থ না করে সিলেবাসের পাঠ বুঝে আত্মস্থ করে প্রশ্নপত্রের উত্তর দিতে পারবে। এ পন্থায় একজন শিক্ষার্থীর মেধা আরও শার্প হবে। সৃষ্টিশীল মেধায় শিক্ষাক্ষেত্রে সৃজনশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে। সূত্র জানায়, এসব স্কুলগুলোর প্রতিটিতে নিজস্ব ওয়েব পেজ খোলার আহ্বান জানানো হয়েছে। কোন শ্রেণীতে কখন কোন বিষয়ে লেকচার দেয়া হলো তা ওয়েব পেজে প্রতিনিয়ত আপডেট করে দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজেন ডাউনলোড করে রিক্যাপ করতে পারে। এ বিষয়ে একজন শিক্ষক বললেন, রিক্যাপচুলেশন ইজ দ্য সেক্রেট অব মেমোরি অর্থাৎ যে শিক্ষার্থী বিষয়ভিত্তিক পাঠ যত রিভিশন দেবে (রিক্যাপ করবে) তার মেধার বিকাশ দ্রুত ঘটবে। নিজের মেধাতে বুঝে নিয়ে সে মনে রাখতে পারবে অনেকটা সময় ধরে। এদিকে সূত্র জানায় মাধ্যমিকে ইংরেজী শিক্ষায় স্পিকিং এ্যান্ড লিসিনিং (বলা ও শোনা) দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিদ্যালয়ের নিজস্ব পরীক্ষায় ইংরেজী প্রথমপত্রে এক শ’ নম্বরের মধ্যে ২০ নম্বর আলাদা রাখা হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে চলতি শিক্ষাবর্ষেই ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম-দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক স্কুলের নিজস্ব পরীক্ষায় এ মূল্যায়ন কার্যকর করা হবে। এ পদ্ধতি সফল হলে তা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও দাখিল পরীক্ষায় চালু করা হবে। ইতোমধ্যে সকল মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় সুন্দর করে কথা বলা এবং শোনার জন্য প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে বিশেষ ডিজিটাল ডিভাইসের অডিও স্পীকার বসানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যানেজিং কমিটি বা গবনির্ং বডির সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে ডিভাইস স্থাপন করবে। সূত্র জানায়, মাধ্যমিকের ইংরেজী পাঠ্যপুস্তকে ন্যাশনাল কারিকুলাম ও টেক্সটবুক বোর্ডের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি যে ৩৬টি লিসেনিং টেক্সট অনুমোদন করেছে তা শ্রেণীকক্ষে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের সঙ্গে অডিও ডিভাইস ব্যবহার করে পাঠদান করতে হবে। এই লিসিনিং টেক্সটের জন্য অডিও ওয়েব ওয়েবসাইটে দেয়া হবে, যা মোবাইল এ্যাপসেও ডাউনলোড করা যাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটালের আওতায় আনা হবে। এ জন্য দক্ষ শিক্ষক গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরেক সূত্র জানায়, মাধ্যমিকের এই পাঠ গ্রহণের আগে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রাথমিক স্কুলেই কম্পিউটারের প্রাথমিক পাঠ নিতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত একনেক বৈঠকে প্রথমপর্যায়ে প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক স্কুলে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শেখানোর আওতায় আনা হয়েছে।
×