ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

সুশীল সমাজে পাকিস্তানী প্রেতাত্মা

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৯ মার্চ ২০১৫

সুশীল সমাজে পাকিস্তানী প্রেতাত্মা

দিন দিন বাঙালীর সর্বনাশের পরিসর যেন বেড়েই চলেছে। চুয়াল্লিশ বছর আগে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল যারা, তারা আবার সশস্ত্র শক্তি নিয়ে একতরফা সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধের রেশ আজও শেষ হয়নি। তাই নতুন করে আবার যুদ্ধংদেহী অবস্থায় পরাজিতরা পুরো জাতির বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে, ঘোষণা দিয়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাঙালী নিধনে নেমেছিল, তারা আজ আবার সেই পথেই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। নানা কারণে এদের শক্তি আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। সমাজের নানা ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ও প্রভাব ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংক, প্রচার মাধ্যমসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এই পরাজিত শক্তি বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এদের আর্থিক যোগান অকল্পনীয়। তাই অস্ত্রবল তাদের জন্য কঠিন ও কষ্টকর কিছু নয়। এত কিছুর পরও তাদের প্রতি জনসমর্থন নেই। আর তা না থাকায় তারা সশস্ত্র পন্থাকেই বেছে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের বড় সহায়ক ব্যারাকে জন্ম ও আইএসএস মদদপুষ্ট বিএনপি। তারা বিএনপি নামক দলটিকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, দলটি এখন জামায়াতের রাজনীতিকেই প্রাধান্য দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। তাই বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে দু’মাসের অধিক। জামায়াত নারী নেতৃত্বের বিরোধী হলেও বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে তারা ‘আপোসহীন’ভাবে ছাড় দিয়েছে। জামায়াত চায়, তেঁতুল হুজুর খ্যাত শফী মাওলানার মত, নারীরা অন্তঃপুরে থাকবে। ক্রমান্বয়ে তারা বেগম জিয়াকে অন্তঃপুরবাসিনীতে পরিণত করেছে। বেগম জিয়া আর জনসমক্ষে আসেন না। ইন্জেকশান দিয়ে তাকে ঘুম পাড়াতে হয়। জামায়াত বেগম জিয়াকে তার বাড়ি থেকে বের করে এনে কাঁটাতার ঘেরা অফিসকে বাসভবন বানিয়ে সেখানে আবদ্ধ রেখেছে। বেগম জিয়াকে শিখ- রেখে, তার নামে আন্দোলনের কথিত কর্মসূচী ঘোষণা করা হচ্ছে। জামায়াতের লক্ষ্য, তাদের দলীয় নেতা, যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করা। স্বাভাবিক পন্থায় তা করা সম্ভব নয় বলেই নাশকতার মাধ্যমে অরাজকতা তৈরি করে ঘোলাজলে মৎস্য শিকার করতে চায়। জেল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বের করে আনার জন্যই তারা সহিংস পন্থা বেছে নিয়েছে। আর এজন্য জামায়াত ও আইএসআই নিয়ন্ত্রিত জঙ্গী সংগঠনগুলোকে মাঠে নামিয়েছে। জামায়াত খালেদা জিয়াকে অন্তঃপুরে রেখে রাজনীতি থেকে নারী নেতৃত্বের অবস্থানকে সঙ্কুচিত করে তুলতে চায়। আর বেগম জিয়াও জামায়াতের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলে নিজের ও পুত্রের দুর্নীতির মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে চান। তাই তিনি আদালতেও যান না; আইনকানুন, সংবিধান কিছু মানেন না। তিনি আইনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে চান। জামায়াত যেমন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল, তেমনি বেগম জিয়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। পাকিস্তানীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তিনি তাদের তত্ত্বাবধানে সেনাছাউনিতে ছিলেন। সেক্টর কমান্ডার স্বামী তাকে মুক্তাঞ্চলে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি কোন এক রহস্যজনক কারণে সেখানে যেতে চাননি। তাই জামায়াত ও খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ প্রশ্নে মনোভাব একই। তারা অনায়াসে এই দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে দ্বিধা করছে না। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যুগে দেখা যায়, জামায়াত অযথা উন্মাদনার সৃষ্টি করে মানুষকে মনুষ্যত্ব থেকে বিচ্যুত করার প্রচেষ্টা চালায়। মেধাবী ছাত্রকে সন্ত্রাসীতে, সশস্ত্র ক্যাডারে পরিণত করে। স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মেজর জিয়া রাজাকারদের সমাজ ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে। তারপর তারা ক্রমশ একীভূত হতে হতে আজ এক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যে শক্তি অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে। পাকিস্তানী হানাদারদের মতো এরাও চায় বাংলার মাটি, মানুষ নয়। একাত্তরে হারানো পূর্ব পাকিস্তানকে ফিরে পেতে চায় জামায়াত। এই যে বাংলাদেশকে সুসভ্য দেশ থেকে বর্বরের দেশে পরিণত করার সশস্ত্র চেষ্টা চলছে, তখন বিষয়টাকে খুব ঢিলেঢালাভাবে দেখা হচ্ছে। সভ্যতা মানুষের মনীষার সৃষ্টি। দেশের চিন্তা এবং জ্ঞানসাধনার বৃহত্তর অংশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সকল দেশে সকল যুগে সভ্যতা অতি অল্প সংখ্যকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশ যে নিজেকে সুসভ্য দেশ বলে আত্মপ্রসাদ অনুভব করে আসছে, বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্বরতার কারণে সেই আত্মপ্রসাদ অলীকে পরিণত হচ্ছে অনেকাংশে। স্বাধীনতার এত বছর পরও একাত্তরের স্মারক ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’য় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। যেমন তালেবানরা বামিয়ান পাহাড়ে বুদ্ধের ভাস্কর্য গ্রেনেড বিস্ফোরণে ধ্বংস করেছিল। কিংবা মিসরে আইএস জঙ্গীরা প্রাচীন সভ্যতার সব নিদর্শন ধ্বংস করে চলছে। এরা সবাই সভ্যতার বিরোধী। বরং এরা অন্ধকার ভালবাসে। ভালবাসে মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করতে। এ্যাটম বোমা যেমন রাজনীতির সৃষ্ট, পেট্রোলবোমা এবং জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরাও রাজনীতির সৃষ্টি। দেশ যখন ছিল বিদেশী রাজ্যের অধীন তখন দেশের মানুষ সকলেই ছিল স্বদেশ-অন্ত:প্রাণ। সকলেই দেশমাতার সন্তান। সেই মায়ের সন্তানরা এক সময় রাজশাসন মুক্ত হয় সম্মুখ সমরে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে স্বাধীনতা এনেছিল। পরাধীনতাকে দেশমাতার সন্তানরা যতখানি গুরুত্ব দিয়েছে, স্বাধীনতাকে ততখানি দেয়নি। পরাধীনতা যেমন অসহনীয়, অবাঞ্ছনীয়, স্বাধীনতা যে আবার তেমনি মহামূল্য ধন, সে কথাটি মনেপ্রাণে অনুভব করেনি। খুব হাল্কাভাবে নিয়েছে। স্বাধীনতার যারা সশস্ত্র বিরোধী ছিল, তাদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন, তাদের কর্মকা-কে আর গুরুত্ব না দেয়ার মতো আলস্য-শৈথিল্যের বহর বেড়েছে। পরাধীনতার পাপ বিদায় করতে যতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে পুরো জাতিকে, স্বাধীনতার পুণ্যফল ভোগ করতেও আবার তেমনি কৃচ্ছ্রসাধনের, সতর্কতার, সংহতির প্রয়োজন রয়েছে। উপলব্ধিতে তা আসেনি। দেশের কাজে আনন্দ আছে, আরাম নেইÑএই বোধ আর কারও মধ্যে সঞ্চারিত হয়নি। দেশের মর্ম বুঝেছিলেন তাঁরাই, যাঁরা দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছেন, নির্মম নৃশংসতার শিকার হয়েছেন। অপরদিকে স্বাধীনতাকে যতখানি মর্যাদা দেবার কথা তা-ও দেয়া হয়নি। আর এই শৈথিল্য এনে দেয় নির্মম দৃশ্যপট। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার তূর্য নিনাদ থেমে যায়। কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া হয়, ধ্বংস করা হয় স্বাধীনতার অর্জিত সব মূল্যবোধ। এটাও স্বাধীনতা অর্জনকারীদের এক বিশাল পরাজয় বৈকি। পুরো দেশটি ফিরে গেছে যুদ্ধপূর্ব সময়ে, যেখানে পরাজিত শক্তির উত্থানপর্ব ঘটে। একটা জাতির স্বাধীন সত্তাকে আবার পরাধীনতার যূপকাষ্ঠে বলি দেয়া হলো যেন। পরাজিতদের ষড়যন্ত্র সফল হবার পথে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে কোন বাধা আসেনি। বরং মুক্তিযোদ্ধারা হতবিহ্বল, দ্বিধান্বিত নানা মত ও পথে ধাবিত হবার কারণে। নিজেরা নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম ঘটে। রাজনীতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল জান্তারা। যারা স্তব্ধ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল, চেয়েছিল রাজনীতিকে কঠিন করে তোলার। রাজনীতি জিনিসটি বড় সিধে নয়। রাজনীতিক হয়ে ওঠেন ক্ষমতালোভী, সুযোগসন্ধানী, ফন্দিবাজ। ন্যায়-অন্যায় বোধ ঢিলে হয়ে যায়। রাজনীতিকরা হয়ে যায় কেনাবেচার পণ্য। ফলে রাজনৈতিক দ্বন্দে¦, অর্থনৈতিক সমস্যায়, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায়, লুটপাটের মহিমায় দেশময় এক অতি জটিল অবস্থা বিস্তার লাভ করেছিল। সে অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে আরও রক্তক্ষয়, আরও প্রাণহানির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে জাতিকে। তথাপি মুছে দেয়া মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা এখনও প্রবহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের যখন অভ্যুদয় ঘটে, তখনকার বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট ছিল একরকম। শীতল যুদ্ধের কাল তখন। একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্য পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং সোভিয়েত, উভয় রাষ্ট্রই বাংলাদেশকে সর্বাগ্রে সমর্থন করেছে। যুদ্ধোত্তর সময়েও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেল। দুই পরাশক্তির একটি স্তিমিত হয়ে গেলেও অপরটি হয়ে ওঠে একক পরাশক্তি। ফলে একুশ শতকের ঘটনাপ্রবাহকে কোন এক দেশের পক্ষে আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেন যেভাবে দুনিয়াকে প্রভাবিত করেছিল বা বিশ শতকে আমেরিকার যে অবস্থান ছিল, একুশ শতকের বিশ্বে এরকম অবস্থান আর কোন দেশের হবে না বলে ধারণা করা হয়। তথাপি বিশ্ব রাজনীতির যারা নিয়ন্ত্রক তারা তো আর নিশ্চুপ থাকে না। তৎপরতা ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ আজকেও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, যারা এ দেশটির স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। হানাদারদের সমর্থনও করেছিল। তারা সেই অবস্থানে আজ আর নেই। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান হচ্ছে দু’টি বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি ভারত ও চীনের মাঝখানে। কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব তাই সাম্প্রতিককালে অনেক বেড়ে গেছে। একাত্তরে শুধু পাকিস্তানই পরাজিত হয়নি। হয়েছে তাদের সরব সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র এবং নীরব সমর্থক চীনও। যুক্তরাষ্ট্র পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে একার্থে ১৯৭৪ সালে। খাদ্যবাহী জাহাজ না পাঠানোয় দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি পাকিস্তান। তাই হেরে যাবার পরপরই নানা ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশকে ঘিরে। ভুট্টো ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনের পথে বিমানে ওঠার আগে শেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার। শেখ মুজিব তাতে রাজি হননি। কিন্তু জামায়াত সেই কনফেডারেশনের পথ ধরেই গত চুয়াল্লিশ বছর ধরে পথ পরিক্রম করছে। তারা সহযোগী হিসেবে পেয়েছে বিভিন্ন পেশার বহুজনকে। একাত্তরে পাকিস্তানীদের ‘সুশীল সমাজের’ কথিত বাঙালী ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ড. হাসান জামান, ড. কাজী দীন মুহম্মদ, ড. মোহর আলী, ড. শমসের আলী গয়রহরা জাতিসংঘে গিয়ে তাদের সাধের ‘পূর্ব পাকিস্তান’কে রক্ষা করার জন্য তদ্বির চালিয়েছে। বোঝাতে চেয়েছে সেখানে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। নানা কসরত করে বুঝাতে চাইতেন যে, অবস্থা স্বাভাবিক বলেই তারা অতদূর আসতে পেরেছেন। এই ঘৃণ্য শিক্ষিতজনরাই তাদের সহকর্মী শিক্ষকসহ অন্যান্য পেশার জনকে হত্যার প্ররোচনাও দিয়ে আসছিল। তারা জাতিসংঘে গিয়ে বলেছে, পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যথাসময়ে ‘ভারতীয় চরদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় শান্তির সুপবন বহিতেছে ‘পূর্ব পাকিস্তানে।’ তাদেরই অনুরূপ আজ ড. এমাজউদ্দীন, ড. কামাল হোসেন এবং তাদের আরও সমমনা পাকিস্তানী চেতনাধারী সাঙ্গপাঙ্গরাও বিদেশীদের কাছে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রকে সামনে রেখে এই বলে অভিযোগ জানাচ্ছে যে, দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখা মাত্রই পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারীসহ সন্ত্রাসীদের গুলি করার নির্দেশ বলবৎ আছে। বোমাবাজদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে। শুধু এসব বলেই (অপপ্রচার আর কাকে বলে!) তারা ক্ষান্ত হচ্ছেন না। তারা আরও বলছেন, এসব হত্যা বিচারবহির্ভূত। বোমাবাজদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হচ্ছে না। বিশেষ মহলের এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামা এসব সুশীলরা পেট্রোলবোমা মেরে যে অসহায়, নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে এবং তা বেগম জিয়া-জামায়াতের নির্দেশে, সে প্রসঙ্গটি কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। বরং তারা এসব হত্যাকে রাজনৈতিক সঙ্কট অভিধা দিয়ে তাদের বৈধতা দিতে বলা হয়। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোর বিরোধী এরা। ভাবতে বিস্ময় লাগে যে, দেশের শিক্ষিতজন, যারা নিজেদের ‘সুশীল সমাজ’ বলে অভিহিত করে বেশ আত্মপ্রসাদ লাভ করেন, তারাও বোমাবাজ, সন্ত্রাসীদের পক্ষে। এদের চরিত্র হিটলারের এস এস বাহিনীর মতো। তাদের প্রোপাগান্ডা মেশিনারিজ দিয়ে অনবরত চেষ্টা করা হচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সাড়ম্বরে প্রচার। সুশীলের মুখোশ পরা এই শিক্ষিতরা দেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। এদের সঙ্গে যোগসূত্র ঘটেছে কতিপয় প্রচার মাধ্যমের। যারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের পক্ষাবলম্বন করে আসছে। এমনকি তাদের তৎপরতার পক্ষে সাফাই গাইছে। চলমান ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ পেছনে যে রাজনীতি নেই, আছে ষড়যন্ত্র, এই সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে, যাতে দেশকে জঙ্গীবাদের খপ্পরে ফেলার জন্য বিএনপি-জামায়াত অবরোধ-হরতাল চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন জোটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা এখন আর নেই বিএনপির। মাঠে নেমে তাদের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলাও প্রায় অসম্ভব। সরকারী দলও চায় না সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াতে। মিডিয়ানির্ভর কথিত আন্দোলন নিয়ে বিএনপি তার লক্ষ্য পূরণে মরিয়া। মিডিয়া যদি একদিন বিএনপি-জামায়াতের তা-বলীলার ‘কভারেজ’ বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশের কোন মানুষ এই ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুই জানবে না। একাত্তরের মার্চে বাঙালী জাতি তার স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী পাঠাতে থাকে। এতে করে সংখ্যায় বেড়ে যেতে থাকে হানাদারের সংখ্যা। তারপর ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু করে। আজকেও তাই ‘সংলাপ’ নামক প্রলাপ চালানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। সংলাপের ফাঁকে ওরা জঙ্গীর সংখ্যা বাড়িয়ে তারপর ব্যাপক গণহত্যায় মত্ত হবার স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন পূরণে তারা পেট্রোলবোমা ও কৃপাণ চালিয়ে হাত মকশো করছে। ক্রমান্বয়ে সরকারী স্থাপনায়ও হামলা করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই হামলার পরিধি হয়ত আরও বাড়বে। তারা একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধে মত্ত। সেই যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। তাই তারা একাত্তরের পথ ধরে হাঁটছে। হত্যা করছে দেশের মানুষকে। কম্বোডিয়ায় মার্কিন সেনাদের বর্বরোচিত হামলা দেখে ১৯৭৪ সালে একুশের কবি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছিলেন কবিতা, “ভেবেছিলাম থাকবো নিরপেক্ষ/ ঈগল নিল উপড়ে আমার চোখ/ এখন আমার নেইকো পক্ষাপেক্ষ/ এক কাতারে সবাই সামিল হোক।” (রক্তরাখি পরায় কম্বোডিয়া)। আজ তাই বাংলার মুক্তিকামী মানুষের নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই। একাত্তরের যুদ্ধের রেশ ধরে তাকে এক হয়ে লড়াই করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা তাই সর্বাগ্রে জরুরী।
×