ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ধমান বিস্ফোরণে পলাতক জেএমবি জঙ্গ

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১১ মার্চ ২০১৫

বর্ধমান বিস্ফোরণে পলাতক জেএমবি জঙ্গ

শংকর কুমার দে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ মার্চ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে কাওরানবাজারে তাঁর গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশে (জেএমবি) জঙ্গী গোষ্ঠী। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে খোঁজা হচ্ছে বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পলাতক অন্তত পাঁচ জঙ্গীকে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা চালানোর জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে জঙ্গী গোষ্ঠী। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থাকে এ ধরনের খবর দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খাগড়াগড়ের পলাতক জেএমবির জঙ্গীদের তালিকা চেয়ে তারা কোথায় আছে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে যে বোমা হামলা চালানোর বিষয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আইবির কাছ থেকে খবর পেয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আইবি সূত্রে খবর পেয়েছে যে, বর্ধমান খাগড়াগড় থেকে পালিয়ে আসা জেএমবির জঙ্গীরাই প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে বোমা হামলা চালিয়েছে। এই বোমা হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে কওসর ওরফে বোমা মিজান। তার সঙ্গে রয়েছে হাত কাটা নাসিরুল্লাহ ওরফে সুহেল, তালহা শেখ, সালাউদ্দিন শেখ ওরফে হাফিজুর রহমান ওরফে মাহিন ও রফিক। পাঁচ মাস আগে গত অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির জঙ্গীরা বোমা তৈরি করার সময়ে বিস্ফোরণ ঘটার পর থেকে পলাতক রয়েছে এই পাঁচ জঙ্গীসহ জেএমবির জঙ্গীরা। এর মধ্যে হাতকাটা নাসিরুল্লাহ ও তালহা শেখকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা, সালাউদ্দিনের জন্য ৫ লাখ টাকা ও রফিকের জন্য ১ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের জেএমবির দুই জঙ্গী বিস্ফোরিত বোমায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। দিল্লীর গোয়েন্দা সংস্থা আইবি বলেছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ঢাকার কাওরানবাজারে পর পর ধারাবাহিক বোমার বিস্ফোরণে কওসর ওরফে মিজান তো বটেই, হাতকাটা নাসিরুল্লাহ ও তালহা শেখের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দিল্লীর গোয়েন্দা সংস্থা আইবির এ ধরনের তথ্য পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে দিল্লীর কাছে বর্ধমান খাগড়াগড়ের পলাতক জেএমবির জঙ্গীরা কে কোথায় আছে এবং তারা কোথায় তৎপরতা চালাচ্ছে তার তথ্য চেয়েছে ঢাকার গোয়েন্দারা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গত ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে কাওরানবাজার এলাকায় পর পর কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) দেয়া তথ্যানুযায়ী ঘটনার পর সে দিনই কওসর ওরফে বোমা মিজান সম্পর্কে তথ্য চেয়ে তাদের কাছে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। দিল্লীর গোয়েন্দা সংস্থা আইবি ঢাকা গোয়েন্দা সংস্থার অনুরোধ রক্ষা করে জানিয়েছে, খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের দিনে, অর্থাৎ গত ২ অক্টোবর বিকেলে বীরভূম জেলার নানুর-বোলপুরের কিছু অঞ্চলে কওসরকে শেষবার দেখা গিয়েছিল, তারপর আর দেখা যায়নি। ভারতীয় ভূখ-ে কওসরের অস্তিত্ব আর গোয়েন্দা-নজরে ধরা না পড়ায় গোয়েন্দা সংস্থা আইবির সন্দেহ, মুর্শিদাবাদের লালগোলা সীমান্ত টপকে কওসর বাংলাদেশের রাজশাহী জেলায় ঢুকে পড়ে, সেখান থেকে ঢাকায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পর পর ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণের নেপথ্যে জঙ্গী তৎপরতায় জেএমবির ছায়া দেখছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, বর্ধমান খাগড়াগড়ে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) কারখানা তথা গবেষণাগারে যে ধরনের আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পাওয়া গিয়েছিল তার অনুসন্ধান করেছে দিল্লীর গোয়েন্দা সংস্থা আইবি। গত ৭ মার্চে ঢাকার কাওরানবাজারের কাছে যে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তাও একই ধরনের আইইডি ফেটেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থা আইবির সন্দেহ, জেএমবির লোকজন সেগুলো পশ্চিমবঙ্গে বসে বানিয়ে পরে হয়তো বাংলাদেশে পাচার করেছে। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) তদন্তে ধরা পড়েছে, বর্ধমানের খাগড়াগড়ের আগে জেএমবি-জঙ্গীরা বিস্ফোরকের কারখানা ফেঁদেছিল মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। পরে কারখানা সরিয়ে আনা হয় খাগড়াগড়ে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, অক্টোবরের বিস্ফোরণে সব কিছু ফাঁস হওয়ার আগে পর্যন্ত দুই ডেরা মিলিয়ে জেএমবি হাজার দুয়েক বোমা বানিয়েছিল। অধিকাংশ বিস্ফোরক সীমান্ত টপকে বাংলাদেশে চলে গিয়েছে। এ ধরনের সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধানে নেমেছে দিল্লী ও ঢাকার গোয়েন্দারা। ঢাকার একজন উর্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতালের নামে যে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারা, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপের ঘটনাগুলো এতদিন ধরে চলে আসছে তাতে যুবদল, ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডাররা জড়িত তো বটেই, তারা জেএমবির জঙ্গী গোষ্ঠীসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদেরও মাঠে নামিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিত নির্মম নাশকতা চালানোর ক্ষেতে পারদর্শী জঙ্গীরাই এবং এতদিন ধরে যে নাশকতা চলছে তা জঙ্গী কায়দায়ই। গত ৭ মার্চে, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে ঢাকার কাওরানবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে যে পর পর ধারাবাহিক বোমা হামলার ঘটানোর ঘটনায়, জেএমবির পলাতক জঙ্গীদের খোঁজ করার কারণে জঙ্গী ছায়া দেখতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
×