ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোয়ার্টারের প্রস্তুতি সারল লঙ্কানরা!

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১২ মার্চ ২০১৫

কোয়ার্টারের প্রস্তুতি সারল লঙ্কানরা!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পুল পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ১৪৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রস্তুতিটা সেরে নিল লঙ্কানরা। হোবার্টে কুমার সাঙ্গাকারার অবিশ্বাস্য রেকর্ডের দিনে ব্যাটে-বলে শক্তিমত্তার পরিচয় দিল সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। সাঙ্গাকারা ও তিলকারতেœ দিলশানের জোড়া সেঞ্চুরির ওপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৩ রানের বিশাল স্কোর গড়ে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৪৩.১ ওভারে ২১৫ রানে অলআউট হয় স্কটিশরা। ১২৪ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা সাঙ্গাকারা, এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ তো বটেই ওয়ানডে ইতিহাসেরই প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড গড়লেন লঙ্কান ক্রিকেটের চলমান এই কিংবদন্তি! দলীয় ২১ রানে ৪ রান করা লাহিরু থিরিমান্নেকে ফিরিয়ে দিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন প্রিস্টন মমসেনরা। ওই পর্যন্তই। এরপর স্কটিসদের নিয়ে ছেলেখেলায় মাতেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। যেখানে নেতৃত্ব দেন দুই অভিজ্ঞ উইলোবাজ সাঙ্গাকারা ও দিলশান। দ্বিতীয় উইকেটে ২৮.৫ ওভারে ১৯৫ রান সংগ্রহ করে প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন তারা। ৯৫ বলে ১৩ চার ও ৪ ছক্কায় ১২৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাঙ্গাকারা। ক্যারিয়ারের বিদায়লগ্নে নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন ৩৭ বছর বয়সী ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাটসম্যান। চলতি বিশ্বকাপে সাঙ্গাকারার ‘ব্যাক টু ব্যাক’ চতুর্থ সেঞ্চুরি এটি। বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ১০৫*, ১১৭* ও ১০৪ রানের ইনিংস! বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেও টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি নেই আর কারোই। এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক চারটি সেঞ্চুরির রেকর্ডও এখন তার দখলে। পরে উইকেটের পেছনে দুটি ক্যাচ নিয়ে উইকেটরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে ৫৪ ডিসমিসালের রেকর্ডও গড়েন সাঙ্গাকারা, ছাড়িয়ে যান সাবেক অস্ট্রেলিয়ান এ্যাডাম গিলক্রিস্টকে (৫২)। ৩২ ডিসমিসালে তৃতীয় স্থানে কিউই সেনাপতি ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। ব্যাট হাতে ও উইকেটের পেছনে সাঙ্গাকারার এমন নৈপুণ্যে লঙ্কান ভক্তরা কিছুটা হতাশই হবেনÑ বিশ্বকাপ খেলেই যে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগাম ঘোষণাটা দিয়ে রেখেছেন তিনি! ৬ ম্যাচে টানা চার সেঞ্চুরিতে চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৪৯৬ রান সাঙ্গাকারার, গড় ১২৪! অন্যদিকে চলতি আসরে নিজের দ্বিতীয় ও সর্বোপরি বিশ্বকাপের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া দিলশান ফেরেন ১০৪ রান করে। এটি তাঁর ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরি। চতুর্থ ব্যাটসমান হিসেবে সাঙ্গাকারা যখন আউট হন ৩৬ ওভারে ২৪৪ রান করে শ্রীলঙ্কা তখন বড় সংগ্রহের পথে। এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের কথাও আলাদা করে বলতে হবে। ম্যাট মাচানকে এক ওভারে টানা চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন লঙ্কান অধিনায়ক। ২১ বলে ১ চার ও ৬ ছক্কায় ৫১ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে ফেরেন ম্যাথুস। ২০ নম্বর বলে পূর্ণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে ১৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এ তালিকায় শীর্ষে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম (এবারই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে)। সাঙ্গাকারা, দিলশান ম্যাথুসের সঙ্গে শেষ দিকে ব্যাট হাতে লঙ্কানদের রান-উৎসবে সঙ্গী হন কুশল পেরেরা (১৩ বলে ২৪), নুয়ান কুলাসেকারা (১৭ বলে ১৮*) ও দুশমন্ত চামিরা (৯ বলে ১২*)। ম্যাথুসদের ব্যাটিং-তা-বের বিপরীতে স্কটিশদের সান্ত¡না ৬৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেয়া জস ডেভি। এর মধ্য দিয়ে ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদিকে (১৩টি করে) টপকে চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট শিকারি বনে গেলেন তিনি! ২টি করে উইকেট এলস ইভান্স ও রিচি বেরিংটনের। ব্যতিক্রম ঘটনা লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ৯ জনই ক্যাচ আউট হন! বড় লক্ষ্য টপকাতে গিয়ে দলীয় ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্কটল্যান্ড। সেখান থেকে জয় পেতে অবিশ্বাস্য কিছুই করতে হতো স্কটিস ব্যাটসম্যানদের। লঙ্কানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপরীতে সেটি আর হয়নি। মাঝে দুটি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে কেবল ব্যবধান কমিয়েছেন অধিনায়ক প্রিস্টন মমসেন (৭৫ বলে ৬০) ও ফ্রেডি কোলমেন (৭৪ বলে ৭০)। বেরিংটনের ২২ বলে ২৯ উল্লেখ্য। প্রায় ৭ ওভার বাকি থাকতে ২১৫-এ থেমে যায় ইনিংস। শ্রীলঙ্কার হয়ে নুয়ান কুলাসেকারা ও দুশমন্ত চামিরা প্রত্যেকে নেন ৩টি করে উইকেট। তারকা পেসার লাসিথ মালিঙ্গার শিকার ২টি। জয়ের কৃতিত্ব সাঙ্গাকারা ও দিলশানকে দিয়ে অধিনায়ক বলেন, ‘ব্যাট হাতে সাঙ্গা-দিলশানই আমাদের ভিত তৈরি করে দিয়েছে। সাঙ্গা আসলেই অসাধারণ। শেষ ম্যাচগুলোতে দলের নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট আমি। বোলিং-ফিল্ডিং ভাল হলে সামনে আরও বড় কিছু পাব আমরা।’ সাঙ্গাকারা তাঁর অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে খেলা চালিয়ে যাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ম্যাথুস। ৬ খেলায় ২ হারের বিপরীতে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পুল ‘এ’এর দ্বিতীয় স্থানে শ্রীলঙ্কা। ৫ জয়ে শীর্ষে নিউজিল্যান্ড। সমান ৩টি করে জয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের পয়েন্ট ৭ করে। যদিও দু’দলেরই ১টি করে খেলা এখনও বাকি আছে। সুতরাং কোয়ার্টার নিশ্চিত হলেও পুলে নিজেদের অবস্থান এখনও নিশ্চিত নয় লঙ্কানদের। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার অবশিষ্ট দুটি ম্যাচের ওপরই সব কিছু নির্ভর করছে।
×