ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কামারুজ্জামানের রিভিউ শুনানি ১ এপ্রিল

আসামির আইনজীবীর ব্যক্তিগত সমস্যাই প্রাধান্য পেল

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ মার্চ ২০১৫

আসামির আইনজীবীর ব্যক্তিগত সমস্যাই প্রাধান্য পেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানির জন্য আগামী ১ এপ্রিল দিন ঠিক করেছে আপীল বিভাগ। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে করা সময় আবেদন মঞ্জুর করে সুপ্রীমকোর্ট এই দিন ধার্য করে। সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্্হাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউ সংক্রান্ত রায়ে এসব আবেদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির কথা বলা হয়েছে। তবে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের শুনানির ক্ষেত্রে তার আইনজীবীর ব্যক্তিগত সমস্যাই অগ্রাধিকার পেল বলেই মনে করছেন অনেকে। শুনানিতে আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি অবশ্য বলেছেন, পৃথিবীর কোন দেশেই আইনজীবীর ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে মামলার শুনানি মুলতবি করা হয় না। আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট মৌলভী ওয়াহেদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সোমবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে বেঞ্চের বিচারপতিরা এজলাসে উঠেন। এ সময় ওয়াহেদ উল্লাহ শুনানিতে বলেন, ‘আমি এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদীনের পক্ষে এসেছি। আমাদের সিনিয়র এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে শুনানি করতে পারছেন না।’ এ পর্যায়ে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এই মামলা নিষ্পত্তিতে সংসদ একটা সময় বেঁধে দিয়েছে, যদিও সেটা বাধ্যতামূলক নয়। তবে তারা এটা আশা করে। আমরাও রিভিউয়ের জন্য ৩০ দিন সময় না দিয়ে ১৫ দিন সময় দিয়েছি। এ মামলা দ্রুত শুনানির নিয়ম রয়েছে। এখানে সময় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আর পৃথিবীর কোন দেশেই আইনজীবীর ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে মামলার বিচারিক কার্যক্রম মুলতবি হয়েছে এমন ঘটনা নেই। এ সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, এ জন্য আমরাই দায়ী। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করতে বিলম্ব হয়েছে। এ পর্যায়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী প্রশ্ন করেন, এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড কোথায়? বিচারপতি চৌধুরী বলেন, তিনি তো সাধারণ আইনজীবীদের মতো না। এটা তো প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে দেয়া দায়িত্ব। জবাবে আইনজীবী ওয়াহেদ উল্লাহ বলেন, এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড অসুস্থ। এ পর্যায়ে বিচারপতি মানিক বলেন, তিনি কিসের অসুস্থ। তাঁকে গত এক দেড় মাস যাবত কোর্টে দেখা যাচ্ছে না। তিনি বিশেষ দিবসে কোর্টে আসেন না। তিনি যদি বিশেষ দিবসে না আসতে চান তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিক। তাঁর জন্য বিচার কাজ বিলম্ব করা যাবে না। আদালত এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেলের মত চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে দ্রুত শেষ করার নিয়ম আছে। সিনিয়র এ্যাডভোকেটের অসুবিধা আছে, এ মামলায় এসএম শাহজাহান সাহেবও ছিলেন। উনিও তো সিনিয়র।’ এ সময় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, আবেদনে খন্দকার মাহবুব হোসেনকেই দায়িত্ব দেয়া আছে। এরপর তিনি রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য ১ এপ্রিল দিন রাখেন। এর আগে রিভিউ শুনানির জন্য চার সপ্তাহ সময় চেয়ে রবিবারই একটি আবেদন সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছিলেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। গত বছরের ৩ নবেম্বর আপীল বিভাগের এই বেঞ্চই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখে। ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেয়। একাত্তরে ময়মনসিংহের আলবদর নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় এসেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে। জামায়াতে ইসলামীর আজকের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের আগে রিভিউয়ের পর্যায়ে এসেছে। আপীলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারক। এরপর মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে, কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়। মৃত্যু পরোয়ানা জারির চতুর্দশ দিনে গত ৫ মার্চ আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিভিউ আবেদন জমা দেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী জয়নাল আবেদিন তুহিন। ৪৫ পৃষ্ঠার এই আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে কামারুজ্জামানের খালাস চাওয়া হয়।
×