ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইএমএফ’র ব্রিফিং

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ৬ শতাংশ হবে

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১১ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ৬ শতাংশ হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসের অস্থিতিশীলতার জন্য অর্থনীতিকে মূল্য দিতে হচ্ছে। তবে রাজনীতিতে স্থিতি ফিরলে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে আইএমএফ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঋণদাতা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফ এ কথা জানায়। ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের প্রধান এবং সংস্থার এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের উপ-প্রধান রড্রিগো কুবেরো সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের তিন বছর মেয়াদী চলমান বর্ধিত ঋণ সহায়তার (ইসিএফ) অর্থছাড়পূর্ব পঞ্চম ও ষষ্ঠ কিস্তি পর্যালোচনার জন্য আইএমএফ’র প্রতিনিধিদলটি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসে। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার ঢাকা মিশনের প্রধান স্টেলা কান্ডেরাও উপস্থিত ছিলেন। আইএমএফ বলছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাবসহ অর্থনীতি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এদিকে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ আশা করছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থবছরের অর্ধেক পেরুনোর পরপরই অস্থিরতা শুরু হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে নামবে না। যদিও বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ঢাকা সফর শেষে আইএমএফ’র প্রতিনিধিদলের প্রধান রড্রিগো কুবেরো বলছেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ। কুবেরো বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল ছিল। এছাড়া নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রফতানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকায় অর্থনীতির সকল সূচকে ভাল করছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য অর্থনীতিকে মূল্য দিতে হচ্ছে। এই অবস্থার অবসান ঘটলে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশে যেতে পারে। আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রধান বলেন, আগামীতে আমদানি বাড়বে এবং রফতানির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বহির্খাতের চলতি হিসাবে ঘাটতি হতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ধারবাহিকভাবে বাড়ছে। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, খাদ্য মূল্য কম থাকার কারণে মূল্যস্ফীতি এখন সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও অস্থিতিশীলতার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় যে বিঘœ হচ্ছে, তাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। এদিকে, ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল আইএমএফ ইসিএফের প্রায় এক বিলিয়ন (৮৮৭ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন) ডলারের এই ঋণ অনুমোদন করে। কিছু নীতিগত সংস্কারের শর্তে এই ঋণ দেয় আইএমএফ। এজন্য প্রতিটি কিস্তি ছাড় করার আগে আইএমএফ ঋণের অর্থের ব্যবহার ও শর্তযুক্ত নীতির সংস্কারগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করে থাকে। এই ঋণের শর্ত হিসেবে ২০১২ সালে ভ্যাট আইন করা হয়েছে, যা ২০১৬ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হবে। গত ২০১৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইনেও সংশোধন আনা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বেসরকারী খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। কুবেরো আরও বলেন, শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় থাকতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুত, পরিবহন অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনে বাংলাদেশে দাম কমানোর বিষয়ে কোন পরামর্শ রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তা সরকারের হাতেই ছেড়ে দেন আইএমএফ কর্মকর্তা। যদিও তেলে ভর্তুকি কমিয়ে তেলের দাম বাড়াতে আগে সব সময় তাগিদ দিয়ে এসেছে সংস্থাটি। কুবেরো বলেন, আমরা মনে করি জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার কাজটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাদের জানানো হয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম সরকার কমাবে না। এর মাধ্যমে বিপিসির লোকসান কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে চায় সরকার। বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যে এই সফরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কি না-সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন সমস্যা বোধ করিনি। তবে এ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের প্রধান বলেন, সরকারের সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে অর্থনীতিতে এর কতটা প্রভাব পড়েছে, এটি এত দ্রুত নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। লিখিত বক্তব্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির হার কমা, দারিদ্র্য হার হ্রাসের জন্য সরকারের প্রশংসা করে বলা হয়, তবে বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। নতুন ভ্যাট আইন চালু হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও অভিযোগ কমে আসবে। একই সঙ্গে কর প্রশাসন আধুনিকীকরণ ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায়ের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে আইএমএফ।
×