ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনা পয়সায় পুরুষের চেয়ে ৫ গুণ বেশি কাজ করে নারী

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৮ মার্চ ২০১৫

বিনা পয়সায় পুরুষের চেয়ে ৫ গুণ বেশি কাজ করে নারী

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ টাকা ছাড়াই বাংলাদেশের পুরুষের চেয়ে মহিলারা ৫ গুণ বেশি কাজ করে। অথচ বিনোদন ও অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে পায় কম সময়। একজন কর্মে নিয়োজিত নয় এমন পুরুষ খানার (পরিবারের) কাজে খানার সদস্যদের সেবা প্রদান ও খানার নিজস্ব ভোগের গৃহস্থালির কাজে ১ দশমিক ২ ঘণ্টা ব্যয় করলেও একজন নারী সেখানে প্রায় ৫ গুণ বেশি কাজ করে। এ ক্ষেত্রে নারীরা ৬ দশমিক ২ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে থাকে। অন্যদিকে কর্মে নিয়োজিত নয় এমন পুরুষরা যেখানে অবসর ও বিনোদনে ২ দশমিক ২ ঘণ্টা ব্যয় করে, সেখানে নারীরা মাত্র ১ দশমিক ৩ ঘণ্টা অবসর ও বিনোদনে সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রথমবারের মতো পরিচালিত টাইম ইউজ সার্ভে রিপোর্টে এ চিত্র উঠে এসেছে। এটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অন্যদিকে বাংলাদেশের যুব নারীদের একটি বড় অংশই থাকছে শ্রম শক্তির বাইরে। এ সংখ্যা হচ্ছে ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ। যারা কাজে যুক্ত রয়েছে তার মধ্যে যেখানে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ যুবক যেখানে কর্মে নিয়োজিত সেখানে মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মক্ষম যুব নারী কাজে নিয়োজিত। এক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে পরিচালিত অপর এক জরিপের ফলে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের শ্রম শক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ যদিও বেড়েছে কিন্তু তা এখনও পুরুষের চেয়ে অনেক কম। তাছাড়া নারীর আধিক্য সেসব জায়গায় বেশি দেখা যায় যেখানে বেতন বা রিটার্ন কম। অর্থাৎ তারা নিচের দিকে কাজ করে, যেখানে সুযোগসুবিধা কম। শ্রম বাজারে নারীরা অনেক কম সুযোগ পাচ্ছে। তাই এ অংশটি অর্থনীতিতে বা সমাজে পুরো অবদান রাখতে পারে না। যুব কর্মসংস্থানের সমস্যাটি বাংলাদেশের জন্য ঘনীভূত হচ্ছে। যারা ইয়ুথ তাদের কাজে সুযোগ আরও কম। বিভিন্ন কারণে তাদের কর্মে নিয়োজিত করা যাচ্ছে না। এটি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তাই সামগ্রিকভাবে কর্মস্থানকে মৌলিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখতে হবে। সরকারকে চেষ্টা নিতে হবে যাতে গুণগত কর্মসংস্থান বেশি তৈরি করা যায়। তাহলেই যুব শ্রমশক্তিকে বেশি কাজে লাগানো যাবে। তিনি বলেন, মহিলা পুরষের চেয়ে বেশি কাজ করলেও তাদের অবদান জিডিপিতে যুক্ত হচ্ছে না। এটি ঠিক নয়। তারা টাকা না পেলেও তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। টাইম ইউজ সার্ভের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মে নিয়োজিত পুরুষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে কাজে ৬ দশমিক ৯ ঘণ্টা ও মহিলারা ৫ দশমিক ২ ঘণ্টা ব্যয় করে। কর্মজীবী নারী গৃহস্থালীর কাজে পুরুষের চেয়ে ৩ গুণ বেশি সময় ব্যয় করে। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ১ দশমিক ৪ ঘণ্টা ও মহিলারা ৩ দশমিক ৬ ঘণ্টা কাজ করে। কর্মজীবী পুরুষেরা ১ দশমিক ১ ঘণ্টা অবসর খেলাধুলা ও বিনোদনে ব্যয় করলেও একই কাজে মহিলারা শূন্য দশমিক ৮ ঘণ্টা ব্যয় করে। ব্যক্তিগত পরিচর্যার ক্ষেত্রে ও কর্মে নিয়োজিত নয় এমন মহিলারা পুরুষের চেয়ে কম সময় পায়। এখানে পুরুষের সময় ব্যয়ের পরিমাণ ২০ দশমিক ৪ ঘণ্টা ও পক্ষান্তরে মহিলার সময় ব্যয়ের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৫ ঘণ্টা। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যৌথ পরিচালিত স্কুল টু ওয়ার্ক ট্রানজিশন সার্ভে ২০১৩-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যুব মহিলাদের একটি বড় অংশই থাকছে শ্রম শক্তির বাইরে। এ সংখ্যা হচ্ছে ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত কারণেই এ বৈষম্য বিদ্যমান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশের মোট যুব শক্তির ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করে কাজে নিয়োজিত ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অর্থছাড়াই পারিবারিক কর্মে নিয়োজিত ১১ দশমিক ১ শতাংশ যুবশক্তি।
×