কবিতা
মুক্তি
অসীম সাহা
প-বর্গীয় ধ্বনির ভেতরে কোনো জলাশয় নেই।
নেই কোনো বদ্ধ ডোবা কিংবা কোনো কচুরিপানার ঝাঁক।
বহমান স্বচ্ছ জলধারা অসবর্ণ বিবাহবন্ধনে
আবদ্ধ হতেই শুধু ছুটে যায় নদী থেকে সাগরসঙ্গমে।
মাধবীলতার ফুল ফোটে না তো প্রবীণ পুকুরে।
প্রত্যাখ্যান শব্দের আড়ালে তবে কোন্ বর্ণের অঙ্গীকার আছে?
নিজেও সে জানে না তা। তাই শুধু উপসর্গ, অনুসর্গ
প্রত্যয় কিংবা কারকের বহুবিধ ব্যবহার খোঁজে।
প্রতিটি ধ্বনি আর বর্ণের অন্তর্গত ব্যাখ্যা জানে বলে
উদ্ধৃতিযোগ্য পঙ্ক্তিতে সে ভরে তোলে
আদর্শলিপির সব অনুগত পাতা।
স্বরবর্ণের আদ্যাক্ষরের সাথে প-বর্গীয় ধ্বনির
বিবাহকে বৈধ করে শৈল্পিক সন্তানের পিতার সন্ধান খোঁজে।
‘বঙ্গীয় শব্দকোষে’ যে বর্ণের অভিসার নেই, তাকে নিয়ে
বরযাত্রী যেতে কোনো বৈয়াকরণের জানি সাহস হবে না।
তবুও নাছোড়বান্দা মহাপ্রাণ ধ্বনি চায় ‘সংসদ অভিধানে’
জোড়া কবুতর হয়েই সে উড়ে যাবে দূর কোনো দেশে!
অথচ দিগন্তের প্রেক্ষাপটে তার কাছে স্বপ্নগুলো বহু দূরগামী;
তাই সে তো জীবনের পরমায়ু খুঁজে পেতে ছুটে যায় ‘ঈশ্বরের’ কাছে!
‘ঈশ্বর’ শোনে না কথা। প-িতের ব্যাকরণ নিপাতনে সিদ্ধ হয়।
কেবল ধ্বনির ক্ষেত্রে ব্যাকরণ নিয়ম মানে না।
প-বর্গীয় ধ্বনি তাই হলফনামার কাছে আশ্রয় খোঁজে।
অবশেষে আয়াত আলীর কাছে নোটারি পাবলিক করে
কম্পিত, করুণ হাতে স্বাক্ষর সেরে নিয়ে অবরুদ্ধ জীবনের মুক্তি মেলে তার।
সমাপ্তিরেখার টানে ভরে ওঠে শাদা ক্যানভাস।
তারপর অশ্রুর ভেতর থেকে রাত্রির অন্ধকারে কেঁদে ওঠে
বহুদিন অযতেœ পড়ে থাকা একখানি রক্তাক্ত বালিশের ফাঁদ!
শব্দ আশা অক্ষর বীন্ধ
রবিউল হুসাইন
আমাদের অক্ষরগুলো বড্ড নিঃসঙ্গ নিষ্ফল
অপমানিত হন্যমান আর বিশৃঙ্খল অমঙ্গল
বাতাসে উড়ু উড়ু একসঙ্গে থাকতে না পেরে
ধীরে উদ্দেশ-উদ্দেশ্যহীন ঘুরে ঘুরে ফেরে
ঘূর্ণায়মান কোন এক লাটিস লাল কল্লোল
বাংলার মায়েরা তখন একসঙ্গে কলরোল
জ ঝ ঞ ট ঠ অ আ ই উ এ ঐ- এলাকায়
শব্দাস্ত্রে ছিন্নভিন্ন করলো রক্তের পতাকায়
দেখা যায় আ বাঁচি বাংলা ভাষা বর্ণ বিস্ময়
শব্দ অক্ষর বীজ থেকে ভালোবাসাপূর্ণ বিশ্বময়
বাংলাদেশ সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা
নদী ফুল পাখি মৎস্য প্রজাপতি নৌকো শাপলা
মাটি ও মানুষ থেকে উদ্ভাসিত ঐতিহ্য-প্রসূত
সংস্কৃতির লৌকিক আকাশে নিরপেক্ষ স্বপ্ন-অযুত
বাংলাদেশ কাঁদছে তবু পলাশ ফুটছে
সোহরাব পাশা
বাংলাদেশ কাঁদছে, তবু ফুটছে পলাশ
বাংলাদেশ কাঁদছে তবু ফুটছে বিহ্বল ভোর
শিশুরা হাসলে পৃথিবীর ঠোঁটে ফোটে সমূহ সুন্দর
শিশুরা কাঁদলে পুড়ে যায় আনন্দগোলাপ
বৃষ্টিহীন বিবস্ত্র আগুনে,
থৈ থৈ জোছনায় ভেজা নারকেলপাতার পঙক্তি
ভুলে যায় পুবের জানালা;
বাজে না বিরহ বাঁশি স্বপ্নের ব্যবচ্ছেদে-দূর
তেপান্তরের মাঠে তমাল ছায়ায়,
ধুলো জমে ছায়াশূন্য আয়নায়;
এখানে শিশুরা কাঁদলে জ্বলে ওঠে নির্লিপ্ত দুপুর,
গনগনে রোদে শিমুল, পলাশ ফোটে
এখানে শিশুরা কাঁদলে কাঁদে বর্ণমালা
এখানে শিশুরা কাঁদলে, বাংলাদেশ কাঁদে
এখানে হঠাৎ শব্দহীন জেগে ওঠে ঘুমন্ত রাত,
সোনারোদে নির্ভার হেঁটে যায় বাংলাদেশ
পতন
ফিরোজ মান্না
দহনে পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মন
পোড়ার মিছিলে বোবা সেøাগান
পথে রক্তের কারুকাজ-ভাঙ্গা কাঁচ
দ্রোহের আগুন জ্বলে বুকে
তবুও প্রতিবন্ধী বিবেক
আগুনের বীভৎসতায় চমকে উঠেছো
পথে নেমে এসো বন্ধু, দেখো
নগর সন্তের ঘুমহীন রাত
পনেরো গ্রাম ঘুম খেয়েও-নির্ঘুম
পাথর সখ্যতায় বুকের ওপর
নষ্ট রাজনীতির গোপন করাত
বুক চিড়ে যায় দিনরাত
মানুষের সংসারে মানুষের পতন হলে
গল্পগুলো ভাঙ্গা আয়নায় মুখ লুকায়।
জাগরণ
জাহিদ হায়দার
এখন সকাল নামছে নদীর জলে,
পাখি ঠোকরায় ঘুমন্ত মাস্তুলে
ডানায় রৌদ্রের তাঁতপাড়া;
আমি পাল তুলবো না।
ঘুমানো বৈঠার রাতে হেমবর্ণ ঢেউ,
আমি ওই গঠন ভাঙবো না।
জেগে উঠছে ব্যবহৃত সাড়া,
মুনসি দাঁড়াও, এই পারাপার
কিছুক্ষণ স্নœান করবে না।
০১.০১.২০১৩