ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৯ মার্চ ২০১৫

বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় শনিবার রাতে বিপুল পরিমাণ বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দুর্গম পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয় পেট্রোলবোমা, শক্তিশালী ককটেল, এলজি ও গোলাবারুদ। পুলিশী অভিযানে আটক হয়েছে ছাত্রশিবিরের ৩ কর্মী। গভীর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ ছাত্রদল নেতাকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিস্ফোরক ভর্তি বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ৫৮টি ককটেল, ১টি পাইপবোমা, ৪৮টি পেট্রোলবোমা, ৫০০ গ্রাম সালফার পাউডার এবং নাশকতার কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম। পুলিশের বরাদ দিয়ে আমাদের চট্টগ্রাম অফিস ও সীতাকু- সংবাদদাতা জানান, শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টা উপজেলার নুনাছড়া এলাকার পাহাড়ে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পাওয়া যায় বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র। যে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে তারা হলোÑ শিবির কর্মী মোঃ জাফর, মোঃ মফিজ ও মোঃ সিরাজুদ্দৌলা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ শহিদুল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান, এএসপি সার্কেল সাইফুল ইসলাম ও সীতাকু- থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসানের নেতৃত্বে ২শতাধিক পুলিশ উপজেলার নুনাছড়া এলাকার দুর্গম পাহাড়ে মাঝরাতে অভিযান শুরু করে। ভোর পর্যন্ত চলে অভিযান । এ সময় পুলিশ ছাত্রশিবিরের ৩টি গোপন আস্তানা ধ্বংস করে। ঐ আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় ৭০টি পেট্রোলবোমা, ৫০টি ককটেল, ২০টি দেশী ধারালো অস্ত্র, ৩টি রকেট লঞ্চার, ৪টি এলজি ও ২৪টি কার্তুজ। অভিযান চলাকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রান্নার হাঁড়িপাতিল ও ছাত্রশিবিরের ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ শহিদুল্লা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা চালানোর লক্ষ্যে সীতাকু-ের নুনাছড়া পাহাড়ে পেট্রোলবোমা তৈরির গোপন আস্তানা গড়ে তোলে শিবির। খবর পেয়ে সীতাকু- থানা-পুলিশ এবং জেলা পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্সসহ পুলিশ নুনাছড়া পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে শিবিরের গোপন আস্তানা ধ্বংস করে। এ সময় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সন্দেহভাজন ৩ শিবিরকর্মীকে আটক করে পুলিশ।’ প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকু- এলাকার যে কয়েকটি স্থান ইতোমধ্যেই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তার মধ্যে নুনাছড়া অন্যতম। বিভিন্ন সময়ে এ এলাকার মহাসড়কে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তা-ব ও নাশকতা চালিয়েছে। ঐ এলাকায় বহিরাগত অনেকেই শেল্টার পেয়েছে বলে ধারণা খোদ এলাকাবাসীর। নুনাছড়ার পাহাড়ে ছাত্রশিবিরের এ আস্তানাটির সন্ধান মেলায় কিছুটা হলেও স্বস্তি আসে সাধারণের মাঝে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে একের পর এক উদ্ঘাটিত হচ্ছে জঙ্গী আস্তানা ও অবৈধ অস্ত্রের মজুদ। এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালির লটমনি পাহাড়ে সন্ধান মেলে জঙ্গী আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের। গরু ও মুরগি পালনের আড়ালে সেখানে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এর মূল হোতা মাওলানা মোবারক এখনও পলাতক। পরে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানার গোল্ডেন আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ হাতবোমা ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম। জঙ্গীরা ঐ বাড়িটির একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে অনেকটা কারখানা স্থাপন করেছিল। সেখানে পাওয়া যায় ছাত্রশিবিরের গঠনতন্ত্র ও ইসলামি ছাত্রী সংস্থার কাগজপত্র। ঐ অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ছাত্রী সংস্থার এক কর্মীসহ চারজনকে। বাঁশখালি ও হালিশহর এলাকার এ দুটি অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এর আগে হাটহাজারী উপজেলার এক মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা ১২ জঙ্গীর তথ্যের ভিত্তিতেই পরবর্তী অভিযান দুটি পরিচালিত হয়েছিল। বিস্ফোরকসহ ঢাকায় আটক ৩ ॥ এদিকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন একমাত্র নাশকতার ওপর ভর করছে বিএনপি জোটের কর্মসূচী। গত ৫ জানুয়ারি থেকে দু’মাস ধরে পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে দেশ-বিদেশে ধীকৃত বিএনপি এখন অভিনব কৌশলে রাজধানীতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করে। এবার নাশকতায় এমন অভিনব কৌশল গ্রহণ করে যাতে মানুষ সন্দেহ করতে না পারে এগুলো তাদের কাজ নয়। কিন্তু বিধিবাম। এবারও অতীতের মতো তাদের এ পুুরিকল্পনা নস্যাত করে দেয় র‌্যাব। শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ৩ ছাত্রদল নেতাকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য ও বোমা তৈরির উপাদান উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের দখল থেকে বিস্ফোরক ভর্তি বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ৫৮টি ককটেল, ১টি পাইপবোমা, ৪৮টি পেট্রোলবোমা, ৫০০ গ্রাম সালফার পাউডার এবং নাশকতার কাজে ব্যবহৃত