ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আক্রান্ত সাংবাদিক

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৯ মার্চ ২০১৫

আক্রান্ত সাংবাদিক

দেশ ও সমাজের কল্যাণ এবং উন্নতির নেপথ্যে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা আজ প্রতিষ্ঠিত। পক্ষপাতহীন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় উপকৃত হয় মানুষ। যারা কোন না কোনভাবে অনৈতিকতা ও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তারাই সংবাদমাধ্যমকে ভয় পায়। নিজ অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই তারা গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে চায়, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ চালায়। বিশ্বের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, অপরাধ, মতানৈক্য ও দমন-পীড়নের খবর চাপা দেয়ার জন্য পুরনো কৌশলের পাশাপাশি নতুন নতুন সব হুমকির মোকাবেলা করতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্বের স্বাধীন সাংবাদিকতার বড় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেও বাংলাদেশে প্রভাবশালী ও অর্থনৈতিক বিচারে মহল বিশেষ সাংবাদিকতার জন্য বারবার হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব প্রতিকূলতা কাটিয়েই দেশে সাংবাদিকতার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কেউ কুকর্ম করে রেহাই পায় না। সে সংবাদটি কোন না কোন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বিগত অর্ধ দশকে দেশে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যাপক প্রসারের ফলে অনলাইনে অত্যন্ত অল্প সময়ের ভেতর কোন সুখবর বা দুঃসংবাদ রাষ্ট্র হয়ে যায়। আর মুহুর্মুহু তার প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। সাংবাদিকতার এসব সফলতার পাশাপাশি সাংবাদিক নির্যাতন থেমে নেই। গত ১৭ বছরে রাজধানীসহ সারাদেশে কমপক্ষে ১৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। আর দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছেন শতাধিক। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরাই বেশি হুমকির মুখে থাকেন। সাংবাদিকতার আদর্শ উর্ধে তুলে ধরার প্রাণান্ত চেষ্টায় বারবার তাঁরা বিপদগ্রস্ত হন। তাঁদের বিপদমুখী হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এটা অনস্বীকার্য যে, মফস্বলের তথা ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নের খবর প্রকাশে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এমন বহু সাংবাদিক রয়েছেন যাঁরা গ্রামীণ জনপদে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এলাকাবাসীর সম্মান অর্জন করেছেন। অনেকে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃতও হয়েছেন। শুক্রবার ঢাকার বাইরে দুটি এলাকায় দু’জন সাংবাদিকের ওপর নৃশংস আক্রমণ হয়েছে। জনকণ্ঠের লালমনিরহাটের নিজস্ব সংবাদদাতা জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে জবাই করার চেষ্টা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। অন্যদিকে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নতুন ফেনী ডটকমের সম্পাদক রাশেদুল হাসানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে দুই হাত ভেঙ্গে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। জনকণ্ঠের সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ নতুন নয়। এর আগে ২০০০ সালের ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠের যশোর অফিসে ঢুকে বিশেষ প্রতিনিধি শামছুর রহমানকে হত্যা করা হয়। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের অকুতোভয় নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে সাতক্ষীরার আলাউদ্দিন, ঝিনাইদহের মীর ইলিয়াছ হোসেন দিলীপ, খুলনার ডুমুরিয়ার নহর আলী ও শুকুর সরদার, খুলনা নগরীর হুমায়ুন কবির বালু ও মানিক সাহা, যশোরের সাইফুল আলম মুকুল, বগুড়ার দীপঙ্কর চক্রবর্তী, ফরিদপুরর গৌতম সাহাসহ আরও অনেকে রয়েছেন। শুক্রবার আক্রান্ত দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে প্রশাসন। এ ব্যাপারে সামান্যতম গাফিলতি কাম্য নয়। সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে যারা আক্রমণ করে তারা শুধু সাংবাদিকতার নয়, তারা দেশ ও জাতির শত্রু।
×