ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নারী দিবসে শিমুল ইউসুফকে সম্মাননা ও নাট্যপ্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৯ মার্চ ২০১৫

নারী দিবসে শিমুল ইউসুফকে সম্মাননা ও নাট্যপ্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারে মঞ্চকুসুমখ্যাত অভিনয়শিল্পী শিমূল ইউসুফকে আনুষ্ঠানিক সম্মাননা প্রদান করলো নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল। প্রধান অতিথি হিসেবে শিমূল ইউসুফের হাতে সম্মননা-স্মারক তুলে দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। প্রধান অতিথির সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন স্বপ্নদলের প্রধান সম্পাদক জাহিদ রিপন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাট্যনির্দেশক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সম্মাননা প্রদান শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এবং জাহিদ রিপন নির্দেশিত স্বপ্নদলের দর্শকনন্দিত কাব্যনাট্য চিত্রাঙ্গদার বিশেষ মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রাঙ্গদার নাট্যকাহিনিতে উপস্থাপিত হয় মহাবীর অর্জুন সত্যপালনের জন্য একযুগ ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করে মণিপুর বনে এসেছেন। মণিপুর রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের প্রেমে উদ্বেলিত হলেও অর্জুন রূপহীন চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন। অপমানিত চিত্রাঙ্গদা প্রেমের দেবতা মদন এবং যৌবনের দেবতা বসন্তের সহায়তায় এক বছরের জন্য অপরূপ সুন্দরীতে রূপান্তরিত হন। অর্জুন এবারে যথারীতি চিত্রাঙ্গদার প্রেমে পড়েন। কিন্তু অর্জুনকে লাভ করেও চিত্রাঙ্গদার অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকেÑ অর্জুন প্রকৃতপক্ষে কাকে ভালবাসেন, চিত্রাঙ্গদার বাহ্যিক রূপ নাকি তার প্রকৃত অস্তিত্বকে? অতঃপর চিত্রাঙ্গদার আত্মদ্বন্দ্ব আর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এ সত্য উপলব্ধি করা যায় যে, বাইরের অবয়বের চেয়ে নারী-পুরুষের চারিত্রশক্তি অনেক বেশি মূল্যবান এবং এতেই প্রকৃতপক্ষে আত্মার স্থায়ী পরিচয়। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুকন্যা, মিতা, মোস্তাফিজ, রেজাউল, শিশির, সামাদ, জেবু, রিমু, নাবলু, তানভীর, শাহীন, হিটলার, মাধুরী, মাসুদ, তানিয়া, জুঁই, আলী, সাইদ, বিপুল, জুয়েনা, তীর্থ প্রমুখ। সাতই মার্চের ভাষণের একক বক্তৃতা ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণের বার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। একক বক্তৃতা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ দূত ওয়ালিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি এ্যামেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ওয়ালিউর রহমান তার একক বক্তৃতায় বলেন, সমগ্র বাঙালী জাতিকে এক করতে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের কোন বিকল্প ছিল না। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত ঘোষণা ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’ সত্য হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালীর বিজয়ের মধ্য দিয়ে। এ ভাষণের সুর অনুসরণ করেই এক নতুন রেনেসাঁর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, ৭ই মার্চের পর প্রবল চাপের মুখেও পরম ধৈর্য্যে বঙ্গবন্ধু ১৮ দিনের প্রতিটি প্রহর অপেক্ষা করেছেন ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার সেই সঠিক ক্ষণটির জন্য। ৭ই মার্চের ভাষণ এমনিই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যে এ ভাষণে জাতির করণীয় ও নির্দেশাবলি অনুসরণ করে কোন আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার অপেক্ষা না করেই বাঙালী জনগণ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৭ই মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি নির্দেশ বুকের গভীরে ধারণ করেছে দেশবাসী; তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা যার অনুপ্রেরণা ছিল ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অমর বাণী ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর কয়েকটি ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে অন্যতম। এই ভাষণে তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী বাঙালীর আকাক্সক্ষাকে বাণীরূপ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর এ কালজয়ী ভাষণ রণক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধজয়ের প্রেরণা দিয়েছে; তারপর নানা ধাপ পেরিয়ে আমরা লাভ করেছি আমাদের প্রত্যাশিত স্বাধীনতা। সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার প্রদান ॥ কবি, লেখক, সাহিত্যিক, প্রকাশক ও বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে রবিবার প্রদান করা হলো সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫। তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই কার্যালয়ের স্টুডিও মিলনাতনে ৮ লেখকের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত সেরা বইয়ের জন্য দেয়া হয় এ পুরস্কার। ৮ম বারের মতো আয়োজিত এ পুরস্কার দেয়া হয় দুটি শাখায়। প্রথম ক্যাটাগরিতে ছিল জ্যেষ্ঠ লেখকদের বিভিন্ন শাখায় সেরা বইয়ের জন্য পুরস্কার, দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে জীবনের প্রথম বইয়ের জন্য তরুণ ও নবীন লেখক পুরস্কার। প্রথম ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘রাষ্ট্র ধর্ম ও সংস্কৃতি’ প্রবন্ধগ্রন্থের জন্য শামসুজ্জামান খান, অনন্যা থেকে প্রকাশিত ‘সাড়ে তিন হাত ভূমি’ উপন্যাসের জন্য ইমদাদুল হক মিলন, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘হিমালয়ে রিবিট’ সায়েন্স ফিকশনের জন্য মোশতাক আহমেদ ও সময় থেকে প্রকাশিত ‘হাওয়া আর রোদের ছড়া’ শিশুতোষগ্রন্থের জন্য আলম তালুকদার (যৌথভাবে) এবং কুঁড়েঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘বায়োডাটা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য রেজাউদ্দিন স্টালিন। জীবনের প্রথম বই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘ঠিক সন্ধ্যার আগে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি ও সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ, অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘নীল ক্যাফের কবি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য কুসুম সিকদার এবং সময়কাল থেকে প্রকাশিত ‘যে সুতোয় বোনা যায় সমতল আবাস’ কাব্যগ্রন্থের জন্য গালিব রহমান। প্রথম ক্যাটাগরিতে প্রতিটি পুরস্কারের মূল্যমান ৩০ হাজার টাকা ও একটি ক্রেস্ট এবং দ্বিতীয় শাখায় পুরস্কারের মূল্যমান ১০ হাজার টাকা ও একটি ক্রেস্ট তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। এ সময় লেখকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, সিটি ব্যাংক এনএ-এর পরিচালক ও সিটি বাংলাদেশ কান্ট্রি ট্রেজারার, হেড অব মার্কেটস সাজেদ উল ইসলাম এবং আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান। ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে শামসুজ্জামান খান বলেন, পুরস্কার সব সময়ই আনন্দের বিষয়। নানা কাজের মধ্যেও আমার লেখক সত্ত্বা যে মরে যায়নি, এ পুরস্কার তার স্বীকৃতি পেল। নাট্যমেলায় মঞ্চস্থ দুই নাটক ॥ দুই বাংলার নাটক নিয়ে উৎসবের আয়োজন করেছে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর। দুই বাংলার নাট্যমেলা রবীন্দ্রনাট্য ও অন্যান্য শীর্ষক এ উৎসব চলছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হল ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। প্রয়াত নাট্য অভিনেতা ও নির্দেশক খালেদ খানকে উৎসর্গীকৃত সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের তৃতীয় দিন ছিল রবিবার। এদিন সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় দুইটি নাটক। মূল হলে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটক না-মানুষি জমিন। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চায়িত হয় শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের প্রযোজনা তৃতীয় একজন।
×