ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অধিক মুনাফার লোভে ছাড় করছেন না আমদানিকারকরা

বেনাপোল বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ২১৬৯ গাড়ি

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ১৪ মার্চ ২০১৫

বেনাপোল বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ২১৬৯ গাড়ি

সাজেদ রহমান, যশোর/ আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে খালাসের অপেক্ষায় আটকা পড়ে আছে কয়েক আমদানিকারকের ২ হাজার ১৬৯টি আমদানি করা গাড়ি। ব্যাংকের সুদ না দিয়ে গাড়িগুলো ছাড় করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিক মুনাফার লোভেই গাড়িগুলো দুই মাস থেকে কয়েক বছর ধরে বন্দরের শেডে পড়ে থাকায় সেখানে দেখা দিয়েছে তীব্র পণ্যজট। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক রাখার স্থানে গাড়িগুলো ফেলে রাখায় ট্রাক রাখার স্থান সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। গাড়িগুলো ছাড় করাতে আমদানিকারকদের তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তারা কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এ কারণে চলতি মাসে তাদের শোকজ নোটিস পাঠানো হয়েছে। তবে অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্টরা গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করছেন না। বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ২৩ হাজার ৮৯৭টি। এর মধ্যে খালাস হয়েছে ২৩ হাজার ২৬৭টি। আর চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে গাড়ি আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার ১৬৭টি। খালাস হয়েছে ১৪ হাজার ৭৯৭টি। এ দুই অর্থবছরে মোট ১ হাজার গাড়িসহ আগের থাকা ১ হাজার ১৬৯টি মিলে মোট ২ হাজার ১৬৯টি গাড়ি বর্তমানে বন্দরের শেডে পড়ে রয়েছে। বন্দরে পড়ে থাকা গাড়ির আমদানিকারক হচ্ছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আমদানি করা গাড়ির মধ্যে রয়েছে- ট্রাক, পিকআপ ও ছোট প্রাইভেটকার। এরমধ্যে র‌্যাংগস মোটরসের জেনারেল ম্যানেজার সত্যজিৎ সাহা বেনাপোল কাস্টমসে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ‘গাড়ি ছাড় করানোর দিন থেকে আমাদের ব্যাংক সুদ দিতে হয়। ছাড় করানোর পরে যদি গাড়ি বিক্রি না হয় তাহলে আমাদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে।’ তাই চিঠির মাধ্যমে তিনি আরও সময় চান। নিটল গ্রুপের ডিজিএম গোলাম রব্বানি বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়ি বেনাপোল থেকে নিয়ে আসা যাচ্ছে না। আবার নিয়ে এলেও বিক্রি হচ্ছে না। তাই ধীরে ধীরে গাড়ি ছাড় করানো হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা গাড়ি ছাড় না হওয়ার কারণ হলো ব্যবসায়িক মুনাফা বাড়ানো। বেশি মুনাফার জন্যই হয়তো তারা গাড়ি ছাড় করাচ্ছেন না।’ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়িগুলো ছাড় করাতে আমদানিকারকদের তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তারা কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এ কারণে চলতি মাসে তাদের শো’কজ নোটিস পাঠানো হয়েছে। তবে অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্টরা গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করছেন না। বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দায়সারা শোকজ নোটিসে বলা হয়েছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে গাড়িগুলো ছাড় না করালে নিলামে তোলা হবে। বন্দরের শেডে পড়ে থাকা গাড়ির মূল্য শত কোটি টাকা বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এতে সরকারের রাজস্ব পাওনা রয়েছে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা। বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার অনুপম চাকমা বলেন, ‘আমাদের নিয়ম রয়েছে গাড়ি আমদানির পর ৩০ দিন পার হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের চিঠি দিয়ে গাড়ি ছাড় করানোর জন্য বলা। এরপর সাড়া না পাওয়া গেলে তা নিলামে ওঠানো।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাড়িগুলো দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমদানি করে এনেছেন। তাই তাদের দিকে তাকিয়ে দুই মাস ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু বার বার সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের চিঠি দিলেও তারা কোনো জবাব দিচ্ছিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে শো’কজ করা হয়েছে। এরপরও তারা গাড়ি খালাস না করলে তা নিলামে ওঠানো হবে।’ বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার আতিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৩ সালের ১৮ মে বেনাপোলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন পড়ে থাকা গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য নিলামে তোলার।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের চিঠি দিয়ে চলতি মাসের মধ্যে গাড়ি ছাড় করাতে বলা হয়েছে। তা না করলে আগামী মাসের প্রথম দিকে নিলাম আহ্বান করা হবে। এতে সরকারও লাভবান হবে।’
×