ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবৃৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব জ্বালানি

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৬ মার্চ ২০১৫

প্রবৃৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব জ্বালানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব গ্রীন এনার্জিতে বিনোয়োগ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেছেন, বর্তমান প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে দেশে জ্বালানির ব্যবহার ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। তাই প্রচলিত জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়ার বদলে এ ক্ষেত্রটিকে কীভাবে লাভজনক করা যায় তা ভাবা প্রয়োজন। কিন্তু নীতিনির্ধারকদের অনেকেই জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবশেবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি জানেন না। অথচ ইউরোপের একাধিক দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানির ব্যবহার সাফল্যজনকভাবে কমিয়ে এনেছে। ওই সব দেশের অভিজ্ঞতা চাইলে বাংলাদেশও কাজে লাগাতে পারে। এজন্য পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘দ্য থ্রিÑই প্রোগ্রাম : এনার্জি, ইফিশিয়েন্সি এ্যান্ড এ্যানগেজমেন্ট’ শীর্ষক কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ঘানে ফল ইকজার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম, এবিবি কান্ট্রি ম্যানেজার রাজশ্রী ব্যানার্জী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এনসিসিআই প্রেসিডেন্ট শামীম উল হক এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। কর্মসূচীর বিস্তারিত দিক তুলে ধরেন ডানিডার সিনিয়র এ্যাডভাইজর স্টেফান স্কেয়ার এনেভল্ডসেন। বাংলাদেশে জ্বালানির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে নর্ডিক চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআই) এই বিশেষ কর্মসূচী শুরু করেছে। এর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকর জ্বালানি ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হবে। এর ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা মিটিয়ে জ্বালানি ব্যয় ও এর ব্যবহারের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে বলে উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন। ডেনমার্ক দূতাবাসের অধীন ডেনিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ডেনিডা) কর্মসূচীটির অর্থায়ন করছে। আর এটি বাস্তবায়ন করবে এনসিসিআই। কর্মসূচীর উদ্বোধন করে ড. আতিউর রহমান বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্জনযোগ্য অর্থনৈতিক ওসমৃদ্ধিকে ব্যাপকভাবে পরিবেশবান্ধব করা অপরিহার্য। সবুজ সমৃদ্ধি অর্জনে সবুজ অর্থায়ন (গ্রীন ব্যাংকিং) একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে ইতিমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকের তালিকাভুক্ত ৪৭টি গ্রীন প্রোডাক্টের মধ্যে ২৩টি গ্রীন এনার্জি। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রদত্ত মোট ঋণের কমপক্ষে ৫ শতাংশ অর্থ সহজ শর্তে সবুজ অর্থায়নে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও সবুজ তহবিল (গ্রীন ফান্ড) নামে একটি শাখা খুলেছে। এ শাখা হতে পরিবেশসম্মত উৎপাদন ও জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নারায়ণগঞ্জের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ২০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। গবর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব অর্থায়নে সারাদেশে ২০ লাখ ৩০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম সরবরাহ করেছে। আগামী ৩ বছরে এ সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। তবে এক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন রকম জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারতম্য, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও আদর্শ চুক্তির বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে তিনি মনে করেন। ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ঘানে ফল ইকজার বলেন, ডেনমার্কের পরিবেশবান্ধব অগ্রগতির অন্যতম চাবিকাঠি কার্যকর জ্বালানি। ১৯৯০ সাল থেকে ডেনমার্কের জিডিপি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে মোট জ্বালানির ব্যবহার কমেছে ৬ শতাংশ। ২০১৩ সালে ডেনমার্কে ব্যবহৃত মোট বিদ্যুতের ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ জ্বালানির যোগান এসেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্ল্যান্ট থেকে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ ধরনের কর্মসূচীতে ডেনমার্ক পাশে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড. ম. তামিম আবাসন খাতে ব্যবহৃত জ্বালানির কার্যকর ব্যবহার ও এক্ষেত্রে বিকল্প প্রযুক্তির প্রবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।=
×