ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি এখনও পেছনে

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ॥ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের তোড়জোড়

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৭ মার্চ ২০১৫

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ॥ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের তোড়জোড়

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছেÑ এমন বক্তব্য সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের মুখ থেকে বের হওয়ায় তোড়জোড় শুরু হয়েছে সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থীদের। একই সঙ্গে প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে জেলা নির্বাচন অফিসেরও। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও বড় দুই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা ও বিশ্লেষণ। তবে সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ তৎপরতা বেশ জোরালো। অপরদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বিএনপিতে অনেকটাই উল্টো চিত্র। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্র থেকে সিটি নির্বাচনের আভাস থাকায় কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়েছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ। এবার ভোটার বাড়ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৮ জন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান এ কর্মযজ্ঞ শেষ হয়ে যাওয়ায় কমিশনের জেলা অফিস অনেকটাই নির্ভার। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জানান, সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীতে ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৮ জন। যাচাই বাছাই শেষেও ভোটার সংখ্যা খুব একটা হেরফের হবে না। তিনি জানান, ভোটার তালিকা হাল নাগাদের কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যাঁরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন তাঁরাই শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। সিইসির বক্তব্যের পর চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে অন্যরকম আবহ। এতদিন যেখানে চলছিল আন্দোলন আর আন্দোলনবিরোধী তৎপরতা, সেখানে এখন শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া। বিশেষ করে সম্ভাব্য মেয়রপ্রত্যাশীরা তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। চলছে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকা-। তবে এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতাদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। কারণ এই দলের নির্বাচনী অংশগ্রহণ নিয়ে কোনই সংশয় নেই। নগরবাসীর সমর্থন লাভের চেষ্টার পাশাপাশি চলছে নেতাদের কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা। চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রধান একটি সঙ্কট বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা। প্রতিটি নির্বাচনের পূর্বে মেয়রপ্রার্থীরা জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস প্রদান করলেও বছরের প্রথম বর্ষণে তলিয়ে যায় বন্দরনগরী। নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে থাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিচু এলাকাগুলো বেশ ঘন ঘন পরিদর্শন করতে শুরু করেছেন। নেতাদের দৃষ্টি এখন নগরীর ভরাট হয়ে যাওয়া খালগুলোর দিকে। ভরাট ও বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারের প্রতিশ্রুতিও তারা দিতে শুরু করেছেন। নিয়মিত বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাতায়াত মূলত নির্বাচনী আমেজকে জাগিয়ে তুলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মেয়র পদপ্রত্যাশী প্রায় অর্ধডজন নেতা সক্রিয়। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন এবং বিএনপির দুই নেতার নাম বেশি আলোচিত। আওয়ামী লীগ থেকে যে তিনজনের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বেশি শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেনÑ নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, নগর সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং দলের কোষাধ্যক্ষ ও চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তাঁদের তৎপরতা বেশ জোরালো। আরেক আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসির নাম খুব একটা আলোচিত না হলেও তিনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে চাউর রয়েছে। বিশেষ করে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তাঁর আসনটি জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দেয়ায় কেন্দ্র থেকে পুরষ্কৃত হতে পারেন বলে আশাবাদী তাঁর অনুসারীরা। বিএনপি থেকে মেয়রপদে দলীয় সমর্থনের দাবিদার মূলত দুইজন। তাঁরা হলেনÑ বর্তমান মেয়র ও দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম মনজুর আলম ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন। এর মধ্যে ডাঃ শাহাদাতের তৎপরতা প্রায় দুই বছর আগে থেকে লক্ষণীয় হলেও বর্তমানে তিনি গা ঢাকা দিয়ে আছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে কোথাও তাঁর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একটি ফোনালাপে ডাঃ শাহাদাতকে নাশকতার নির্দেশনা দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে তিনি একেবারেই লাপাত্তা হয়ে যান। সেক্ষেত্রে দলটির একমাত্র ভরসা বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলম। তবে তিনিও এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২৭ জুলাই। সে হিসেবে ওই দিনই বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। নিয়মানুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রথম ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। আগামী জুন মাসে রোজা থাকায় কমিশন এর আগেই সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা-ভাবনা করছে। সে হিসেবে নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে।
×