ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

৭ মার্চ ॥ জিয়া বিতর্কিত করার চক্রান্ত শুরু করেন

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৭ মার্চ ২০১৫

৭ মার্চ ॥  জিয়া বিতর্কিত করার চক্রান্ত শুরু করেন

দৈনিক জনকণ্ঠের চতুরঙ্গ পাতার জন্য শনিবারের নিয়মিত কলাম শুরু করেছিলাম বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি’ মামলায় তাঁর আদালতে হাজিরা দেয়ার কথাবার্তা নিয়ে। গত ৪ মার্চ তাঁর হাজিরা দেয়ার কথা ছিল। হঠাৎ মনে পড়ল এখন ঘটনাবহুল অগ্নিঝরা মার্চ মাস। আমার কলামটিও ছাপা হওয়ার কথা শনিবার ৭ মার্চ, অর্থাৎ আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে জায়গাটায় গগনচুম্বী স্বাধীনতা স্তম্ভটি চারদিকে আলো ছড়াচ্ছে, সেই জায়গাটায়ই দাঁড়িয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী এবং বাঙালীর জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, যা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘গেটিসবার্গ এডরেসের’ মতোই বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম রাজনৈতিক ভাষণ হিসেবে গৃহীত ও সমাদৃত এবং শ্রুত। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে আজ অবধি (৭ মার্চ ২০১৫) বিগত ৪৫ বছরে এটি যতবার বাজানো হয়েছে, যত মানুষ যত জায়গায় শুনেছে, যত মানুষ পড়েছে, তার তুলনা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে নেই। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এক এবং অদ্বিতীয়। স্বাধীনতার জন্য বাঙালীর হাজার বছরের বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম-আন্দোলনকে একই মোহনায় প্রবাহিত করে কিভাবে সশস্ত্র গেরিলাযুদ্ধের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক মিলিটারি জান্তাকে পরাভূত করে স্বাধীন সার্বভৌম ভূখ-, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন জাতীয় সঙ্গীতকে নিরঙ্কুশ করতে হবে ভাষণে তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামরিক দিকনির্দেশনা দিয়ে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হানাদার সামরিক জান্তা কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন- ‘ঞযরং সধু নব সু ষধংঃ সবংংধমব, ভৎড়স ঃড়ফধু ইধহমষধফবংয রং রহফবঢ়বহফবহঃ, ও পধষষ ঁঢ়ড়হ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ইধহমষধফবংয যিবৎবাবৎ ুড়ঁ সরমযঃ নব ধহফ রিঃয যিধঃবাবৎ ুড়ঁ যধাব, ঃড় ৎরংরংঃ ঃযব ধৎসু ড়ভ ড়পপঁঢ়ধঃরড়হ ঃড় ঃযব ষধংঃ. ণড়ঁ ভরমযঃ সঁংঃ মড় ড়হ ঁহঃরষ ঃযব ষধংঃ ংড়ষফরবৎ ড়ভ ঃযব চধশরংঃধহ ড়পপঁঢ়ধঃরড়হ ধৎসু রং বীঢ়বষষবফ ভৎড়স ঃযব ংড়রষ ড়ভ ইধহমষধফবংয ধহফ ভরহধষ ারপঃড়ৎু রং ধপযরবাবফ.’ ( জাতির উদ্দেশে হয়ত এটাই আমার শেষ বাণী। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম। বাংলার প্রিয় জনগণের প্রতি আমার আহ্বান আপনারা যে যেখানে যেভাবে আছেন, যার কাছে যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে হানাদার মিলিটারি বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারি বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকেও বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার মাধ্যমেই কেবল যুদ্ধ শেষ হবে)। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণাটির পূর্বে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা ২৫ মার্চ কালরাতে ট্যাঙ্ক-কামান নিয়ে হায়েনার মতো নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর পর পরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের (বিজিবি) ওয়ারলেস, টেলিফোন, টেলেক্স, টেলিগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে নিরস্ত্র বাঙালী রাতারাতি সশস্ত্ররূপে সজ্জিত হয়ে যার যা আছে তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননকে মুজিবনগর ঘোষণা করে ৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ পার্লামেন্ট বসিয়ে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ (১০ এপ্রিল ১৯৭১) এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে (গ্রেফতার হওয়ায়) তাঁরই ঘনিষ্ঠ সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান প্রমুখের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলার বিপ্লবী সরকার গঠিত হয় (১৭ এপ্রিল ১৯৭১)। এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হন