ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বলেন অভিজিতের বাবা অজয় রায়

স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে দিন এফবিআইকে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৮ মার্চ ২০১৫

স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে দিন এফবিআইকে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ছেলে অভিজিত রায়ের হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাবা ঢাবির সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়। শনিবার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে তদন্তের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের এই অনুরোধ জানান অধ্যাপক অজয় রায়। তিনি বলেন, আমি গোয়েন্দা পুলিশকে অনুরোধ করেছি, এই হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে এফবিআই যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। আমি তাদের অনুরোধ করেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা যেন অপরাধীদের খুঁজে বের করে। নিহত অভিজিত রায়ের বাবা অজয় রায় সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিতের হত্যা তদন্তে এফবিআই সদস্যরা এসেছেন জানলেও তার সঙ্গে এখনও কোন যোগাযোগ করেননি তারা। গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইউরোপীয় ও আফ্রিকানদের মতো দেখতে দুই ব্যক্তি সেখানে দেখতে পেয়েছেন তিনি। তবে তারা এফবিআই সদস্য কি না তা জানানো হয়নি তাকে। অভিজিত হত্যার পেছনেও ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের হাত রয়েছে বলে মনে করেন তার বাবা অজয় রায়। অজয় রায় সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গী দুর্বৃত্ত ও মৌলবাদীরা অভিজিতকে হত্যা করেছে বলে আমার ধারণা। তিন-চার বছর পর অভিজিত দেশে এসেছিল। কারও হুমকির কারণে সে ভীত বা আতঙ্কিত ছিল বলে আমার মনে হয়নি। বরং আমিই তাকে বলেছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বইমেলায় যেতে। বিকেলের আগে বাসায় ফিরে আসতে বলেছিলাম তাকে। লেখালেখির জন্য অভিজিতকে বড় জোর হুমকি-ধমকি বা মারধরের শঙ্কা থাকতে পারে। তবে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে কখনও মনে হয়নি বলেন তিনি। আমার ধারণা ছিল বড় জোর কেউ তাকে মারধর বা ধমক দিতে পারে। কিন্তু একেবারে মেরে ফেলবে এটা ভাবিনি কখনও। অজয় রায় জানান, হত্যা তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দারা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাদের কার্যালয়ে যান তিনি। তারা অভিজিতের বিষয়ে কিছু তথ্য মিলিয়ে নিয়েছে। যেমন পুরো নাম, কতদিন ধরে দেশের বাইরে আছেন, যখন হামলা হয়েছিল, ঠিক তখন অভিজিতের স্ত্রী তার সঙ্গে ছিলেন কি না, ইত্যাদি তার কাছে জানতে চেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ছেলের হত্যাকা-ের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেননি তিনি। তবে অসন্তোষের সুর ছিল পুত্রহারা বাবার কণ্ঠে। তিনি বলেন, তদন্তে সন্তুষ্ট সেটা বলব না আমি, অসন্তুষ্ট সেটাও বলব না। কারণ তাদের ওপর আমাদের নির্ভর করতেই হবে। সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে কয়েক দশক ধরে সোচ্চার ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের সাইটের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী অভিজিত। সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল তাকে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে একুশের বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ফুটপাথে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিতকে। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয়েছে হামলায় আহত বন্যাকে। স্বামীর মতো ব্লগার বন্যাও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। হত্যাকা-ের চারদিন পর ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয় শফিউর রহমান ফারাবীকে। ইন্টারনেটে ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রচারক ফারাবী ফেসবুকে অভিজিতকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে হত্যাকা- সম্পর্কে স্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এর মধ্যেই হত্যা তদন্তে সহযোগিতার জন্য ঢাকা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-এফবিআইয়ের চার সদস্য। এফবিআই সদস্যরা বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেই গোয়েন্দাদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে অভিজিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংগৃহীত আলামত ও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানেন। যে স্থানে অভিজিতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, পরের দিন শুক্রবার সেই স্থান এবং বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন এফবিআই সদস্যরা। ডিএমপি কমিশনার বলেন ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, অভিজিত রায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন বলেই তার হত্যাকাণ্ড তদন্তে ঢাকায় এসেছেন এফবিআই কর্মকর্তারা। এই হত্যা তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশের সামর্থ্যরে ওপরও নিজের আস্থার কথা জানান ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপি কমিশনার শনিবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অভিজিত হত্যা মামলার তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ঘটনাটি তদন্ত করার সক্ষমতা তাদের আছে। এফবিআই কেবল তাদের কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। অভিজিত হত্যাকা-ের বিভিন্ন আলামত বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার যেসব তথ্য ও রেকর্ড আছে, তা বিশ্লেষণ করে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেন তিনি। বলেন, তবে এক্ষেত্রে সহায়তা করছে এফবিআই। তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ফারাবী ভাল তথ্যের উৎস হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। যারা সরজমিনে বিষয়টি কার্যকর (খুন) করেছে, তাদের শনাক্তে কাজ করব আমরা। তদন্ত জোরেশোরেই চলছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
×