ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পারিবারিক আইনেই বড় বৈষম্যের শিকার নারী ;###;শতকরা ৮৭ নারী পারিবারিক নির্যাতন ভোগ করে ;###;মৌলবাদই অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বড় বাধা

আজ বিশ্ব নারী দিবস- অগ্রগতিতে মাইল ফলক ॥ আইনই বাধা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৮ মার্চ ২০১৫

আজ বিশ্ব নারী দিবস- অগ্রগতিতে মাইল ফলক ॥ আইনই বাধা

আনোয়ার রোজেন ॥ নারীর অগ্রগতির জোয়ার দৃশ্যমান, তাতে কোন সন্দেহ নেই। দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদের উপনেতা- সবাই নারী। যোগ্যতা বলে নারী হচ্ছেন উচ্চ আদালতের বিচারক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পুলিশ, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, সচিব, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে রাখছেন বিরাট অবদান। নারীর অর্জনের ঝুলিতে প্রতিবছরই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাইলফলক। কিন্তু নারীর সাফল্যে উদ্ভাসিত এমন আলোর নিচেই আছে একগুচ্ছ ‘অন্ধকার’। বিভিন্ন আইনী অসমতা নারী অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে উঠছে। প্রচলতি ঔপনেবিশক আমলের ধর্মভিত্তিক বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন দেশে নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই সব আইন বিলোপে নারী মুক্তির সিডও সনদের সংরক্ষণ ২১ বছরেও প্রত্যাহার করতে পারেনি বাংলাদেশ। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা মৌলবাদী শক্তির কারণে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের উদ্যোগ আজও থমকে আছে। আজও শতকরা ৮৭জন নারী জীবনের কোন না কোন সময় পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আবার তাদের মধ্যে আইনের আশ্রয় নিতে সক্ষম হচ্ছেন মাত্র ২ শতাংশ নারী। বিচারে দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা কারণে বিদ্যমান নারীবান্ধব আইনের কার্যকারিতাও মাত্র ১০ শতাংশ। আর দেশের ১৭ লাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য কোন সুনির্দিষ্ট পারিবারিক আইনই নেই। এমন পরিস্থিতিতে ‘নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে আজ দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী ও পুরুষের মধ্যে মানবিক সমতা অর্জনে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দেয়া বাকি। তাই প্রতিবছরের মতো আজও নানা আনুষ্ঠাকিতায় নারী শপথ নেবে বাঁধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর নারী সমাজ আইনের ক্ষেত্রে এখনও কার্যত বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার। সাম্প্রতিক অতীতে নারীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে কয়েকটি কঠোর আইন প্রণীত হলেও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা কারণে সেগুলোর সুফল নারীরা পাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সালমা আলী জনকণ্ঠকে বলেন, বিদ্যমান যে সব আইনকে নারীবান্ধব বলা হয়, সেগুলোরও মাত্র ১০ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সূত্র মতে, গত এক বছরে দেশে ৫ হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ হিসেবে দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অথচ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নির্যাতিতদের মধ্যে আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন মাত্র ২ শতাংশ নারী। বাংলাদেশে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএ’র জরিপ অনুযায়ী, দেশে শতকরা ৮৭ জন নারী তাদের স্বামী বা স্বামীর পরিবারের সদস্যদের দ্বারা জীবনের কোন না কোন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আইন থাকলেও এখনও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যায়নি। ২০১১ সালের সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের (বিডিএইচএস) তথ্যানুযায়ী, দেশে বাল্যবিয়ের হার ৬৬ শতাংশ। ইউএনএফপিএ’র তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচাইতে বেশি। বাংলাদেশের পরে ৪৭ শতাংশ বাল্যবিয়ের হার রয়েছে ভারতে। দেশে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে বাল্যবিয়ের ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণমাধ্যমের তৎপরতার কারণে কিছু কিছু বিয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করার চিন্তা ভাবনা করেছিল খোদ সরকার। তবে সমালোচনার মুখে সরকার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত করেনি। অন্যদিকে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রচলিত পারিবারিক আইন দেশের নারী সমাজের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টানÑ এই চারটি প্রধান ধর্মাবলম্বীদের পারিবারিক আইনের গুণগত