ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত পদ্ধতিতে অধিক ফলন সম্ভব

গমের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৫ মার্চ ২০১৫

গমের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে

সমুদ্র হক ॥ দেশে দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গমের আবাদ বেড়েছে। গেল ক’বছরে সকল ঋতুতেই ধান ফলানোর নানা জাতের বীজ উদ্ভাবিত হওয়ায় গমের আবাদ নেমেই গিয়েছিল। মাঠ পর্যায়ের কৃষকের আগ্রহে এবং গম রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় আবাদ পূর্বাবস্থার চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে কৃষি প্রধান উত্তরাঞ্চলে গমের আবাদ অনেকটাই বেড়েছে। এই সময়টায় যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দির চর এলাকাতে কিষান কিষানীর গম কেটে নেয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। উল্লেখ্য, বছর কয়েক আগেও চরাঞ্চলে ধানের পাশাপাশি বাদাম, কাউন ও মরিচের আবাদ বেশি হতো। বর্তমানে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গম। কামালেরপাড়া এলাকার প্রবীণ কৃষক আসগর আলী বললেন, একটা সময় এই এলাকায় ধানের পরে গমের আবাদ এবং তারপর বাদাম, কাউন ও অন্যান্য আবাদ হচ্ছিল। এর পাশাপাশি গম প্রজাতির যব বা প্যারার আবাদও ছিল। সোনাতলা সারিয়াকান্দি গাবতলী শিবগঞ্জ অঞ্চলে প্যারার ছাতু ছিল লোভনীয় ও আকর্ষণীয় খাবার। এই ছাতুর আবাদও প্রায় উঠেই গিয়েছিল। গম আবাদের সঙ্গে প্যারার আবাদ ফিরে এসেছে। কৃষি বিভাগের এক সূত্র জানায় বছর পাঁচেক আগে উত্তরাঞ্চলে গম আবাদের টার্গেট করা হতো প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমিতে। রোপণ শেষে দেখা যেত টার্গেটের বড় একটি অংশের জমি পড়ে আছে। বর্তমানে এই চিত্র পাল্টে গিয়েছে। পূর্বের টার্গেটের চেয়ে বেশি টার্গেট তো হয়েছেই কৃষক এর চেয়েও বেশি জমিতে গমের আবাদ করছে। বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে গম আবাদ হচ্ছে। আবার যে এলাকাগুলোতে (বিশেষ করে চরাঞ্চল) গম আবাদের কথা ভাবনাতেও ছিল না সেখানেও গমের আবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা বললেন দেশে গমের সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়। বর্তমানে পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলেও গমের আবাদ শুরু হয়েছে। খাদ্য চাহিদা পূরণ, অধিক মানুষের খাবার জোগানোর খাদ্য নিরাপত্তায় (বা নিশ্চয়তা) এবং নানা ধরনের রোগ ব্যাধি বেড়ে যাওয়ায় (বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ) আটার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনসহ খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক মিশ্রণ ও ভেজালের কারণে জটিল রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এইসব রোগের প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে বাংলাদেশে গত ক’বছরে ডায়াবেটিস, হার্ট ও ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। চিকিৎসকগণ ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের এক বেলা পরিমিত মাত্রায় ভাত ও দুই বেলা নির্দিষ্ট সংখ্যার রুটি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই অবস্থার উত্তরণে মাঠ পর্যায়ের কৃষক নিজেদের ভাবনাতেই গমের আবাদ বাড়িয়েছে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এদিকে দেশে সবচেয়ে বড় গম গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে নশিপুর এলাকায়। ১৯৮৫ সালে ৫০ একর জায়গার ওপর স্থাপিত এই গবেষণা কেন্দ্র মাঝপথে ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছিল। গত ক’বছর ধরে এই গবেষণা কেন্দ্রটি আগের চেয়ে অনেক সচল হয়ে প্রতিবছর নতুন জাতের গম উদ্ভাবন করছে। বর্তমানে আবাদ পর্যায়ে মাঠে রয়েছে বারি ২৬, ২৭ ও ২৮ জাতের গম। উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি অঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহ, পূর্বাঞ্চলের জামালপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা অঞ্চলে উন্নতজাতের গম আবাদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের একজন প্রবীণ কৃষক গম আবাদের বিষয়ে বললেন, বর্তমানে গম বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। অনেক সময় অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কম এমন বীজ বিতরণ করা হয়। এই কৃষকের অভিমত, উন্নত উফশী জাতের গম বীজ সরবরাহ ও উন্নত পদ্ধতিতে আবাদ করলে প্রতি একর জমিতে ৭০ থেকে একশ’ মণ পর্যন্ত গম উৎপাদন হতে পারে। আর স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি একরে অন্তত ৫০ মণ গম মিলবে।
×