ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হরতাল অবরোধ বন্ধের দাবিতে ১৪ মার্চ সব কলেজে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৯ মার্চ ২০১৫

হরতাল অবরোধ বন্ধের দাবিতে ১৪ মার্চ সব কলেজে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল-অবরোধ অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে আগামী ১৪ মার্চ সারাদেশের কলেজগুলোতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর আশ্রয়স্থল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ওইদিন বেলা ১১টায় সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দুই হাজার ১৫৪টি কলেজে একযোগে এ কর্মসূচী পালন করা হবে। গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয়ভাবে ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিন্ন ব্যানার হাতে একযোগে কর্মসূচীতে অংশ নেবেন। এদিকে হরতাল-অবরোধের নাশকতা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ। রবিবার পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রাথমিক র্শিক্ষক সমিতি। সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ মার্চ প্রতিবাদী এ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আসলাম ভূঁইয়া ও অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নোমান উর রশীদ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, আগামী ১৪ মার্চ আমরা সকাল ১১টা থেকে ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত নিঃশব্দ মানববন্ধনে অংশ নেব। এ কর্মসূচীর ব্যানারের বক্তব্য হবেÑ ‘শঙ্কামুক্ত জীবন চাই/ নিরাপদে ক্লাস করতে পরীক্ষা দিতে চাই/ শিক্ষা ধ্বংসকারী সহিংসতা বন্ধ কর’। তিনি ঘোষণা করেন, সেশনজট দূর করতে অবরোধ-হরতালের মধ্যেও শুক্র ও শনিবারের মতো সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও নির্ধারিত ক্লাস, পরীক্ষা নেয়া হবে। উপাচার্য বলেন, গত দুই মাস ধরে চলা অবরোধ ও হরতালের কারণে আমরা তিনটি পরীক্ষা সঠিক সময়ে নিতে পারিনি। তবে এ মাসের শেষ থেকে ওই পরীক্ষাগুলো শুরু হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া স্নাতক (পাস) পরীক্ষা শুরু হবে ২৮ মার্চ থেকে। ৩০ মে পর্যন্ত চলা এ পরীক্ষায় অংশ নেবে প্রায় ৫ লাখ পরীক্ষার্থী। ফেব্রুয়ারির শেষে শুরু হতে যাওয়া সম্মান প্রথম বর্ষ চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হবে ৩০ এপ্রিলে, যাতে অংশ নেবেন এক লাখ ৮০ হাজার পরীক্ষার্থী এবং ১৫ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া সম্মান দ্বিতীয় বর্ষ চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হবে ৭ এপ্রিল থেকে। যেখানে অংশ নেবে দুই লাখ ৩০ হাজার পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমরা সূচী হওয়া পরীক্ষাগুলো দিনের দ্বিতীয়ভাগে অর্থাৎ বিকেলে নেব। এর আগে সকালে নিয়মিত ক্লাস চলবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটমুক্ত করতে জাতি ও শিক্ষার্থীদের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। সে জন্য শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের আহ্বান, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন কোন কর্মসূচী যেন তারা না দেন। দুই মাসের ক্ষতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই ২০১৮ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত সকল পরীক্ষার সময়সূচীর ক্রাশ প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছি। এতে কিছু কিছু গ্যাপ রাখা হয়েছিল। ফলে এখনও আমাদের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। তবে এ ধরনের কর্মসূচী চলতে থাকলে, আমরা আবারও সেশনজটে পড়বো। জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে লেগে থাকা সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য গেল ২২ জানুয়ারি ‘ক্রাশ’ প্রোগ্রামের এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। বিএনপি জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধের মধ্যে দফায় দফায় হরতাল দিচ্ছে। হরতালে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে নেয়া হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা ব্যহত হচ্ছে। এ থেকে রেহাই পায়নি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও। গত দুই মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে কোন ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। উপাচার্যের ‘ক্রাশ’ প্রোগ্রাম নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতেই রবিবার সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাথমিক র্শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বাঁধাগস্ত হচ্ছে। তাই অবিলম্বে ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচী বন্ধের দাবি জানিয়েছেন নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল বাসার, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম তোতা, সহ-সভাপতি জাহানারা খানম, যুগ্ম-সম্পাদক গাজীউল হক চৌধুরী ও মনিরুল ইসলাম, কামরুল হাসান ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ। শিক্ষক নেতারা বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে শিশুরা নিরাপদে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া ও বেঁচে থাকার বিষয়ে আতঙ্কিত ও হতাশাগস্ত, যা শিক্ষা স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। শিশুদের নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে সংগঠনের পক্ষে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আগামী ১১ মার্চ ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত দেশের সব উপজেলা সদরে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন এবং ১৬ মার্চ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন।
×