স্বাধীনতার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। এই সরকারেরই নেতৃত্বে, পরিচালনায় ও কমান্ডে সাধারণ মানুষ, নারী, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, আনসার, বিএলএফ, ইউওটিসি ক্যাডেট, এফএফ, স্বাধীন বাংলা সংগ্রামী ৯ মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদ ও ৬ লাখ মা-বোনের জীবন ও ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হয় এবং বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত ‘পাকিস্তানী হানাদার শেষ মিলিটারিটি’কে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই যুদ্ধে ভারত-রাশিয়াসহ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করে। বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহিয়সী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অবদান বাঙালী জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। অগ্নিঝরা মার্চ এক. এই মার্চ অগ্নিঝরা অবিধায় ভূষিত হওয়ার কারণ হলো পুরো মার্চ মাসই ছিল অসহযোগ আন্দোলনসহ ঘটনাবহুল। এ সময় বঙ্গবন্ধু যা বলতেন বা বঙ্গবন্ধু ভবন ধানম-ি ৩২ নম্বর থেকে যা নির্দেশ দেয়া হতো, ক্যান্টনমেন্টবাসী আর্মি ছাড়া আর সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। এমন নজির পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগের চেয়ে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ ছিল অনেক বেশি সফল এবং কার্যকর। অর্থাৎ মার্চ মাসব্যাপী যা যা ঘটেছে সবই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও নামে। দুই. স্বাধীনতা ঘোষণার একমাত্র নিয়মতান্ত্রিক বৈধ এখতিয়ার ছিল বঙ্গবন্ধুরই, কেননা ৭০-এর নির্বাচনে বাংলার জনগণ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন উপহার দেয়, ১৬৯টি আসন পায় আওয়ামী লীগ। তিন. পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকা হয়। কিন্তু ১ মার্চ পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তা প্রধান ইয়াহিয়া পার্লামেন্টের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। ইয়াহিয়ার হুঙ্কার ‘গঁলরন রং ধ ঃৎধরঃড়ৎ (?) ঞযরং ঃরসব যব রিষষ হড়ঃ মড় ঁহঢ়ঁহরংযবফ.’ (মুজিব বিশ্বাসঘাতক (?) এবার শাস্তি ভোগ করা ছাড়া বাঁচতে পারবে না)। সঙ্গে সঙ্গে গোটা বাংলাদেশ এবং প্রবাসী বাঙালীরা ফুঁসে ওঠে। চার. ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের গাড়ি বারান্দার উপরে ওঠে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব ‘বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত’ সবুজ-লাল জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পাঁচ. ৩ মার্চ তৎকালীন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ পল্টনের বিশাল ছাত্র-গণসমাবেশে স্বাধীন বাংলার ইশতেহার পাঠ করেন। ইশতেহারের অন্যতম অঙ্গীকার হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা ঘোষণা। ছয়. ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ১০ লাখ মানুষ ২০ লাখ হাত উত্তোলনের মধ্যে এবং জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু সেøাগানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সাত. ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। আট. ২৩ মার্চ ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলে দিলে তিনি তা উত্তোলন করেন। সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে স্বাধীনতার পতাকা ওড়ে। দিনটি ছিল পাকিস্তানের ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ এবং ওই দিন ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। নয়. ২৫ মার্চ কালরাতে পাকি-বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গণহত্যা শুরু করে। দশ. ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য এক. ভাষণটি ছিল ১০৯৫ শব্দের এবং অলিখিত বা এক্সটেম্পোর। ভাষণে প্রথমে তিনি পাকিস্তানের ইতিহাস ও সমসাময়িক পরিস্থিতি, পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তার নির্যাতন তুলে ধরেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ দুই. প্রশাসনিক- ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা আছে তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।’ তিন. গেরিলাযুদ্ধের নির্দেশনা : ক. গরিব মানুষের কর্মক্ষেত্র ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। ২৮ তারিখ কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন, খ. প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, গ. তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে, ঘ. রাস্তাঘাট যা যা আছে, আমি যদি হুকুম দেবার না পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে, ঙ. আমরা ভাতে মারব, চ. আমরা পানিতে মারব, ছ. সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। চার. বঙ্গবন্ধুকে যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীর অপবাদ দিতে না পারে, তাই উপরোক্ত নির্দেশনাবলীর সঙ্গে সঙ্গে চারটি দাবি দেন ‘১. সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে, ২. সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ৩. যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে এবং ৪. জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’ ৭ মার্চকে ভুলিয়ে দেয়ার চক্রান্ত এক. মিলিটারি জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশুপার্ক বানান, যাতে এটি আর ভাঙ্গা না যায়। কারণ বাচ্চাদের ব্যাপার। স্পর্শকাতর। দুই. শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও জাদুঘর নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। সেদিন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে অংশ নেন ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা ও সোলেমান ডেমিরেল (তুরস্ক)। ৬০% কাজ হওয়ার পর খালেদা জিয়া ২০০১-এ ক্ষমতায় এসে কাজ বন্ধ করে দেন। ২০০৮-এ নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় এসে বাকি কাজ সম্পন্ন করেন। আজ স্বাধীনতা স্তম্ভ তথা গ্যাস টাওয়ার রাত্রিবেলা দিগন্তব্যাপী আলো ছড়িয়ে চলছে। দুর্ভাগ্য হলো- এতদিন হয়ে গেল, এত সংবাদপত্র এত টেলিভিশন, জনকণ্ঠ ছাড়া কেউ একটা ফিচার রিপোর্টও প্রকাশ করেনি। অথচ এই ৭ মার্চের ভাষণস্থলেই পাকিস্তানী আর্মি নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করেছিল। ভারতের মহান নেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এলে (মার্চ ১৯৭২) এখানেই মঞ্চ করা হয়। তিনি সেই মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন এবং বক্তৃতায় ভারতীয় মিত্রবাহিনীর শেষ সৈন্যটিও স্বাধীন বাংলার মাটি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন। এই একই স্থানে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ সর্বজন শ্রদ্ধেয়া কবি বেগম সুফিয়া কামাল, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণআদালত বসিয়ে গোলাম আযমের প্রতীকী ফাঁসির হুকুম দেয়া হয়। তিন. সর্বশেষ চক্রান্তে লিপ্ত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীরউত্তম, শেখ হাসিনার বদান্যতায় এমপি-মন্ত্রী হয়ে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে শেষে একখানা কেতাব রচনা করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু নাকি ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছেন ‘জয় পাকিস্তান’ বলে- মতলববাজ। এই খন্দকার তখন ছিলেন ক্যান্টনমেন্টে। রেসকোর্সে ছিলেন না। আমরা ছাত্রলীগকর্মীরা মঞ্চের কাছে ছিলাম। মাঠে ছিলাম ১০ লাখ মানুষ। সবাই শুনলাম বক্তৃতা শেষ করেছেন ‘জয় বাংলা’ বলেই। কোন পর্যায়েই ‘জয় পাকিস্তান’ বলেননি। তারপরও তিনি কোত্থেকে শুনলেন জানি না। তবে তিনি জিয়ার পথ ধরেছেন সত্য, তবে জিয়ার মতো কৌশলী হতে পারেননি। বোকার মতো বিকৃত করে ধরা খেলেন। লেখাটা শুরু করেছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়া না দেয়া নিয়ে। শোনা গেল তিনি শর্ত দিয়েছেনÑ ১. তাকে জামিন দিতে হবে, ২. আবার গুলশানের সেই কার্যালয়ে বিনা বাধায় যেতে দিতে হবে, যা ইতোমধ্যে কাশিবাজার কুঠি নাম নিয়েছে। এটি ছিল ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা।’ বিদেশ থেকে এ খাতে টাকা এনে আত্মসাত এবং এই দায়ে মামলাটি দায়ের করেছে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যদ্দুর শুনেছি মামলার ৬৬টি তারিখের মধ্যে তিনি নাকি ৭ দিন কোর্টে হাজিরা দিয়েছেন এবং একবারতো ২-৩ হাজার লাঠিধারী কর্র্মী (অধিকাংশ সন্ত্রাসী) নিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। সর্বশেষ গতকালও (৪ মার্চ) তিনি হাজিরা দেননি। বরং গ্রামে গ্রামে সংগ্রাম কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাপারটা হাস্যকর নয় কি? ঢাকা, ৫ মার্চ ২০১৫ লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
×