পার্থক্যের কারণে একই পরিস্থিতির শিকার নারীদের বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির। একজন মুসলমান বিবাহিত নারীকে তার বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটাতে যে সব আইনী বাধার সম্মুখীন হতে হয় তা একজন খ্রীস্টান নারীকে একই পরিস্থিতিতে হতে হয় না। আবার একজন হিন্দু নারীকে বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটানোর ক্ষমতাই আইন দেয়নি। বৌদ্ধরা অনেকাংশে হিন্দু আইন অনুসরণ করে। বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও এসব নারীকে ভিন্ন ভিন্ন বিধান মানতে হচ্ছে। যার কারণে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানেও আসছে ভিন্নতা। আবার দেশের বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রায় ১৭ লাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য কোন সুনির্দিষ্ট পারিবারিক আইনই নেই। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত নিজেদের প্রথা ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করেই নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের পারিবারিক জীবন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কন্যাসন্তান হিসেবে জন্ম নিয়ে নারী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন পরিবার থেকেই। আর পারিবারিক পর্যায়ে নারী নির্যাতনের অন্যতম প্রধান কারণ বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন। সংবিধানের ১০, ১৬, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ ধারা এবং এগুলোর উপধারায় নারীর মৌলিক অধিকার রক্ষার কথা ঘোষণা করা হলেও প্রচলিত অসম আইনকে অবৈধ বা বাতিল ঘোষণা করা হয়নি। সরকার পারিবারিক সুরক্ষা ও সহিংসতা প্রতিরোধ আইন-২০১০, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২, সরকারী চাকরি বিধি সংশোধন করে মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় বাড়ানো, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন (সংশোধন) আইন-২০১৩, মাতার নাগরিকত্বে সন্তানের নাগরিকত্ব আইন, ইভটিজিং প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট আইনসহ বেশ কয়েকটি আইন করতে পারলেও এখন পর্যন্ত সম্পদ-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমতা ও অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করতে পারেনি। প্রচলিত পুরনো ও বৈষম্যমূলক আইনগুলোর যুগোপযোগী সংস্কারে নেয়া হয়নি কার্যকর কোন উদ্যোগ। অথচ প্রতিবেশী ভারত ১৯৫৬ সালেই পুরনো আইন সংস্কার করে দেশটির নাগরিকদের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ প্রণীত ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ’ সনদে (সিডও) স্বাক্ষর করেছে ১৯৮৪ সালে। কিন্তু অনুমোদনের ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও সনদের ২ এবং ১৬.১ (গ) ধারার বিষয়ে আপত্তি প্রত্যাহার করা হয়নি। ২ ধারায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন বাতিল করে নারী পুরুষের সমতার ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। আর ১৬.১ (গ) উপধারায় বিয়ের সম্পর্ক অক্ষুণœ থাকাকালীন অথবা বিয়ে বিচ্ছেদের স্তরে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ও দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। সম্পদ-সম্পত্তিতে অধিকারে বৈষম্য ॥ ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ সাম্যবাদী কবি কল্যাণকর সৃষ্টির কৃতিত্বের অর্ধেক নারীকে দিয়ে দিলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তা দিতে চায় না। তাই সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমতার অধিকারের বিষয়টিও আজও উপক্ষেতি। দেশে উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি অধিকার সংক্রান্ত আইন আছে কমপক্ষে ১০টি। সব আইনই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে প্রণীত। এগুলো হলো- উত্তরাধিকার আইন-১৯২৫, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন-১৮৮২, হিন্দু স্ত্রীলোকের সম্পত্তির অধিকার আইন-১৯৩৭, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও প্রতিপাল্য আইন-১৮৯০, এতিম ও বিধবা অংশীধারী আইন-১৯৪৪, শরিয়াহ ভিত্তিতে প্রচলিত মুসলিম উত্তরাধিকার আইন, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন-১৯২৯, খ্রীস্টান উত্তরাধিকার আইন, সাক্ষ্য আইন-১৮৭২, হিন্দু উত্তরাধিকার (অক্ষমতা অপসারণ আইন ও হিন্দু সম্পত্তির বিলি বন্দোবস্ত আইন-১৯১৬। