ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে দুই ভণ্ড সাধুর অভিনব প্রতারণা, নরবলির প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৫ মার্চ ২০১৫

বরিশালে দুই ভণ্ড সাধুর অভিনব প্রতারণা, নরবলির প্রস্তুতি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে ॥ অলৌকিক গুপ্তধনের আশায় অন্যের সম্পত্তি দখল করে কালী মন্দির নির্মাণের পর নরবলি (মানুষ জবাই) দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে কথিত দুই ভণ্ড সাধক ও তাদের সহযোগীরা। ইতোমধ্যেই কালী ও মহাদেবের স্বপ্নাদেশের নামে গ্রামের সহজ সরল লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে স্বপ্নে প্রাপ্ত স্বর্ণালঙ্কার প্রাপ্তির অভিনব প্রতারণার অভিযোগটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের। খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও ওই ভণ্ড সাধক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে, কথিত ধর্মের নামে ভণ্ড সাধকরা মধ্যযুগীয় কুসংস্কার প্রথা চালুর চেষ্টা করছে। যে কারণে লোকের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই অবিলম্বে ওই ভ- সাধকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন গ্রামের ধর্মপ্রাণ হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্যান্য ধর্মের সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার রাজিহার গ্রামের মৃত নিত্যানন্দ বিশ্বাসের পুত্র বিমল বিশ্বাসের বাড়িতে তার বোনের ছেলে (ভাগ্নে) রংপুর এলাকার সন্তোষ দে’র পুত্র সমীর দে (২৫) ও তার বন্ধু নড়াইলের জনৈক বিমল (২৬) গত তিন মাস পূর্বে আশ্রয় নেয়। শুরু থেকেই তাদের চলাফেরা ও আচরণ স্থানীয়দের কাছে ছিল রহস্যজনক। অধিকাংশ সময় তারা ওই বাড়ির ভেতরে থেকে মাদক সেবন করে নিজেদের একজন শিব (মহাদেব) সাধক ও অন্যজন মা কালীর সাধক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে। একপর্যায়ে ওই ভ- সাধকদের সুরে সুর মিলিয়ে ওই বাড়ির মালিক তাদের আশ্রয়দাতা বিমল বিশ্বাস তার ভাই কমল ও ধীরেন বিশ্বাসসহ পরিবারের সদস্যরা ঘোষণা করেন বাড়ির পার্শ্ববর্তী স্থানে পুরনো কালী মন্দিরে (অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ বছর পূজা হয়নি) পুনরায় মা কালী বিশ্বের অন্যতম মন্দির নিয়ে মাটি ফুঁড়ে স্বর্ণের মূর্তিসহ অচিরেই আবির্ভূত হবেন। তার আবির্ভাবের সময় বাড়ির আশপাশ এলাকায় দেখতে পাওয়া যাবে বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার। পাশাপাশি মা কালীর সন্তুষ্টির জন্য যত তাড়াতাড়ি নরবলি (মানুষ বলি/জবাই) দেয়া যাবে তত তাড়াতাড়ি মা কালী আবির্ভূত হয়ে ওই পরিবারসহ এলাকাবাসীর মঙ্গল করবেন। ঘটনাটি এলাকায় চাউর হলে অতি সম্প্রতি তারা এলাকার ধর্মপ্রাণ লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ওই পুরনো মন্দিরের ভিটিতে দিনের মধ্যে ঘর তুলে কালী পূজা শুরু করেন। কথিত ভ- সাধকরাসহ ওই পরিবারের পুরুষ ও মহিলারা গুপ্তধন প্রাপ্তির আশায় অব্যাহত ব্রত পালন শুরু করেন। মাঝে মধ্যে তারা কবুতর কেটে তার রক্তও পান করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় শিব চতুর্দশী। কুসংস্কারে আছন্ন হয়ে ওইদিন বিশ্বাস পরিবারের নারী ও পুরুষরা উপোষ থেকে শিব লিঙ্গের মাথায় জল না ঢেলে কথিত ওই ভ- শিবের মাথায় জল ঢেলে ব্রত পালন করেন। স্থানীয় মানিক দত্ত জানান, ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত তার ৪১ শতক সম্পত্তি মেয়ে বিয়ের জন্য বিক্রি করতে চাইলে ওই সম্পত্তি দখল করতেই কথিত সাধকদের সহায়তায় বিমল বিশ্বাস গংরা মন্দির নির্মাণসহ বাঁশ-কাঠ দিয়ে আশপাশের এলাকা বেড়া দিয়ে জায়গা দখল করে নেয়। তার ধারণা, ওই ভ-রা তাদের পূর্বের আশ্রয়স্থলে বড় ধরনের কোন অপকর্ম করে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন এই এলাকায় আশ্রয় নিয়ে ধর্মের নামে প্রতারণা করে বেড়াচ্ছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকেই ওই এলাকাসহ টক অব দ্য উপজেলায় পরিণত হয় মাটির নিচ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ওঠা শুরু করেছে। মুহূর্তের মধ্যে এ ঘটনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক হাজার হাজার নারী-পুরুষ বিমল বিশ্বাসের বাড়িতে ভিড় করেন। খবর পেয়ে বিকেলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ওই বাড়িতে হাজির হন। ওসি জানান, দখল করা জায়গায় নির্মিত মন্দিরের ফাটা মাটির ফাঁকে তিনি কয়েকটি হাতের চুড়ি (অলঙ্কার) দেখতে পেয়েছেন। ওই সময় কথিত সাধুর সঙ্গে তিনি (ওসি) কথা বলতে চাইলে তাকে বাড়ির লোকজন কথা বলতে দেয়নি। তারা তাকে জানায় দুই ঘণ্টা ধ্যানমগ্ন হলেই দেখা করা সম্ভব। পরে ওই সাধকসহ তাদের থানায় দেখা করার কথা বলে ওসি স্থান ত্যাগ করেন। এদিকে স্থানীয় স্বর্ণাকারদের মাধ্যমে অলঙ্কারগুলো পরীক্ষা করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছেন সেগুলো আসল নয়, সিটি গোল্ড। ওসি আরও জানান, ধর্মীয় অনুভূতির কারণে ভ- সাধুদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছেন। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি ভণ্ড সাধুদের আশ্রয়দাতা বিমল বিশ্বাসসহ ওই পরিবারের লোকজন।
×