ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৬ মার্চ ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বসন্তের কাল এখন। ফাল্গুনের প্রথম দিন থেকে শুরু। আজ শুক্রবার ২২তম দিন। যত দিন যাচ্ছে ততই প্রকাশিত হচ্ছে ঋতুরাজ। আপন চেহারায় সামনে আসছে। সারা দেশের মতো বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকাও বসন্তে পেয়েছে নতুন চেহারা। না, হুটহাট চোখে পড়বে না। একটু খেয়াল করতে হবে। তাকাতে হবে প্রকৃতির পানে। আর তখনই স্পষ্ট হবে পরিবর্তন। এই ফাগুনে বিবর্ণ রূপ ঝেড়ে ফেলে জেগে উঠেছে প্রকৃতি। নতুন প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর পার্ক ও উদ্যানগুলোতে এখন বসন্তের ছোঁয়া। গত কয়েকদিন রমনা পার্কে গিয়ে দেখা যায়, নবীন পাতায় আলোর নাচন। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কিছুদিন আগেও যে গাছটিকে রুক্ষ রুগ্ন দেখা গেছে তাতে এখন ভরপুর প্রাণ। একটি দুটি নয়, অধিকাংশ বৃক্ষ শাখা নতুন পত্রপল্লবে ভরে উঠেছে। পাতা ঝরার দিন শেষে সবুজের সমারোহ এখন। অবশ্য শুধু পাতার সুন্দর নয়, বসন্ত মানে ফুলের বেলা। ইতোমধ্যে রঙিন ফুলে ভরে উঠেছে বাগান। রাস্তার ধারে শুকিয়ে কাঠ হওয়া গাছে ফুটেছে আশ্চর্য সুন্দর শিমুল পলাশ। বোটানিক্যাল গার্ডেনে সারা বছরই ফুলের চাষ হয়। তবে এখন যে ফুল তা যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। সম্প্রতি গার্ডেন ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন আকার ও আকৃতির টবে প্রকৃতির হাসি হয়ে ফুটেছে বাহারী ফুল। এখানে গোলাপের সবচেয়ে বড় বাগান। শত শত জাতের গোলাপ দেখে মনে পড়ে যায় কবিগুরুর সেই উচ্চারণÑ বসন্ত, দাও আনি,/ ফুল জাগাবার বাণী- তোমার আশায় পাতায় পাতায় চলিতেছে কানাকানি...। এখানেই শেষ নয়, রমনা পার্ক এমনকি বাংলা একাডেমি চত্বরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে কোকিলের কুহুতান। কবিগুরুর বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে বললেÑ আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে,/ এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়...। অথবাÑ বসন্ত এসেছে বনে, ফুল ওঠে ফুটি,/ দিনরাত্রি গাহে পিক, নাহি তার ছুটি...। অবশ্য, বসন্তে বনে পরিবর্তন আসলেও রাজধানীবাসীর মনে তেমন কোন পুলক নেই। প্রতিদিনের জীবনে জায়গা করে নিয়েছে শঙ্কা। রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানোর ঘৃণ্য খেলা শেষ হয়নি এখনও। এরই মাঝে ভয়ানক চেহারা নিয়ে সামনে এসেছে মৌলবাদ। উগ্রবাদীরা আক্রমণ করছে চিন্তার স্বাধীনতায়। একুশের মাসে ধর্মব্যবসায়ীরা মুক্তমনা লেখক ব্লগার অভিজিৎ রায়কে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে খুন করেছে। প্রগতিশীল চর্চার তীর্থস্থান টিএসসি এলাকা হয়েছে রক্তাক্ত। রাজধানী শহরে মৌলবাদী গোষ্ঠীর এমন আক্রমণের ঘটনায় যারপরনাই বেদনাহত মানুষ। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে ফুঁসে উঠেছে প্রজন্ম। এখানে প্রতিদিনই থাকছে প্রতিবাদী কর্মসূচী। প্রগতিশীল চিন্তার ছাত্রসংগঠন, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন চিন্তার স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এদিকে, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শেষে এসেছে উত্তাল মার্চ। আগামীকাল শনিবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালীর মুক্তির কথা বলেছিলেন। দিনটি স্মরণে এবারও থাকছে সভা সমাবেশসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন। রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মঞ্চ থেকে অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে মার্চের মতোই জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হবে।
×