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত এসব আইনের প্রতিটিতে উত্তরাধিকার ও সম্পদ-সম্পত্তির অধিকার প্রশ্নে নারীর অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তিতে পুরুষের সমান অংশীদারিত্ব দেয়ার বদলে ধর্মের অপব্যাখ্যার সুযোগ নিয়ে কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এ্যাডভোকেট এলিনা খান জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক আধুনিক আইন প্রণীত হলেও প্রাচীন এসব আইন বাতিল করা হয়নি। কোন সরকারই সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারেনি। উল্টো ১৯৯৭ সালে প্রণীত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালায় সম্পদ-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের ‘সমান অধিকার’ অংশটি বাদ দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালে প্রণীত নীতিমালায় ভাষা পরিবর্তন করে ভারসাম্যমূলক ‘সমতা বিধানের’ কথা বলা হয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা ও দৃঢ় পদক্ষেপ ছাড়া বিষয়টি বাস্তবায়ন হওয়ার কোন সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতেও নেই বলে মনে করেন তিনি। শুধু সম্পদ-সম্পত্তির ক্ষেত্রেই নয়, বৈষম্য আছে ব্যক্তিগত আইনের ক্ষেত্রেও। দেশে পারিবারিক আইন আছে তিন ধরনের। এগুলো হলো- মুসলিম পারিবারিক আইন, হিন্দু পারিবারিক আইন ও খ্রীস্টান পারিবারিক আইন। এসব আইনে বিবাহ, বহু বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, খোরপোষ বা ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত বিষয়ে নারী-পুরুষ ও ধর্মভেদে ভিন্ন ভিন্ন বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত এসব আইনের বিধানগুলোও ত্রুটিপূর্ণ। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ১০ নম্বর ধারায় দেনমোহর প্রদানের কোন পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হয়নি। নিকাহনামা রেজিস্ট্রেশন ফর্মের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে পাত্রী কুমারী/বিধবা/তালাকপ্রাপ্তা নারী কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে। অথচ পাত্রের ব্যাপারে অনুরূপ কোন তথ্য চাওয়া হয়নি। আবার মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট-১৯৭৪ অনুযায়ী বিয়ের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। তবে মৌলভী দ্বারা পড়ানোও বৈধ। একই সঙ্গে দ্বৈত ব্যবস্থা ও দেনমোহর প্রদানের সুুনির্দিষ্ট পদ্ধতির উল্লেখ না থাকায় নারীই শুধু ভুক্তভোগী হন। এ প্রসঙ্গে এ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, ইরানসহ বহু মুসলিম দেশে বিয়ের সময়ই দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। এমনকি ওইসব মুসলিম রাষ্ট্রের অনেকেই সিডও সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রগতিশীল পদক্ষেপ নিয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে নাগরিকদের ব্যক্তিগত অধিকার অভিন্ন পারিবারিক আইনের আওতায় সংরক্ষিত। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয়নি। এত বছরেও সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। উপরন্তু মৌলবাদীদের দ্বারা আমরা প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছি, যা সিডও সনদের সংরক্ষিত দুটি ধারা প্রত্যাহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তবে সরকার দৃঢ় হলে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। ১৮৭২ সালের খ্রীস্টান ম্যারেজ এ্যাক্টে নারীর বিবাহ বিচ্ছেদ ও সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে নারীর অধিকারকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনটিও মান্ধাতা আমলের। আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশনকে ঐচ্ছিক করা হয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশে হিন্দু বিবাহ অবিচ্ছেদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের কোন সহজতর ব্যবস্থা ওই আইনে নাই। যেমনটি মুসলিম আইনে আছে। অথচ ভারত অনেক আগেই এই আইনটির সংস্কার করলেও বাংলাদেশ করেনি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ জনকণ্ঠকে বলেন, হিন্দুদের মধ্যে পশ্চাৎপদ একটি অংশের আপত্তির অজুহাতে সরকার আইনটির প্রয়োজনীয় সংস্কারে উদ্যোগ নিচ্ছে না। আইনটির সংস্কারের বিষয়ে হিন্দু নারীদের আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। এখানে সরকারের সদিচ্ছাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনিও মনে করেন, সিডও সনদের আলোকে অভিন্ন পারিবারিক আইন করা গেলে হিন্দু নারীদের অধিকার আরও বেশি সুরক্ষিত হবে। অনুমোদনের ২১ বছর পরও কেন সিডও সনদের ধারা ২ এবং ১৬.১ (গ) বিষয়ক সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে না- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশ ও সমাজের বাস্তবতার দিকটিও বিবেচনায় নিতে হয়। আন্তর্জাতিক সনদের সবকিছু একবারে গ্রহণের মতো পরিবেশ ও বাস্তবতা তৈরি হওয়া কিছুটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংরক্ষণ প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রেখেছে।
×