ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১১ প্রতারক কারাগারে

ব্র্যাক ব্যাংকের জালিয়াতি ঘটনায় প্রভাবশালী ৪ জনকে খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১০ মার্চ ২০১৫

ব্র্যাক ব্যাংকের জালিয়াতি ঘটনায় প্রভাবশালী ৪ জনকে খুঁজছে পুলিশ

আজাদ সুলায়মান ॥ ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় এফডিআর জালিয়াতির ঘটনায় আরও ৪ জন প্রভাবশালীকে খুঁজছে পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন আলোচিত সঙ্গীতশিল্পী, একজন আইনজীবী ও একজন রাজনীতিক। এ চক্রের প্রধান ইকবাল নামের এক ব্যক্তির সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে পুলিশ। এদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে এফডিআরের ৯০ কোটি টাকা উত্তোলনের সময় গ্রেফতারকৃত ১১ প্রতারককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বারিক সোমবার তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করার পর তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ জানায়, এ ধরনের ব্যাংক জালিয়াতির মতো অপরাধ দুদকের সিডিউল ভুক্ত। কাজেই এ মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম তদন্ত করবে দুদক। আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার ও তদন্তের পর চার্জশীট প্রদান সবই করবে দুদক। এদিকে গ্রেফতারকৃত প্রতারকদের বিষয়ে আরও কোন জালিয়াতির অভিযোগ আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গুলশান থানার পুলিশ জানায়, ৯০ কোটি টাকার এফডিআর ভাঙ্গানোর সময় ১১ জন ব্যাংকে ছুটে যাওয়ায় প্রমাণ করে এটি খুব বড় ও শক্তিশালী প্রতারকচক্র। চক্রটি আরও কোন ব্যাংকে এ ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতি সংঘটিত করেছে তদন্তে সেটাই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে গুলশান থানার দারগা আব্দুল বারিক জনকণ্ঠকে বলেন, চক্রের প্রধান কাজী শাহাদত হোসেনকে দুর্ধর্ষ জালিয়াতিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এর আগে কখনও এ ধরনের কোন অপরাধ করেনি বলে দাবি করেছেন। তিনি কিভাবে এতজনকে সংগঠিত করে ব্যাংকে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেন সে রহস্য উদঘাটন করা গেলে এ চক্র কতটা ভয়াবহ সেটা জানা যাবে। দারগা আব্দুল বারিক আরও জানান, এরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জালিয়াতিক ও প্রতারক। একটি ব্যাংকের এফডিআর ভাঙ্গানোর বিষয়ে যে ধরনের কলাকৌশল দরকার সে সম্পর্কে তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। কিন্তু ব্যাংকের পাল্টা কৌশলের কাছে তারা ধরা খেয়ে যায়। যদি এফডিআর ভাঙ্গিয়ে ৯০ কোটি টাকা নিতে পারত তাহলে সে টাকা ভাগাভাগি হতো ১৮ জনের মধ্যে। পুলিশ বাকি ৭ জনকে শনাক্ত করার জন্য তথ্যাদি সংগ্রহ করছে। এদিকে কিভাবে মোটা অঙ্কের ৯টি এফডিআর সম্পর্কে প্রতারকরা নিশ্চিত হতে পেরেছে সেটার কুলকিনারা পাচ্ছে না ব্যাংক ও পুলিশ। এ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাইফুল ইসলামের যে ৯টি এফডিআর রয়েছে, সে সম্পর্কে সুনিশ্চিত তথ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করেই প্রতারকরা রবিবার সেখানে যায়। তারা কোন এফডিআরটিতে কি পরিমাণ টাকা আছে সেটাও মুখ ফসকে বলে ফেলে। কাগজপত্রে সেটা লিখেও দেয়। এখন প্রশ্ন ওঠেছে, ব্র্যাক ব্যাংকের মতো একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাংকে গ্রাহকদের এ্যাকাউন্ট সম্পর্কে গোপনীয়তার রক্ষা করা হয় বেশ কড়াকড়িভাবে। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় কিংবা কোন ব্রাঞ্চে প্রয়োজন ছাড়া কারোর পক্ষে ভেতরে গিয়ে অযথা ঘুরাঘুরি বা অন্য কোন গোপন তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে পরিচালিত হয় দাফতরিক কর্মকা-। এমনটি প্রতিটি টেবিল বা কাউন্টারে কার কি প্রয়োজনে কি আলাপ করছে সেটাও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মনিটর করা হয়। প্রতিটি পয়েন্টে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। সেখানে রেকর্ড থাকছে সমস্ত তথ্য ও চিত্রাদি। প্রশ্ন উঠেছে এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝেও কি করে সাইফুলের এফডিআর সম্পর্কে সব গোপন তথ্য জানতে পারল প্রতারকরা। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে দারগা আব্দুল বারিক জনকণ্ঠকে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এফডিআর এ্যাকাউন্ট হোল্ডার সাইফুলের সঙ্গে ধৃত প্রতারকদের কোন পূর্ব পরিচিতি ছিল না। প্রতারক চক্রের অন্য কোন কারোর সঙ্গে সাইফুলের পরিচয় বা জানাশোনা থাকার প্রমাণাদি এখনও মিলেনি। এ অবস্থায় সন্দেহের তীর ছুটছে ব্যাংকের নিজস্ব লোকজনের ওপর। উল্লেখ্য, রবিবার ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে এফডিআরের ৯০ কোটি টাকা উত্তোলনের সময় ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ১১ প্রতারককে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- কাজী শাহাদত হোসেন (৪৭), মোঃ সাব্বির রহমান (৪০), মোঃ নজরুল হক (৪২), শাহাবুর রহমান বাবুল (৬৫), মোঃ হাসিবুল হাসান (৩৪), মাহবুবুর রহমান কাজল (৩০), মিরাজুল ইসলাম (৩৪), খোরশেদ আলম (৩৮), দেলোয়ার হোসেন (৪৫), সেলিম আহমেদ (৪৪) ও মোঃ শাহজাহান (৫২)।
×