ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মান্না ও খোকার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৫ মার্চ ২০১৫

মান্না ও খোকার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

শংকর কুমার দে ॥ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়ার পর গুলশান থানায় দায়ের করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। গ্রেফতারকৃত মান্নার যত ক্ষোভ ও টার্গেট ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরে আসবেন না খোকা। ফোনালাপ কেলেঙ্কারির আগে ও পরে সরকারের পতন ঘটাতে হয়েছে অনেক ষড়যন্ত্র। রিমান্ডে আনার পর বুধবার সপ্তম দিনের মতো মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত করছে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও। মান্না-খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত ও অনুসন্ধান এবং জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারী ও গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মান্না-খোকার ফোনালাপে উল্লেখ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কথাটি। প্রধানমন্ত্রীর তাঁর প্রতি এলার্জি আছেÑ নিজেই বলেছেন মান্না। ফোনালাপের বাইরেও আওয়ামী লীগ বিরোধী সুশীল সমাজ, নাগরিক সংগঠন, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন মান্না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রতি তাঁর ক্ষোভের কারণ কী, তাও মান্নার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির খোকার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বেআইনী পন্থায় সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলা অনুমোদনের কপি গুলশান থানাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মান্না-খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনায় গুলশান থানার পুলিশ কর্মকর্তা শেখ সোহেল রানা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটির তদন্ত ডিবিতে হস্তান্তরের পর মান্নাকে ১০ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মান্নার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে গুলশান থানা পুলিশ। গুলশান থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে মান্নার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মান্না ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। ফোনালাপটি ফাঁস হওয়ার পর তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ফোনালাপে সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শান্তি ও সংলাপের জন্য একটি মিছিল বের করার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী থাকলেও অনুপস্থিত থাকেন মান্না। আত্মগোপনে চলে যান তিনি। আত্মগোপন অবস্থা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারপর তাঁকে হস্তান্তর করা হয় ডিবিতে। ডিবিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি পূর্বনির্ধারিত জাতীয় প্রেসক্লাবের কর্মসূচীতে গেলেন না কেন? উত্তরে মান্না বলেছেন, তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে, বন্ধুরা বলেছেন আত্মগোপনে চলে যাও। তাঁর সঙ্গে এ কর্মসূচীতে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের থাকার কথা ছিল। ড. কামাল হোসেন আপনার সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচীতে গেলেন না কেন? তিনি তো ফোনালাপের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁর পূর্বনির্ধারিত শান্তির ও সংলাপ কর্মসূচীতে না আসার কারণ কী? এ ধরনের প্রশ্নের পর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে নিরুত্তর হয়ে যান মান্না। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নিউইয়র্কে অবস্থানরত সাদেক হোসেন খোকার বিষয়ে খোঁজখবর করেছেন গোয়েন্দারা। তাঁর ঘনিষ্ঠ নিকটজনরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে অবস্থানরত খোকা আর দেশে ফিরে আসবেন না। তবে দেশের দলীয় নেতৃবৃন্দসহ ঘনিষ্ঠ ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন খোকা। মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের বিভিন্ন কর্মসূচীতে ব্যাপক লোকসমাগম উপস্থিত করানোর দায়িত্বে ছিলেন খোকাসহ বিএনপি নেতারা। বিএনপির কোন কোন নেতা ও সুশীল সমাজের সঙ্গে খোকা ও মান্নার ফোনালাপ কেলেঙ্কারির বিষয়বস্তুর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। ফোনালাপের বাইরে আগেকার ওয়ান ইলেভেনের যারা কুশীলব ছিলেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন তিনি। কিভাবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে উৎখাত করা যায়, সে বিষয়ে ষড়যন্ত্র থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মান্নাকে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, মাহমুদুর রহমান মান্না একজন উচ্চাভিলাষী ক্ষমতালিপ্সু প্রকৃতির মানুষ বলেই মনে হচ্ছে। আওয়ামী লীগে এসে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়ে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য নানা ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময়ে তার সেনাসমর্থিত সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করে আওয়ামী লীগের মূলশক্তির কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়ে বেশ কিছু রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের উপরের স্তরের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। তবে তাঁর ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সরকার বিরাট একটি বিপদ থেকে রক্ষা পেল বলে মনে হচ্ছে।
×