ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় সেরা রান মুশফিকের ॥ স্ত্রী, সন্তানকে সেঞ্চুরি উৎসর্গ করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান রিয়াদ

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১০ মার্চ ২০১৫

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান রিয়াদ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক এক করে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৩, ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপসহ পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। পাঁচটি বিশ্বকাপে সোমবার ইংল্যান্ড ম্যাচ পর্যন্ত ৩১টি ম্যাচও খেলা হয়ে গেছে বাংলাদেশের অথচ ৩০তম ম্যাচ পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করতে পারেননি! অবশেষে ৩১তম ম্যাচে এসে সেঞ্চুরির দেখা পেল বাংলাদেশ। সেই সেঞ্চুরিটি করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যিনি কিনা আবার ১১৪ ওয়ানডে খেলেই প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। সেই সেঞ্চুরিটি আবার বিশ্বকাপের ময়দানেই হয়েছে! এমন সেঞ্চুরির পর কাছের মানুষকেই তা উৎসর্গ করবেন মাহমুদুল্লাহ, এটাই স্বাভাবিক। মাহমুদুল্লাহ তা করলেনও। স্ত্রী, সন্তানকে সেঞ্চুরি উৎসর্গ করলেন। বললেন, ‘অনুভূতিটা দারুণ। তবে আরও কিছু রান করতে পারলে আরও খুশি হতে পারতাম। দুর্ভাগ্য আউট হয়ে যেতে হলো। সেঞ্চুরিটি নিয়ে আমি অনেক আনন্দিত। তবে আগামী ম্যাচগুলোতে আরও রান করতে পারলে ভাল লাগবে। ইনিংসটি আমার স্ত্রী ও সন্তানকে উৎসর্গ করছি।’ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের এমন রেকর্ডের দিনে মুশফিকুর রহীমও সেঞ্চুরি পেতে পারতেন। কিন্তু ৮৯ রানেই আউট হয়ে যান মুশফিক। ১১ রানের জন্য মুশফিকের সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে এ রান মুশফিককে বিশ্বকাপের বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যক্তিগত রান তোলার দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানেই রেখেছে। মাহমুদুল্লাহ এখন সবার ওপরে। তার পরেই আছেন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রান করা তামিম ইকবাল। তৃতীয় স্থানে মুশফিক। অবশ্য সবকিছুকে ছাপিয়ে মাহমুদুল্লাহর ইনিংসটিই সবার মুখে মুখে আছে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে যে এমন দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন। বাংলাদেশের আক্ষেপও তো ঘুচিয়েছেন। দীর্ঘ বছর সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচে গেছে মাহমুদুল্লাহর এমন ইনিংসেই তো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৫.৪ ওভারে রানআউট হওয়ার আগে মাহমুদুল্লাহ খেলেছেন ১৩৮ বলে ১০৩ রানের ইনিংস, ৭টি চার ও ২টি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। অস্ট্রেলিয়ার এ্যাডিলেড ওভালে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ২.১ ওভারে দলীয় মাত্র ৮ রানে ২ উইকেটের পতন ঘটে যায়। দুই ওপেনার তামিম ও ইমরুল আউট হয়ে যান। এমন সময়ে মাহমুদুল্লাহ হাল না ধরলে বিপদই ছিল। এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে ১১৩ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১২টি হাফসেঞ্চুরি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নামের পাশে লেখা ছিল। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল অপরাজিত ৪২ রান। সোমবার তাই ঐতিহাসিক এক সেঞ্চুরি করে নিজেকেও ছাড়িয়ে গেছেন মাহমুদুল্লাহ। ১৬ বছর পর মাহমুদুল্লাহর কল্যাণেই এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এর আগে বিশ্বকাপে রবিবার পর্যন্ত ২০টি হাফসেঞ্চুরি ছিল টাইগারদের, ছিল না সেঞ্চুরি। কিন্তু সোমবার প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাহমুদুল্লাহ অথচ তার ওপর লাইমলাইটটা ছিলই না। সব প্রত্যাশা তামিম, সাকিব, মুশফিকদের ঘিরে ছিল। কিন্তু নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন মাহমুদুল্লাহই। সেঞ্চুরির পাশাপাশি ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এসেছে মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে। তামিমের (১২৫ রান, ২০১০ সালে; মিরপুরে) পর মাহমুদুল্লাহ সেঞ্চুরি করলেন। আর কেউই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। মাহমুদুল্লাহ এমন একদিন সেঞ্চুরিটি করেছেন, যখন ম্যাচটি জিতলেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যাবে বাংলাদেশ। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। শুধু সেঞ্চুরিটিই নয়, এ দিন মুশফিকুর রহীমকে সঙ্গী করে (পঞ্চম উইকেটে) ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটিরও (১৪১ রান) রেকর্ড গড়েছেন মাহমুদুল্লাহ। যা কিনা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটিও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মোট হাফসেঞ্চুরির সংখ্যা ছিল ২০টি, ছিল না কোন সেঞ্চুরি। সোমবার মুশফিকুর রহীমের ৮৯ রানটিসহ বিশ্বকাপে ২১টি অর্ধশতক দেখেছে বাংলাদেশ। অবশেষে একটি সেঞ্চুরিরও দেখা মিলল। যে সেঞ্চুরি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে এসেছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি করলেন মাহমুদুল্লাহ, সেই সঙ্গে নিজের ১১৪ ওয়ানডের ক্যারিয়ারেও প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। কাঁপিয়ে দিলেন বিশ্বমঞ্চ। কাঁপিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডকেও!
×