অনান্য সরঞ্জাম। পরে তাদের জবানবন্দীতে যা বের হয়ে আসে তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। র‌্যাব পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান নিজেও বিস্মিত হয়ে যান তাদের বয়ান শুনে। আটককৃতরা জানিয়েছেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থাপনায় চলতি সপ্তাহেই এ অভিনব কৌশলে নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নেয় তারা। কিন্তুু র‌্যাবের গোয়েন্দাগিরিতে তাও ধরা পড়ে যায়। আসলেই এটা অবিশ্বাস্য এক কৌশল। একটা বাইসাইকেল যে কোন স্থানে বা প্রতিষ্ঠানে পার্কিং করা সম্ভব। তাতে কারও সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। অথচ এই সাইকেলের বিভিন্ন পাইপের ভেতরেই এমন সূক্ষ্ম কৌশলে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি লুকানো হয়, যা কারোর পক্ষেই সন্দেহ করা সম্ভব নয়। তারপর সেই সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিলেই সেটা মুহূর্তেই বিকট শব্দে চারপাশে বড় ধরনের আতঙ্ক ছড়াত। সাইকেলটি যদি কোন ভবনের নিচে পার্কিং রেখে আগুন ধরানো হয় তাতে বড় ধরনের ধ্বংস কা- ঘটানো সম্ভব। র‌্যাব জানতে পারে এই চক্রটি খুলনা থেকে অভিনব পন্থায় ঢাকায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সামগ্রী সংগ্রহ করছে। তখনই সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় তাদের। শনিবার গভীর রাতে প্রথমেই রমনা থানাধীন কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি এলাকা হতে রাকীবুল ইসলাম ম-ল ওরফে রাকীব ওরফে শশী (২৫) আটক করা হয়। তারপর তার দেয়া তথ্য মতে রবিবার ভোরে সূত্রাপুর থানাধীন কলতা বাজারের একটি বাসা হতে মোঃ আমিনুল ইসলাম রানা (৩০) ও রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজকে (২২) আটক করে। তাদের তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, চলমান অবরোধ-হরতালে তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক (সাবেক কমিটি) আনিসুর রহমান খোকনের নির্দেশে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, মতিঝিল, কাওরান বাজার এবং ধানম-ি এলাকায় বিভিন্ন সময় ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাংচুরের মাধ্যমে নাশকতা চালিয়ে আসছে। নাশকতার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে খোকন তার আস্থাভাজন ছাত্রদল নেতা মোঃ আমিনুল ইসলাম রানা এবং রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজকে জনবল সরবরাহের নির্দেশ দেয়। রানা ও রিয়াজ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সময়ে তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের খোকনের নিকট পাঠাত। খোকন তার নিজ গাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরক বহন করে ভাড়াকৃত ছাত্রদল ক্যাডারদের নিকট সরবরাহ করত। খোকনের নির্দেশিত স্থানগুলোতে তারা হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটাত। এভাবে রানা ও রিয়াজের সরাসরি অংশগ্রহণ ও তত্ত্বাবধানে ভাড়াকৃত ছাত্রদল ক্যাডাররা গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের পাশের রাস্তায় ৪টি, গুলশান-১ মোড় এলাকায় ৩টি, ধানম-ি মেট্রো শপিং মলের নিকটবর্তী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পার্শ্বে ৪/৫টি, কাওরান বাজার হোটেল সোনারগাঁও এর বিপরীত সাউথইস্ট ব্যাংকের পার্শ্বে ৫/৬টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। জানা যায়, গুলশান-১ এলাকায় গত শুক্রবার অভিনব পস্থায় একটি গাড়িতে আগুন দেয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তুু সফল হতে পারেনি। এরপর তারা রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আনিসুর রহমান খোকনের আর্থিক সহায়তায় গ্রেফতারকৃত আসামি রানা খুলনা হতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করে। কিন্তু দেশের সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ নজরদারি থাকায় তারা ঐ বিস্ফোরক দ্রব্য ঢাকায় আনার ক্ষেত্রেও অভিনব পন্থা অবল¤¦ন করে। তারা বেশ কয়েকটি বাইসাইকেল সংগ্রহ করে। পরে দরজা বন্ধ ঘরে বসে ঐ বাইসাইকেল খুলে তার পাইপের ভিতর বিস্ফোরক দ্রব্য প্রতিস্থাপন করে। পরে সে পাইপগুলো আবার বাইসাইকেলে সংযোজন করে। মুফতি মাহমুদ খান জানান, পাইপের ভিতরে বিস্ফোরক দ্রব্য এমনভাবে লুকানো ছিল যাতে এর ফিউজে আগুন দেয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রচ- মাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটত। রানা অভিনব পন্থায় বাইসাইকেলের পাইপের ভিতর করে বিস্ফোরক দ্রব্য কুরিয়ার সার্ভিসযোগে গ্রেফতারকৃত আসামি রাকীবের ঠিকানায় ঢাকায় পাঠায়। কিন্তু এত পন্থা অবল¤¦ন করেও তারা র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে ব্যর্থ হয়। বিস্ফোরকভর্তি বাইসাইকেল, ৫৮টি ককটেল, ১টি পাইপ বোমা, ৪৮টি পেট্রোলবোমা, ৫০০ গ্রাম সালফার পাউডার এবং নাশকতার কাজে ব্যবহৃত অনান্য সরঞ্জামাদি হাতে নাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। এ ঘটনার মূল হোতা আনিসুর রহমান খোকন বর্তমানে আত্মগোপনে আছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য সম্ভাব্য সব জায়গায় র‌্যাবের জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কোথায় তারা নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিল জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ খান বলেন-বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে সেটা এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
×