স্টাফ রিপোর্টার ॥ লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। তারা হত্যাকা-ের আলামত সংগ্রহ করেছেন। আটদিন আগে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের উল্টো দিকের ফুটপাথ ও বইমেলার প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। সেসব স্থানে একাধিক ছবি তুলেন। টানা প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত তদন্ত শেষে তদন্তকারী এফবিআইয়ের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
শুক্রবার বেলা ১টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাথে অভিজিৎ হত্যার ঘটনাস্থলে পৌঁছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ সময় হত্যাকা-ের তদন্তের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে একুশের বইমেলায় আসেন সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক অভিজিৎ। তাঁর দুটি বই বেরিয়েছে এবারের মেলায়। এ উপলক্ষে প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধ স্বরের এক অনুষ্ঠানে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তাঁরা অংশ নেন। পরে মেলা প্রাঙ্গণে বিজ্ঞান লেখকদের এক আড্ডায় যান। সেখান থেকে ফেরার পথে টিএসসি পেরিয়ে এসে মিলন চত্বরের উল্টো দিকের ফুটপাথে ঘাতকের হামলার শিকার হন অভিজিৎ। সেখানে সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তার স্ত্রী বন্যা গুরুতর আহত হন। আহত বন্যাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সেখান থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের তত্ত্ববাবধানে বন্যা ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে। হত্যাকা-ের দুই ঘণ্টা পরেই আনসার বাংলা-৭ নামে একটি টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে হত্যার দায় স্বীকার করে টুইট করা হয়। নিহত অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ না করলেও সাংবাদিকদের বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীরা অভিজিৎকে হত্যা করেছে। অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকায় এই হত্যকা- তদন্তে সহযোগিতা করতে চায় বলে জানায় এফবিআই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখালে বুধবার রাতে ঢাকা আসেন এফবিআইয়ের চার সদস্যের একটি দল। নিহত অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছিলেন। স্বামীর মতো ব্লগার বন্যাও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
এদিকে হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচনের জন্য শুক্রবার দুপুরে এফবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে যে স্থানটিতে লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, সেই স্থানটি ও বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখে ছবি তুলেন। তারা পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর তারা যান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলার স্থানে। সেখান থেকে তারা বাংলা একাডেমির ভেতরে প্রবেশ করেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখার পর তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে পাশের পরমাণু শক্তি কমিশনের ফটকের সামনে ফুটপাথে আসেন। এরপর তারা রাস্তা পেরিয়ে আবারও সোহরাওয়ার্দী সংলগ্ন ফুটপাথে ওঠেন। প্রথমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল দেখার প্রায় এক ঘণ্টা পর আবার সেখানে ফেরেন।
ঘটনার দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অভিজিৎ যে পথ ধরে মেলায় এসে আবার ফিরে যাচ্ছিলেন সেই পথ ধরেই এফবিআইয়ের চার সদস্যরা অসংখ্য ছবি তোলেন। এফবিআইয়ের প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফিরে যাবার সময় গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের জানান, তদন্তে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য এফবিআই সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বইমেলার এলাকাও ঘুরে দেখেছেন। এর ভিত্তিতে তদন্তের কোন অগ্রগতি হলে আমরা আপনাদের জানাব।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: